লেখক: অধ্যক্ষ মওলানা মুহাম্মদ আবদুল করীম নঈমী
সম্পাদনা: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
অনুরূপভাবে, সাহেবে হলবী শরহে মুন্’য়াহ গ্রন্থে লিখেছেন:
المبتدع الفاسق من حيث الاعتقاد وهو أشد الفسق من حيث العمل.
অর্থ: বিদ’আতী ব্যক্তি আকীদা-বিশ্বাসের দিক থেকে ফাসিক-মন্দ, আর আমল বা কর্ম-অনুশীলনের ক্ষেত্রে সে আরো অধিক মন্দ।
মুসলিম শরীফ হাদীসগ্রন্থে হযরতে আবূ হুরায়রাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত হয়েছে যে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন:
يَكُونُ فِى آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ.
অর্থ: আখেরী জমানায় বহু ধোঁকাবাজ মিথ্যাবাদী লোকের আবির্ভাব হবে, যারা তোমাদের কাছে এমন এমন হাদীস নিয়ে উপস্থিত হবে, যা না শুনেছো তোমরা, না শুনেছেন তোমাদের পিতৃপুরুষবৃন্দ। সুতরাং তোমরা তাদের থেকে সাবধান থেকো; তারা যেনো তোমাদেরকে ভ্রষ্টতা ও ফিতনায় না ফেলে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস-৭ (আন্তর্জাতিক)]
সর্ব-ইমাম বুখারী ও মুসলিম (রহমতুল্লাহি আলাইহিমা)-বর্ণিত অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমান: “শেষ যুগে অল্পবয়স্ক ও স্বল্পজ্ঞানের অধিকারী কওম বা গোষ্ঠী জাহির হবে তথা প্রকাশ পাবে। তাদের কোনো কথাবার্তাই কুর’আন ও হাদীস ছাড়া হবে না। তারা কুর’আন পাঠ করবে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালীর নিচে যাবে না (মানে অন্তরে প্রবিষ্ট হবে না)। তারা দ্বীন-ইসলাম থেকে এভাবে বের হয়ে যাবে যেমন তীর ধনুক থেকে বের হয়ে যায়। [সম্পাদকের নোট: এ হাদীসটি আহলে কুর’আন তথা শুধু কুর’আনকেই প্রাধান্য দানকারী ও হাদীসকে হেয়কারী গোষ্ঠী এবং তাদের বিপরীত মেরুর আহলে হাদীস/লা-মাযহাবী গোষ্ঠী দুটোকেই চিহ্নিত করেছে!]
হাদীসটির শেষের চুম্বক অংশ নিচে প্রদত্ত হলো:
يقولون من خير قول البرية يقرؤون القرآن لا يجاوز حناجرهم يمرقون من الدين كمروق السهم من الرمية. الحديث متفق عليه.
সাহেবে তিরমিযী (রহমতুল্লাহি আলাইহ) বর্ণনা করেন যে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা করেছেন:
أَلْسِنَتُهُمْ أَحْلَى مِنَ السُّكَّرِ وَقُلُوبُهُمْ قُلُوبُ الذِّئَابِ.
অর্থ: তাদের মুখের ভাষা হবে চিনিতুল্য মিষ্টি; পক্ষান্তরে তাদের অন্তর হবে নেকড়ে বাঘের মতো (হিংস্র)। [তিরমিযী, ২৪০৪; ওহাবী/সালাফীচক্র এটাকে দুর্বল/যয়ীফ বলে দাবি করে থাকে, কেননা হাদীসটা তাদেরকেই চিহ্নিত করেছে – সম্পাদক!]
হযরতে শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিসে দেহেলভী (রহমতুল্লাহি আলাইহ) নিজ তাফসীরগ্রন্থে – وَدُّواْ لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُونَ – (সূরাহ ক্বলম, ৯) আয়াতের অধীনে লিখেছেন যে এমন লোকের সাথে ঈমানদারদের উঠা-বসা ইত্যাদি করা ঠিক নয়। যেমন –
فانه لا يوانس المبتدع و لا يجالس ولا يؤاكله ولا يشاربه.
ইবারত/উদ্ধৃতিটির মর্ম এই যে, “ঈমানদার ব্যক্তির পক্ষে বদ-মাযহাবীর সাথে বন্ধুত্ব ও মহব্বত রাখা, তার সাথে বসা, পানাহার করা জায়েয নয়।”
এ রকম করলে তার ঈমানে দুর্বলতা দেখা দেবে। উপরোক্ত অকাট্য প্রামাণ্য দলিলাদির মাধ্যমে প্রতিভাত হলো যে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের পক্ষে কখনো কোনোক্রমেই জায়েয নয় যে তাঁরা ওহাবী, শীয়া, মির্জায়ী, চকড়ালভী ও প্রবৃত্তিবাদী ইত্যাদি বাতিল মতবাদীদেরকে আল্লাহওয়ালা-বৃন্দের মসনদে স্থান দেবেন, তাদের ওয়াজ শুনবেন এবং তাদের কথাবার্তার উপর আস্থা রাখবেন।