চিংড়ি খাওয়া জায়েয কিনা?

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

চিংড়ি খাওয়া জায়েয কিনা? (হানাফী মাযহাব অনুসারে)

======================

আমার পূর্ববর্তী সী-ফুড খাওয়া সম্পর্কিত পোস্টের প্রেক্ষিতে অনেকে জানতে চেয়েছেন ‘চিংড়ি’ খাওয়া জায়েয কিনা? তাদের জন্যই আজকের এই লেখা-

পূর্বের লেখায় আমি স্পষ্ট করেছি যে, হানাফী মাযহাবের উসুল হল- “☛মাছ ব্যতীত প্রত্যেক জলজ প্রানী হারাম”। 

এখন, চিংড়ি মাছ কিনা- এ বিষয়ে উলামায়ে কেরাম এবং প্রাচীন অভিধানবিদ ও প্রাণিবিদগণের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। সে জন্য হানাফী মাযহাবে চিংড়ি নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। আমি প্রত্যেকটি বিষয় নিয়েই আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। 

☛প্রথমতঃ চিংড়ি মাছ কিনা?

উত্তরঃ চিংড়িকে اربيان বলা হয়। এটি পোকার মত দেখতে তবে এক প্রকার মাছ।

১) প্রখ্যাত আরবী অভিধান ‘আল ক্বামূস’ –এ চিংড়ি সম্পর্কে বলা হয়েছে-

الاربیان بْالکسر سْمك کْالدود

চিংড়ি পোকার মত দেখতে এক প্রকার মাছ।

২) ‘সিহাহ’ ও ‘তাজুল আরূস’ কিতাবে আছে-

الاربیان بیض من اْلسمك کْالدود یکون بالبصرة

চিংড়ি সাদা রঙের মাছ। যা পোকা সদৃশ এবং বসরাতে পাওয়া যায়।

৩) প্রাণি জগতের বিশ্বকোষ খ্যাত আল্লামা কামালুদ্দিন দামেরী (رحمة الله) এঁর ‘হায়াতুল হায়ওয়ান’ কিতাবে আছে-

الروبیان ھو سمك صغی جدا احمر

চিংড়ি অনেক ছোট লাল রঙের মাছ।

ইমামে আহলে সুন্নত ফক্বীহ শাহ আহমদ রেযা (رحمة الله) বলেন- 

فقیر نے کتب لغات وکتب طب اور کتب علم حیوان میں بالاتفاق اسی کی تصريح دیکھی کہ وه مچھلی ہے

“এই ফকীর (আহমদ রেযা) অভিধান ও চিকিৎসাশাস্ত্রের কিতাব, প্রাণিবিদ্যার কিতাব স্পষ্ট পেয়েছি যে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে তা (চিংড়ি) হল মাছ’।” 

[ফতোয়া রযভিয়া, ২০/৩৩৬]

মোটকথা, চিংড়ি এক মাছ কিন্তু মাছের মত দেখতে নয়। যারা মাছ বলেছেন তাদের উদ্দেশ্যও (বৈশিষ্টগতভাবে) মাছ নয় বরং নামে মাছ। 

☛দ্বিতীয়তঃ চিংড়ির হুকুমঃ

মাযহাবে হানাফীতে জমহুর ফক্বীহ্গণের মতে চিংড়িকে মুতলাক (সাধারন) ভাবে হালাল বলা হয়নি। তবে সরাসরি হারামও বলেন নি। যারা হুকুম আরোপ করেছেন তারা ☛‘মাকরুহ’ বলেছেন। তবে খেতে নিষেধ করেছেন। এটাই আকাবিরদের মানহাজ। যেমন ইমাম ফক্বীহ শাহ আহমদ রেযা (رحمة الله) ফতোয়ায়ে রযভিয়া-তে চিংড়ির ওপর দীর্ঘ আলোচনার পর উল্লেখ করেন-

الحمدللہ اس فقیر اور اس کے گھر والوں نے عمر بھر نہ کھایا اور نہ اسے کھائے گے

আলহামদুদিল্লাহ! এই ফকীর (আহমদ রেযা) এবং তাঁর পরিবার জীবনে কোনদিন চিংড়ি খায় নি এবং কখনো খাবে না। 

[ফতোয়ায়ে রযভিয়া, ২০/৩৩৯]

☛আধুনিক বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে চিংড়িঃ

আধুনিক প্রাণিবিজ্ঞান এবং শ্রেণিভূক্তিতে চিংড়িকে মাছ নয় বরং এক ধরণের সামুদ্রিক পোকা বলা হয়। প্রাণিজগতের শ্রেণিবিন্যাসে চিংড়ি ‘আর্থরোপোডা’ পর্বের প্রাণি। চিংড়িকে মাছ বলা হয় না যে সকল কারনে তা হলো- 

***চিংড়ি আর্থ্রোপোডা পর্বের ম্যালাকোস্ট্রাকা ক্লাসের অমেরুদণ্ডী প্রানী। অন্যদিকে মাছ হলো কর্ডাটা শ্রেণীর অস্টিকথিস শ্রেনিভুক্ত। 

***আবার মাছের শরীরে/দেহে সাইক্লোয়েড, গ্যানয়েড বা টিনয়েড ধরণের আঁইশ দ্বারা আবৃত থাকে কিন্তু চিংড়িতে তা অনুপস্থিত। 

***মাছের মাথার দুপাশে চারজোড়া ফুলকা থাকে; যা কানকো দিয়ে ঢাকা থাকে অন্যদিকে চিংড়ির কোনও প্রকার ফুলকা নেই। 

উপরের মাছের সকল বৈশিষ্ট্য চিংড়ির সাথে অমিল হওয়ার কারনে চিংড়িকে মাছ বলা হয় না। তাছাড়া এটি রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান বাড়িয়ে দেয়। যা শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকর। 

সুতরাং এই বিষয়ে ‘মাকরুহ’ এর ওপর আমল করে খাওয়া থেকে বিরত থাকাই বাঞ্ছনীয়। যা আমাদের পূর্ববর্তীগণ করে গিয়েছেন। 

মা’আসসালাম-

☛মুহাম্মাদ হাসিব হাসেমী

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment