জাল হাদীস সম্পর্কে ইসলামের মূলনীতি :

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

জাল হাদীস সম্পর্কে ইসলামের মূলনীতি :

জাল হাদীস, যাকে আরবী ভাষা এবং মুহাদ্দিসীনদের পরিভাষায় মওজু বলা হয়।
সহজ কথায় যেটি রাসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম এর হাদীস নয়, তাকে রাসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম এর হাদীস বলার নামই জাল বা বানোয়াট হাদীস।
রাসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম থেকে প্রমানিত নয়, এমন কোন কথাকে রাসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম এর হাদীস বলার নাম জাল হাদীস।
আসলে এসবকে হাদীস বলাই উচিত নয়।
কিন্তু যেহেতু এসবের নিসবত জাল বর্ণনাকারীরা রাসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম এর দিকে করেছে রাসূলে কারিম এর হাদীস বলে, তাই হরফে নিসবতের কারণে ওসব বাতিল বর্ণনার সাথেও মুহাদ্দিসীনে কেরাম হাদীস শব্দ ব্যবহার করেছেন।
এর মানে এটা নয় যে, ওসব বর্ণনা আসলে হাদীস।
যেমন মিথ্যা নবী শব্দ। আসলে যে মিথ্যা নবী দাবি করে সেতো নবীই নয়।
তবু আমরা বলি মিথ্যা নবী গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী, মুসায়লামায়ে কাজ্জাব।
ঠিক জাল হাদীসের ক্ষেত্রেও তা হাদীস না হওয়া সত্বেও মুহাদ্দিসীনে কেরাম জাল হাদীস বলে মন্তব্য করেছেন।

জাল হাদীসের হুকুম :

যেহেতু জাল হাদীস হাদীস নয়। তাই সুনিশ্চিতভাবে জাল ও বানোয়াট জানার পরও উক্ত বক্তব্যটিকে রাসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম এর হাদীস বলে প্রচার করা জায়েজ নয়। হারাম।
তবে এটি জাল হাদীস তা জানানোর জন্য বর্ণনা করা জায়েজ। যেমন কুফরী কথা বলা জায়েজ নয়। কিন্তু কথাটি কুফরী সেটি বুঝানোর জন্য কুফরী কথা উল্লেখ করা জায়েজ আছে।
জাল হাদীসকে রাসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম এর হাদীস বলে প্রচার করা মানে হল রাসূল কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম এর নামে মিথ্যা কথা বলা। আর রাসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম এর নামে মিথ্যা কথা বলার ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী এসেছে হাদীসে।
যেমন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছেকৃত আমার উপর মিথ্যারোপ করবে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নিল।
গ্রন্থ সূত্র :
মুসনাদুল হুমায়দী, হাদীস নং-১২০০,
মুসনাদে ইবনুল জিদ, হাদীস নং-১৪৮০,
মুসনাদে দারেমী, হাদীস নং-৬১৩,
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৩।

عَنِ المُغِيرَةِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «إِنَّ كَذِبًا عَلَيَّ لَيْسَ كَكَذِبٍ عَلَى أَحَدٍ، مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا، فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ
হযরত মুগীরা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার উপর মিথ্যারোপ করা অন্য কারো উপর মিথ্যারোপ করার মত নয়। যে ব্যক্তি ইচ্ছেকৃত আমার উপর মিথ্যারোপ করবে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নিল।
গ্রন্থ সূত্র :
সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১২৯১, ১২২৯,
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪,
মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-১২৭৬।

উল্লেখিত দু’টি হাদীস ছাড়াও অনেক হাদীস আছে রাসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম এর দিকে মিথ্যার নিসবত করে কোন কিছু বলা সম্পর্কে।
এখানে লক্ষ্যনীয় হল,
প্রতিটি হাদীসেই রাসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে যিনি জেনে-শুনে ইচ্ছেকৃত মিথ্যা কথাকে রাসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম এর দিকে নিসবত করে থাকে।
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে,
না জেনে যদি কোন ব্যক্তি কোন মিথ্যা কথাকে রাসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম এর দিকে নিসবত করে তাহলে উক্ত ব্যক্তি এ হুশিয়ারী ও শাস্তির আওতাভুক্ত হবে না।
অর্থাৎ উক্ত ব্যক্তি অজ্ঞতার কারণে গোনাহগার হবে না।
সুতরাং কেউ যদি না জেনে জাল হাদীস বর্ণনা করে, তাহলে সে গোনাহগার হবে না।
তবে যদি জাল জানার পরও রাসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম এর দিকে নিসবত করা উক্ত জাল বর্ণনাটিকে রাসূলে কারিম সল্লাল্লহু আ’লাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম এর হাদীস বলে প্রচার করে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি হাদীসে উল্লেখিত ধমকীর আওতাভুক্ত হবে। লোকটি খুবই ঘৃনিত এবং মারাত্মক গোনাহের কাজ করল বলে সাব্যস্ত হবে।
তবে মানুষকে বুঝানোর জন্য বা জানানোর জন্য জাল হাদীসকে জাল বলে উল্লেখ করার দ্বারা গোনাহগার হবে না।
যেমন কুফরী কথাকে কুফরী কথা প্রমাণের জন্য কুফরী কথা উল্লেখ করে তার হুকুম বলে দেয়া গোনাহের কাজ নয়।
গ্রন্থ সূত্র :
কাওয়ায়েদুত তাহদীস-জামাল উদ্দীন কাসেমীকৃত-১৫,
ফাতহুল মুলহিম-১/৬১।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment