ঘুমানোর পূর্বে দোয়াঃ
দোয়া ১:
হজরত হুজায়ফা (رضي الله عنه) বলেন রাসুলুল্লাহ (ﷺ) যখন রাতে শয্যাগ্রহণ করতেন তখন তিনি তাঁর হাত গালের নিচে রাখতেন। অতঃপর বলতেনঃ
-اَللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوْتُ وَاَحْىَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুত ওয়া আহইয়া।’
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমার নামে মৃত্যুবরণ করি এবং তোমার নামেই জীবিত হই।’
(বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত)
দোয়া ২:
হজরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ বিছানায় ঘুমাতে যায়, তখন যেন সে বলেঃ
-بِاسْمِكَ رَبِّىْ وَضَعْتُ جَنْبِىْ وَبِكَ أَرْفَعُهُ اِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِىْ فَارْحَمْهَا وَاِنْ اَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِيْن –
উচ্চারণ : ‘বিসমিকা রাব্বি ওয়াদাতু জাম্বি ওয়া বিকা আরফাউহু ইন আমসাকতা নাফসি ফারহামহা ওয়া ইন আরসালতাহা ফাহফাজহা বিমা তাহফাজু বিহি ইবাদাকাস সালিহিন।’
অর্থ : হে আমার প্রভু! তোমার নামে আমার পার্শ্ব রাখলাম এবং তোমার নামেই উঠব। যদি তুমি আমার আত্মাকে রেখে (মৃত্যু) দাও তবে তার প্রতি দয়া কর। আর যদি ফেরত (জাগিয়ে) দাও, তাহলে তার প্রতি লক্ষ্য রাখ। যেমনভাবে তুমি লক্ষ্য রাখ তোমার নেক বান্দাদের দিকে।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
দোয়া ৩:
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তাকে বললেন, যখন তুমি বিছানায় ঘুমাতে যাওয় তখন বলোঃ
-اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَمَا أَظَلَّتْ وَرَبَّ الأَرَضِينَ وَمَا أَقَلَّتْ وَرَبَّ الشَّيَاطِينِ وَمَا أَضَلَّتْ كُنْ لِي جَارًا مِنْ شَرِّ خَلْقِكَ كُلِّهِمْ جَمِيعًا أَنْ يَفْرُطَ عَلَىَّ أَحَدٌ مِنْهُمْ أَوْ أَنْ يَبْغِيَ عَلَىَّ عَزَّ جَارُكَ وَجَلَّ ثَنَاؤُكَ وَلاَ إِلَهَ غَيْرُكَ وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা রাব্বাস সামাওয়াতিস সাবয়ি ওয়া মা আজাল্লাত ওয়া রাব্বাল আরদিনা ওয়া মা আকাল্লাত ওয়া রাব্বাশ শায়াত্বিনি ওয়া মা আদাল্লাত কুন লি ঝারাম মিন শাররি খালক্বিকা কুল্লিহিম ঝামিআ। আইঁইয়াফরুত্বা আলাইয়্যা আহাদুম মিনহুম আও আইঁইয়াবগিয়া আলাইয়্যা আয্যা ও ঝাল্লা ছানাউকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা ও লা ইলাহা ইল্লা আংতা।’
অর্থ : “হে আল্লাহ! সাত আকাশের প্রভু এবং যার ওপর তা ছায়া বিস্তার করেছে, সাত জমিনের প্রভু এবং যা কিছু তা উত্থাপন করেছেন, আর শয়তানদের প্রতিপালক এবং এরা যাদেরকে বিপথগামী করেছে!
তুমি আমাকে তোমার সব সৃষ্টিকুলের অনিষ্টতা থেকে রক্ষার জন্য আমার প্রতিবেশী হয়ে যাও, যাতে সেগুলোর কোনোটি আমার ওপর বাড়াবাড়ি করতে না পারে অথবা আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে না পারে। সম্মানিত তোমার প্রতিবেশী, সুমহান তোমার প্রশংসা। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তুমি ব্যতিত আর কোনো মাবুদ নেই।’
(মুসলিম, মিশকাত)
অজু করে ঘুমানো
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘যদি কোনো মুসলমান রাতে আল্লাহকে স্মরণ করে অজু শেষে শয়ন করে এবং রাতে জাগ্রত হয়ে দুনিয়া ও আখিরাতের কোনো কল্যাণ আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাআলা তা দান করেন।’
(আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৪২)
আল্লাহকে স্মরণ ও কুরআন তেলাওয়াত করা
রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি শোয়ার পর আল্লাহর নাম নেয় না, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে লাঞ্ছনা নেমে আসবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৫৬)
সুরা ইখলাস ও নাস-ফালাক পড়ে শরীরে ফুঁ দেওয়া আয়েশা (رضي الله عنه) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (ﷺ) প্রতি রাতে যখন বিছানায় যেতেন, তখন দুই হাত একত্র করে তাতে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দিতেন। অতঃপর মাথা ও চেহারা থেকে শুরু করে যত দূর সম্ভব দেহে তিনবার দুই হাত বোলাতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৫০১৭)
আয়াতুল কুরসি পড়া রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘তুমি যখন শয্যা গ্রহণ করবে, তখন আয়াতুল কুরসি পড়বে। তাহলে আল্লাহর পক্ষ থেকে সর্বদা তোমার জন্য একজন রক্ষক থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত শয়তান তোমার কাছে আসতে পারবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ২৩১১)
সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া কোনো ব্যক্তি ঘুমানোর আগে এ দুই আয়াত পড়লে তা তাদের গোটা রাতের নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট হবে। রাসুল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, যদি কোনো ব্যক্তি সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করে, তবে এটিই তার জন্য যথেষ্ট। (বুখারি, হাদিস : ৫০৪০)
সুরা মুলক পড়া রাসুল (ﷺ) বলেছেন, কোরআনের মধ্যে ৩০ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে তাকে মাফ করে দেওয়া হয়। সুরাটি হলো তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক)। (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯১)
রাসুল (ﷺ) এই সুরা না পড়ে কখনো ঘুমাতে যেতেন না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯২)
বিছানা ঝেড়ে নেওয়া
নবী করিম (ﷺ) বলেন, ‘যদি তোমাদের কেউ শয্যায় যায়, তখন সে যেন তার লুঙ্গির দ্বারা বিছানাটা ঝেড়ে নেয়। কারণ সে জানে না যে বিছানার ওপর তার অনুপস্থিতিতে পীড়াদায়ক কোনো কিছু আছে কি না। তারপর এই দোয়া পড়বে—হে আমার রব! আপনারই নামে আমার শরীরটা বিছানায় রাখলাম এবং আপনারই নামে আবার উঠব।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩২০)
চোখে সুরমা লাগানো
ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, নবী (ﷺ)-এর একটি সুরমাদানি ছিল। প্রতি রাতে (ঘুমানোর আগে) তিনি ডান চোখে তিনবার এবং বাঁ চোখে তিনবার সুরমা লাগাতেন। (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস : ৪১)
অন্যান্য করণীয় কাজ
জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘তোমরা রাতে পানাহারের পাত্রগুলো ঢেকে রেখো। ঘরের দরজাগুলো বন্ধ রেখো। আর সাঁঝের বেলা তোমাদের বাচ্চাদের ঘরে আটকে রেখো, কারণ এ সময় জিনেরা ছড়িয়ে পড়ে এবং কোনো কিছুকে দ্রুত পাকড়াও করে। নিদ্রাকালে বাতিগুলো নিভিয়ে দেবে। কেননা অনেক সময় ছোট ক্ষতিকারক ইঁদুর প্রজ্বালিত সলতেযুক্ত বাতি টেনে নিয়ে যায় এবং গৃহবাসীকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেয়।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৩১৬)
ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (ﷺ) কোনো ঘরে একাকী রাত যাপন ও একাকী সফর করতে নিষেধ করেছেন।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৫৬৫০)
খোলা আকাশের নিচে না ঘুমানো অনুরূপ ছাদেও ঘুমানো যাবে না। নবী করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি বেষ্টনীবিহীন ছাদে রাতে ঘুমাল, (কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে) তার সম্পর্কে (আল্লাহর) কোনো জিম্মাদারি নেই।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৪১)





Users Today : 310
Users Yesterday : 767
This Month : 14732
This Year : 186603
Total Users : 302466
Views Today : 30089
Total views : 3606832