জুময়ার দিন গরীবের হজ্ব
ইমাম আবু সাঈদ ইবনে আরাবী মুহাম্মদ ইবনে আহমদ ইবনে যিয়াদ বাছরী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৩৪০ হিজরী বর্ণনা করেন,
نا مُشْرِفٌ، نا كَثِيرُ بْنُ هِشَامٍ، نا عِيسَى بْنُ إِبْرَاهِيمَ الْهَاشِمِيُّ، عَنْ مُقَاتِلِ بْنِ قَيْسٍ، عَنِ الضَّحَّاكِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْجُمُعَةُ حَجُّ الْمَسَاكِينَ
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ) বলেছেন: নি:স্বদের হজ্ব হলো জুময়া।” ১১০০১১০০, মুজামে ইবনে আরাবী, হাদিস নং ২৩৭৮; ইমাম কাদ্বাঈ: মুসনাদে শিহাব, হাদিস নং ৭৮; ইমাম আবু নুয়াইম: তারিখে ইস্পাহান, ২য় খন্ড, ১৬০ পৃ:; আল ফেরদৌস, হাদিস নং ২৬১৪; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ১১৪৫৮; ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১৩৫৬ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়; ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ৫৭৪৬; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ২১০৩১; ইমাম ছিয়তী: জামেউছ ছাগীর, হাদিস নং ৬৪০৫;
এই হাদিস সম্পর্কে হাফিজ ইরাকী ( رَحْمَةُ الله عليه) এর অভিমত:
قال العراقي: سنده ضعيف -“হাফিজ ইরাকী বলেন: এর সনদ দ্বায়িফ ।” ১১, আল্লামা ছানআনী: আত তানভীর শরহু জামেউছ ছাগীর, ৩৬১৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;
ইমাম আব্দুর রউফ মানাভী ( رَحْمَةُ الله عليه) হাদিসটিকে ضَعِيف দ্বায়িফ বলেছেন। ২২, আল্লামা মানাভী: আত তাইছির বি’শরহে জামেইছ ছাগীর, ১ম খন্ড, ৪৯০ পৃ:;
শারিহে বুখারী আল্লামা ইবনে রাজব হাম্বলী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন,
وقد روي في حديث ضعيف: الجمعةُ حجُ المساكين -“দ্বায়িফ হাদিসে বর্ণিত আছে: জুময়া নি:স্বদের হজ্ব।” ৩৩, ইবনে রাজব: ফাতহুল বারী শরহে বুখারী, ৮ম খন্ড, ১০২ পৃ:;
ইমাম ছাখাবী, ইমাম আজলুনী ও আবু আব্দুর রহমান হাওত শাফেয়ী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন, الجمعة حج المساكين في سنده مقاتل ضعيف
-“মিসকীনের হজ্ব হলো জুময়া’ এই হাদিসের সনদে ‘মুকাতিল’ নামক দ্বায়িফ রাবী রয়েছে।” ৪৪, মাকাছিদুল হাছানাহ; কাশফুল খাফা; আসানিল মাতালিব ফি আহাদিছি মুখতালিফাতিল মারাতিব, হাদিস নং ৫৪৩;
এ বিষয়ে ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে সালামাহ ইবনে জাফর কাদ্বাঈ মিছরী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৪৫৪ হিজরী অন্যভাবে রেওয়ায়েত বর্ণনা করেন,
وَأَخْبَرَنَا أَبُو مُحَمَّدٍ التُّجِيبِيُّ، أبنا ابْنُ الْأَعْرَابِيِّ، ثنا الْحَسَنُ هُوَ ابْنُ عَلِيِّ بْنِ عَفَّانَ الْعَامِرِيُّ، ثنا عُثْمَانُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، ثنا أَبُو يُوسُفَ، عَنْ عِيسَى بْنِ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ مُقَاتِلٍ، عَنِ الضَّحَّاكِ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْجُمُعَةُ حَجُّ الْفُقَرَاءِ
-“হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ) বলেছেন: দরিদ্রদের হজ্ব হলো জুময়া।” ৫৫, মুসনাদে শিহাব, হাদিস নং ৭৯; ইমাম ইবনে আসাকির: তারিখে দামেস্ক, ৩৮তম খন্ড, ৪৩১ পৃ:; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ১১০৮৮; ইমাম ছিয়তী: জামেউছ ছাগীর, হাদিস নং ৬৪০৪; ইমাম ছিয়তী: ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ৫৭৪৫; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ২১০৩১;
আল্লামা ইমাম মানাভী ( رَحْمَةُ الله عليه) হাদিসটিকে ضَعِيف দ্বায়িফ বলেছেন। ৬৬, আল্লামা মানাভী: আত তাইছির বি’শরহে জামেইছ ছাগীর, ১ম খন্ড, ৪৯০ পৃ:;
ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক্ব ইবনে আব্বাস মক্বী ফাকেহী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ২৭২ হিজরী বর্ণনা করেন,
حَدَّثَنَا سَلَمَةُ بْنُ شَبِيبٍ قَالَ: ثنا الْحُسَيْنُ بْنُ الْوَلِيدِ قَالَ: ثنا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ أَبِي رَوَّادٍ، عَنِ الضَّحَّاكِ بْنِ مُزَاحِمٍ قَالَ: الْجُمُعَةُ حَجُّ الْمَسَاكِينِ
-“তাবেঈ দ্বাহ্হাক ইবনে মুজাহিম ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন: নি:স্বদের হজ্ব হলো জুময়া।” ৭৭, আখবারে মক্বীয়া লিল ফাকেহী, ১ম খন্ড, ৩৭৭ পৃ:;
এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যায়,
وروى عَن ابْن أبي ذِئْب عَن نَافِع عَن ابْن عمر رَضِي الله عَنْهُمَا مَرْفُوعا وَالْجُمُعَة حج فُقَرَاء أمتِي عبد القادر بن عبد القاهر الجرجاني في جزئه.
-“হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) বলেছেন: আমার উম্মতের মধ্যে দরিদ্রদের হজ্ব হলো জুময়া। আব্দুল কাদির ইবনে আব্দুল কাহির জুরাযানী ( رَحْمَةُ الله عليه) তার গ্রন্থে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।” ৮৮, ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ২১০৬৮; ইমাম ছিয়তী: জামেউল আহাদিস, হাদিস নং ১১৫২৪; জাওয়াহিরুল মাদ্বিয়া ফি তাবকাতিল হাম্বলিয়া, ২য় খন্ড, ২০৬ পৃ:;
উল্লেখিত রেওয়ায়েত সমূহ থেকে বলা যায়, নি:স্ব ও দরিদ্রের জন্য জুময়ার দিন হজ্বের দিন। এই রেওয়ায়েত খানা যদিও দুর্বল পর্যায়ের তথাপিও উৎসাহ প্রদান ও ফাজায়েলের ক্ষেত্রে এরূপ রেওয়ায়েতের উপর আমল করার অনুমতি রয়েছে। যেমন হানাফী মাজহাবের ফোকাহাদের অভিমত:
قَالَ أَبُو مُحَمَّدِ بْنُ حَزْمٍ: جَمِيعُ الْحَنَفِيَّةِ مُجْمِعُونَ عَلَى أَنَّ مَذْهَبِ أَبِي حَنِيفَةَ أَنَّ ضَعِيفَ الْحَدِيثِ أَوْلَى عِنْدَهُ مِنَ الْقِيَاسِ وَالرَّأْيِ.
-“আবু মুহাম্মদ ইবনে হাজম বলেছেন: সকল হানাফীরা ঐক্যমত পোষন করেছেন যে, ইমামে আজম আবু হানিফা ( رَحْمَةُ الله عليه) এর মাজহাব হল: নিশ্চয় দ্বায়িফ হাদিস তার কাছে কিয়াস ও রায় হতেও উত্তম।” ৯৯, ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, ৩য় খন্ড, ৯৯০ পৃ: ৪৪৫ নং রাবীর ব্যাখ্যায়;
আল্লামা কামালুদ্দিন ইবনুল হুমাম ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন,
الضَّعِيفُ غَيْرُ الْمَوْضُوعِ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ -“ফাজায়েলের আমলের ক্ষেত্রে গাইরে মওজু দ্বায়িফ হাদিসের উপর আমল করা জায়েয।” ১০১০, ইবনুল হুমাম: ফাতহুল কাদীর, ১ম খন্ড, ৩৪৯ পৃ:;
হিজরী ১১শ শতাব্দির মোজাদ্দেদ, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন, وَالضَّعِيفُ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ اتِّفَاقًا -“সর্ব-সম্মতিক্রমে ফাজায়েলের আমলের ক্ষেত্রে দ্বায়িফ হাদিস আমল করা জায়েয।” ১১১১, ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: আসরারুল মারফুয়া, ৪৩৪ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;
আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী ( رَحْمَةُ الله عليه) তদীয় ‘তাফছিরে রুহুল বয়ান’ কিতাবে উল্লেখ করেন:
قد صح عن العلماء تجويز الاخذ بالحديث الضعيف فى العمليات
-“আলিমগণের পক্ষ হতে ইহা ছহীহ্ যে, আমলের ক্ষেত্রে দ্বায়িফ হাদিস গ্রহণ করা জায়েয।” ১২১২, তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৭ম খন্ড, ২৬৩ পৃ:; তাফছিরে জালালাইন, ৩৫৭ পৃ: ১৩ নং হাশিয়া;
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী ( رَحْمَةُ الله عليه) আরো বলেন,
أَجْمَعُوا عَلَى جَوَازِ الْعَمَلِ بِالْحَدِيثِ الضَّعِيفِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ،
-“ইজমা হয়েছে যে, ফাজায়েলের আমলের ক্ষেত্রে দ্বায়িফ হাদিসের উপর আমল করা জায়েয।” ১৩১৩, ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী: মেরকাত শরহে মেসকাত, ১১৭৩ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়;
হিজরী নবম শতাব্দির মুজাদ্দেদ আল্লামা ইমাম জালালুদ্দিন ছিয়তী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন
وَيُعْمَلُ بِالضَّعِيفِ أَيْضًا فِي الْأَحْكَامِ، إِذَا كَانَ فِيهِ احْتِيَاطٌ. -“দ্বায়িফ হাদিসও আহকামের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য যখন সাবধানতা অবলম্বন করা হবে।” ১৪১৪, ইমাম ছিয়তী: তাদরিবুর রাবী, ১ম খন্ড, ৩৫১ পৃ:;
আল্লামা মুফতী আমিমুল ইহছান মোজাদ্দেদী আল-বরকতী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেন: “আল্লাহর নবী ( ﷺ) এর নাম শুনে অঙ্গুলী চুম্বনের হাদিস গুলো মরফূ ছহীহ্ নয়, দ্বায়িফ হাদিস পাওয়া যায়। ফজিলতের জন্য আমলের বেলায় দ্বায়িফ হাদিসের উপর আমল করা মুস্তাহাব।” (ফতোয়ায়ে বরকতীয়া)।