১-প্রত্যেক অযুর পর কালেমা শাহাদাত পাঠ করুন
উকবা ইবনু আমির (রাযি.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের উট চরানোর দায়িত্ব নিজেদের উপরে ছিল। আমার পালা এলে আমি উট চরিয়ে বিকেলে ফিরিয়ে নিয়ে এলাম। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পেলাম, তিনি দাঁড়িয়ে লোকদের সঙ্গে কথা বলছেন। তখন আমি তাঁর এ কথা শুনতে পেলাম,
مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَوَضَّأُ فَيُحْسِنُ وُضُوءَهُ ثُمَّ يَقُومُ فَيُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ مُقْبِلٌ عَلَيْهِمَا بِقَلْبِهِ وَوَجْهِهِ إِلاَّ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ
“যে মুসলমান সুন্দর রুপে অয করে তারপর দাঁড়িয়ে দেহ ও মনকে পুরোপুরি তার প্রতি নিবদ্ধ রেখে দুই রাকআত সালাত (নামায/নামাজ) আদায় করে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। ”
উক্বা বলেন, কথাটি শুনে আমি বলে উঠলাম ওহ, কথাটি কত উত্তম! তখন আমার সামনের একজন বলতে লাগলেন, আগের কথাটি আরো উত্তম। আমি সে দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি উমর (রাযি.)। তিনি আমাকে বললেন তোমাকে দেখেছি, এইমাত্র এসেছ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগে বলেছেন,
مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ يَتَوَضَّأُ فَيُبْلِغُ – أَوْ فَيُسْبِغُ – الْوُضُوءَ ثُمَّ يَقُولُ أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ إِلاَّ فُتِحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَةُ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَا
“তোমাদের যে ব্যাক্তি কামিল বা পূর্ণরুপে অযু করে এই দু’আ পাঠ করবে-أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নাই, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসুল) তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে যাবে এবং যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে জান্নাতের প্রবেশ করতে পারবে। ” (সহীহ মুসলিম হা/৪৪৬)
২- জামাতে ইমামের প্রথম তাকবীরের সাথে ৪০ দিন নামায আদায় করুন
আনাস ইবন মালিক (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
من صلى أربعين يوما في جماعة يدرك التكبيرة الأولى كتب له براءتان : براءة من النار، وبراءة من النفاق“যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন জামাতে নামায আদায় করবে এবং সে প্রথম তাকবীরও পাবে তার জন্যদুটি মুক্তির পরওয়ানা লেখা হবে। (এক) জাহান্নাম থেকে মুক্তি। (দুই) নেফাক থেকে মুক্তি।”(সুনানেতিরমিযী ১/৩৩; আততারগীব ১/২৬৩)
৩-প্রতিদিন ১২ রাকাআত সুন্নাত আদায় করুন
উম্মে হাবিবা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,
مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يُصَلِّي لِلَّهِ كُلَّ يَوْمٍ ثِنْتَيْعَشْرَةَ رَكْعَةً تَطَوُّعًا غَيْرَ فَرِيضَةٍ إِلَّا بَنَى اللَّهُ لَهُ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ
“কোন মুসলিম ব্যক্তি দিনে-রাতে ফরয ব্যতীত বার রাকাআত অতিরিক্ত নামায আদায় করবে তার জন্যে জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করা হবে।” (সহীহ মুসলিম হা/৭২৮) এ বার রাকাআত নামায হলঃ যোহরের আগে চার এবং পরে দুই, মাগরিরের পরে দুই, এশার পরে দুই এবং ফজরের আগে দুই রাকাআত।”
৪-প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করুন
আবু উমামাহ (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ قَرَأَ آيَةَ الْكُرْسِيِّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُولِ الْجَنَّةِ إِلَّا أَنْ يَمُوتَ
“যে ব্যাক্তি প্রতেক ফরয নামাযের পর আয়াতুলকুরসি পড়বে তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ব্যতিত আর কোন বাঁধা থাকবে না।” (নাসায়ীহা/ ৯৪৪৮ তাবারানী ৭৮৩২)
৫-প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তিন তাসবিহ পাঠ করুন
আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ سَبَّحَ اللهَ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ ، وَحَمِدَ اللهَ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ ، وَكَبَّرَ اللهَ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ ، فَتْلِكَ تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ ، وَقَالَ تَمَامَ الْمِائَةِ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ غُفِرَتْ خَطَايَاهُ وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ
“যে ব্যাক্তি প্রত্যেক সালাতের পর সুবহানাল্লাহ তেত্রিশবার, আলহামদুলিল্লাহ তেত্রিশবার ও আল্লাহু আকবার তেত্রিশবার বলবে এই হল নিরানব্বই-আর একশত পূর্ণ করার জন্য বলবে-لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ তার পাপ সমুহ মাফ হয়ে যাবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মত হয়।” (সহীহ মুসলিম হা/১২৩০)
৬-সূরা মুলক তেলাওয়াত করুন
আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ سُورَةً مِنْ الْقُرْآنِ ثَلَاثُونَ آيَةً ، شَفَعَتْ لِرَجُلٍ حَتَّى غُفِرَ لَهُ ، وَهِيَ سُورَةُ تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ
“কুরআনের তিরিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সূরা এমন আছে , যা তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং শেষাবধি তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে,সেটা হচ্ছে ‘তাবা-রাকাল্লাযী বিয়্যাদিহিল মূলক’ (সূরা মূলক)।” (তিরমিযী হা/২৮৯১, মুসনাদে আহমাদ ৭৯১৫)
৭-অধিকহারে দুরুদ পড়ুন
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, من نسي الصلاة عليّ خطئ طريق الجنة“যে ব্যক্তি আমার উপর দুরুদ ভুলে গেল, সে জান্নাত ভুলে গেল। (ইবনু মাজাহ হা/৯০৪)
৮- سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ সকালে ১০০ বার এবং সন্ধ্যায় ১০০ বার পড়ুন
مَنْ قَالَ حِينَ يُصْبِحُ وَحِينَ يُمْسِي : سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ مِائَةَ مَرَّةٍ ، لَمْ يَأْتِ أَحَدٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَفْضَلَ مِمَّا جَاءَ بِهِ إِلَّا أَحَدٌ قَالَ مِثْلَ مَا قَالَ أَوْ زَادَ عَلَيْهِ
যে ব্যক্তি সকালে ১০০ বার এবং সন্ধ্যায় ১০০ বার سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন তার চাইতে উত্তম আমল নিয়ে আর কেউ আসতে পারবে না । তবে, ঐ ব্যক্তি ব্যতীত, যিনি অনুরূপ তাসবীহ পাঠ করেছে অথবা তার চাইতে বেশি আমল করেছে । (সহীহ মুসলিম হা/৬৫৯৯)
৯-অধিকহারে لا حَوْلَ وَلا قُوَّةَ إِلا بِاللَّهِ পড়ুন
আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
أَلا أُعَلِّمُكَ، أَوْ قَالَ: أَلا أَدُلُّكَ عَلَى كَلِمَةٍ مِنْ تَحْتِ الْعَرْشِ مِنْ كَنْزِ الْجَنَّةِ ؟، تَقُولُ: لا حَوْلَ وَلا قُوَّةَ إِلا بِاللَّهِ، فَيَقُولُ اللَّهُ –عز وجل- : أَسْلَمَ عَبْدِي وَاسْتَسْلَمَ
“আমি কি তোমাকে শিক্ষা দিব না, অথবা বলেছেন: আমি কি তোমাকে আরশের নিচে জান্নাতের গুপ্তধন একটি কালিমার কথা বলব না? তুমি বল:لا حَوْلَ وَلا قُوَّةَ إِلا بِاللَّهِ (অর্থাৎ আল্লাহর সাহায্য ছাড়া সৎকাজ করার শক্তি ও অসৎ কাজ থেকে বাঁচার কোন উপায় নেই)
আল্লাহ বলবেন, আমার বান্দা মেনে নিলো ও আনুগত্য করল।” (হাকেম পৃ ১৭৫)
১০-সালামের অভ্যাস করুন
আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
لَا تَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلَا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَوَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ أَفْشُواالسَّلَامَ بَيْنَكُمْ
“তোমরা ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যতক্ষণ না তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা গড়ে উঠবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা প্রকৃত ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কাজ বলে দেব না, যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালবাসতে লাগবে? (তা হচ্ছে) তোমরা আপোসের মধ্যে সালাম প্রচার কর।”





Users Today : 5
Users Yesterday : 357
This Month : 5
This Year : 171876
Total Users : 287739
Views Today : 402
Total views : 3407965