জিজ্ঞাসা–৮৯:আসসালামু আলাইকুম। আমার জানার বিষয় হচ্ছে যে, গর্ভবতী মহিলাদের নামাজের সময়ের ব্যাপারে কোন শীথিলতা আছে কি না? বিশেষ করে ফজর নামাজের সময়। যেহেতু সকাল বেলায় তারা বেশি অসুস্থ্ থাকে, সেহেতু তারা সকালের নামাজ দেরিতে পড়তে পারবে কিনা? ডাক্তারের পরামর্শ দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা।—আব্দুল মাতিন: nisarkar@gmail.com
জবাব: وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, মনে রাখবেন, কোনভাবেই নামাজের নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত করা বৈধ নয়। কেননা আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا
“নিশ্চয় নিদিষ্ট সময়ে ছালাত আদায় করা মুমিনদের উপর ফরয করা হয়েছে।” (সূরা নিসা- ১০৩)
অনুরূপভাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি নামাজের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সুতরাং ঐ সময়ে আদায় করাটাই ওয়াজিব। ফজর-নামাজের ব্যপ্তিকাল সুবহে সাদিক হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত। সুতরাং এই সময়ের ভেতরেই আদায় করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো প্রকারের শীথিলতার অনুমোদন এমনকি গর্ভবতী মহিলাদের জন্যও নেই।
হ্যাঁ, শিশু গর্ভে থাকা অবস্থায় একজন মায়ের ও শিশুর শরীর-স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য ঘুম অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। গর্ভাবস্থায় রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে স্বাস্থ্যহানী ঘটে। কিন্তু তাই বলে এই অজুুহাতে ফজর-নামাজ সময় মত আদায়ের ব্যাপারে অবহেলা প্রদর্শনেরও কোনো অবকাশ নেই। কারণ আশঙ্কা আছে, উক্ত ‘অজুুহাত’ তাকে এই আয়াতের প্রতিবাদ্য-পরিণতিতে নিপতিত করবে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا“অতঃপর তাদের পরে আসল এমন এক অসৎ বংশধর যারা নামাজ বিনষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং তারা অচিরেই জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে।” (সূরা মারয়াম, আয়াত: ৫৯)
অতএব, ‘অজুুহাত’ নয়; বরং এই অবস্থায় যা করার পরামর্শ দিব তাহল,
প্রথমত, গর্ভবতী-মায়ের মনোবল দৃঢ় করতে হবে,’আমি অবশ্যই ফজরের নামাজ আদায় করবো।’
দ্বিতীয়ত, গর্ভবতী-মাকে ইশার নামাজ সময়ের শুরুতে পড়ে নিতে হবে। তারপর প্রয়োজনীয় কাজ সেরে যত দ্রুত সম্ভব ঘুমিয়ে পড়তে হবে। দেরি করে ঘুমোতে যাওয়া যাবে না। অন্তত এতটা আগে রাতের বিছানায় যেতে হবে যাতে করে কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিন্তে যাওয়া যায় এবং ফজর যথাসময় পড়া যায়।
তৃতীয়ত, প্রতিদিন দুপুরের খাবারের পর আসর পর্যন্ত ঘুুমোতে হবে। এতে ‘কাইলুলাহ্’র সুুন্নাত আদায় হবে। স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।
চতুর্থত, গর্ভাবস্থায় যে ব্যাপারটি পরিবারের সকলকে মনে রাখতে হবে, সেটি হল, গর্ভবতী মায়ের এবং তার ভেতরে বেড়ে ওঠা শিশুর যত্ন নেয়া সকলেরই কর্তব্য। সুুতরাং তার শারীরিক-মানসিক সুুস্থতার প্রতি যত্নশীল-দৃষ্টি পরিবারের সকলকে বিশেষত স্বামীকে সবসময় রাখতে হবে। এতে গর্ভবতী মা যেমন সুস্থ থাকবে, সুস্থ থাকবে তার সন্তানও।
মনে রাখবেন, সুস্থ-সন্তান যেমন অবশ্য-কাম্য, অনুরূপভাবে সন্তান নেক হওয়াও অপরিহার্য-কাম্য। আর এটাতো জানা কথা যে, গর্ভবতী মায়ের চাল-চলন ও গতিবিধির বিস্তর প্রভাব সন্তানের ওপর পড়ে। সুতরাং গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ইবাদত নয়; বরং গোনাহ ছেড়ে দেয়ার ফিকির অধিক করাটাই হবে বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। এতে গর্ভবতী মা যেমন মহান আল্লাহর কাছে প্রিয় হয়ে ওঠবে, অনুুরূপভাবে তার ভেতরে বেড়ে ওঠা সন্তানও ‘নেক’ হবে। ইনশাআল্লাহ্।
পরিশেষে একটি হাদীস পেশ করছি–
ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩٍ ﻗَﺎﻝَ ﻗُﻠْﺖُ ﻳَﺎ ﻧَﺒِﻲَّ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻱُّ ﺍﻟْﺄَﻋْﻤَﺎﻝِ ﺃَﻗْﺮَﺏُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓُ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﻮَﺍﻗِﻴﺘِﻬَﺎ
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ! কোন আমল জান্নাতের অতি নিকটবর্তী? তিনি বললেন, সময় মত নামাজ আদায় করা। (সহীহ মুসলিম : ২৬৩)
والله اعلم بالصواب
উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী





Users Today : 375
Users Yesterday : 767
This Month : 14797
This Year : 186668
Total Users : 302531
Views Today : 39376
Total views : 3616119