*কুর’আনে উদ্ধৃত ‘আহলে বাইত’ শব্দের ব্যবহার (পোষ্ট-২)*

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

মূল: আ’ল ও আসহা’ব (রা.)-বৃন্দের পক্ষে জবাব শীর্ষক ওয়েবসাইট

বঙ্গানুবাদক: এডমিন

উদাহরণ-৫:

قَالَتْ يَٰوَيْلَتَىٰ ءَأَلِدُ وَأَنَاْ عَجُوزٌ وَهَـٰذَا بَعْلِي شَيْخاً إِنَّ هَـٰذَا لَشَيْءٌ عَجِيبٌ قَالُوۤاْ أَتَعْجَبِينَ مِنْ أَمْرِ ٱللَّهِ رَحْمَتُ ٱللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ ٱلْبَيْتِ إِنَّهُ حَمِيدٌ مَّجِيدٌ.

অর্থ: সে বল্লো, ‘হায় রে দুঃখ! আমার কী সন্তান হবে! এবং (আমি) হলাম বৃদ্ধা। আর এ আমার স্বামী বৃদ্ধ। নিঃসন্দেহে এটা তো অদ্ভুত ব্যাপার।’ ফিরিশতাবৃন্দ বল্লো, ‘আল্লাহর কাজে কি তুমি বিস্ময়বোধ করছো? আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকতসমূহ তোমাদের প্রতি রয়েছে, ওহে এই পরিবারবর্গ (আহলে বাইত), নিঃসন্দেহে তিনিই সমস্ত প্রশংসার মালিক, সম্মানের অধিকারী।’ [কুর’আন ১১/৭২-৭৩; নূরুল ইরফান]

এই আয়াতেও হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস্ সালাম)-এর স্ত্রীকে আহলে বাইত বলে সম্বোধন করা হয়েছে। আর তাঁকে তা সম্বোধন করা হয়েছে হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস্ সালাম)-এর স্ত্রী হওয়ার কারণেই, যেমনটি খোদ কুর’আন মজীদের অপর একটি সুরাহতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে:

فَرَاغَ إِلَىٰ أَهْلِهِ فَجَآءَ بِعِجْلٍ سَمِينٍ.

অর্থ: অতঃপর চুপচাপ আপন স্ত্রীর (আহলিহি) কাছে গেলো, তারপর এক মোটাতাজা গো-বৎস নিয়ে তার মেহমানদের কাছে ফিরে এলো। [শিয়াপন্থী অনুবাদক সারওয়ার, কুর’আন, ৫১/২৬]

কিন্তু কিছু বিপথগামী লোক আছে যারা এটা বুঝতে ব্যর্থ হয় এবং তারা এই সরল আয়াতগুলোর ভুল, দুরূহ এবং মনগড়া ব্যাখ্যা দেয়। তারা বলে, তাঁকে (বিবি সারাহকে) ওপরের আয়াতটিতে আহলুল বাইত হিসেবে ফেরেশতাবৃন্দ উল্লেখ করেছেন (পুত্র) পয়গাম্বর ইসহাক (আলাইহিস্ সালাম) গর্ভে আসার সুসংবাদ পাওয়ার পরপরই।

প্রথমতঃ কুর’আনে কোথাও বলা হয়নি যে তিনি গর্ভবতী ছিলেন; কেবল তাঁকে একজন সন্তানের জন্মের সুসংবাদই দেওয়া হয়েছিলো মাত্র। তাছাড়া, একই আয়াতের মধ্যে একজন নাতির সুসংবাদও দেয়া হয়েছিলো। এমন কী পৃথিবীর সবচেয়ে বোকা কোনো শিয়াও দাবি করবে না যে কেউ ওই একই সময়ে নাতিকেও গর্ভে ধরতে পারে, নাতির এই সুসংবাদের কারণে। একইভাবে, যখন বিবি মরিয়ম (‘আলাইহাস্ সালাম)-কে পয়গাম্বর ঈসা (‘আলাইহিস্ সালাম)-এর গর্ভে আসার সুসংবাদ দেয়া হয়েছিলো তখন তিনি গর্ভবতী ছিলেন না [রেফারেন্স: ৩/৪৫, ১৯/১৯-২০ ইত্যাদি]।

দ্বিতীয়তঃ কুর’আনের ১১/৭১ আয়াতে ব্যবহৃত আরবী শব্দটি হচ্ছে – ضحكت – (দ্বহিকাত)। তবে শিয়া পণ্ডিতদের একটি বড় অংশ এর অর্থ – حاضت – তথা মাসিক (ঋতুস্রাব) হয় বলে ব্যাখ্যা করেছেন।

উদাহরণস্বরূপ, তাদের পণ্ডিত আল-ফায়েদ আল-কাশানী (শিয়াদের মতে, তাঁর যুগের বিশিষ্ট পণ্ডিত) নিজ তাফসীরে বলেছেন: আল-আয়াশী ব্যক্ত করেন আস-সাদিক আলাইহিস্ সালামের (তরীক বা সূত্রে) এ মর্মে যে, দ্বহিকাত মানে হা’যত (তাঁর ঋতুস্রাব হয়), যা ঠিক আল-কুমীর মতো একই ভাষ্য, যিনি আরো বলেছেন যে অনেক সময় আগে থেকেই তাঁর মাসিক হয়নি।

আল-কুমী বলেন: দ্বহিকাত অর্থ হা’যত (তাঁর ঋতুস্রাব হয়); এবং এটা (অর্থাৎ তাঁর মাসিক চক্র) অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো (অর্থাৎ সে সময়ে ঋতুস্রাব হওয়ার আগে দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর মাসিক হয়নি)।

শিয়াদের কিতাবে (কথিত) সহীহ ইসনাদ-সহ আরেকটি হাদীস্ রয়েছে, যা’তে এ বিষয়ে বলা হয়েছে।

في كتاب معاني الأخبار أبي رحمه الله قال: حدثنا سعد بن عبد الله عن يعقوب بن يزيد عن ابن أبي عمير عن عبد الرحمن بن الحجاج عن ابى عبد الله عليه السلام في قول الله عز و جل: «فضحكت فبشرناها بإسحاق» قال: حاضت.

আস্ সাদূক্ব প্রণীত ‘মা’আনীউল আখবার’গ্রন্থে (কথিত) সহীহ হাদীসে আমাদের বলা হয়েছে যে এই ব্যাখ্যা ( মানে তাঁর মাসিক হয়েছিলো) মাসূম/নির্ভুল ইমামবৃন্দের একজন কর্তৃক সহীহভাবে বর্ণিত হয়েছে।

অতএব, এ (কথিত) হাদীসে প্রকৃতপক্ষে বলা হয়েছে যে এবারের আগে তাঁর দীর্ঘকাল যাবৎ মাসিক (ঋতুস্রাব) হয়নি, যেমনটি আল-কুমী ওপরে উল্লেখিত তাঁর বক্তব্যে প্রতিপাদন করেছেন। এর অর্থ পয়গাম্বর ইবরাহীম আলাইহিস্ সালামের বিবি সাহেবা ওই সময় গর্ভবতী ছিলেন না। কোনো গর্ভবতী মহিলার মাসিক হয় না। এরই ভিত্তিতে আমার প্রশ্ন হলো: এই পণ্ডিতবর্গ এবং আস্-সাদিক (তাদের মতে যিনি নির্দোষ/মা’সূম) প্রমুখের মতানুযায়ী, এবং তাঁরা যে উপলব্ধি তুলে ধরেছেন সেই অনুসারে, বিবি সারাহকে কেন আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত করা হবে যদি সে সময় তিনি গর্ভবতী না হয়ে থাকেন?

উপরন্তু, একটি শিয়া তাফসীরগ্রন্থে এমন কী সেসব শিয়ার এই ভুল বোঝাবুঝির খণ্ডনও করা হয়েছে, যারা যুক্তি দেখায় যে হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস্ সালাম)-এর স্ত্রীকে নবী (আ.)-দের মা হওয়ার কারণে আহলে বাইত বলা হয়েছিলো।

প্রশ্ন: উপরোক্ত আয়াতে (১১:৭৩) বিষয়টি বিবেচনা করে ফেরেশতাবৃন্দ পয়গাম্বর ইব্রাহীম (আলাইহিস্ সালাম)-এর স্ত্রীকে ‘আহলে বাইত’ বাক্য ব্যবহার করে সম্বোধন করেছেন এবং যেহেতু স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যেকের স্ত্রীকে তাঁর পরিবারের অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে কেন এমনটি হলো যে সূরাহ আল-আহযাবে ব্যক্ত তাতহীরের আয়াতটিতে [৩৩/৩৩; নোট: শিয়াদের অপযুক্তির ১ নং খণ্ডনে বিস্তারিত] প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদেরকে তাঁর পরিবারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি?

জবাব: “শব্দের শুধুমাত্র আভিধানিক অর্থের ক্ষেত্রে ‘আহলে বাইত’ শব্দটিতে কারো স্ত্রীর উল্লেখ থাকাই স্বাভাবিক।” [পবিত্র কুর’আনের জ্যোতি/Light of the Holy Qur’an; আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ কামাল ফাগিহ ঈমানী ও এক দল শিয়া মুসলিম পণ্ডিত কৃত কুর’আনের তাফসীর, ৭ম খণ্ড, ৭ম অধ্যায়, ‘লূত (আলাইহিস্ সালাম)-এর নবূয়্যত’ শিরোনামের অধীন, পৃষ্ঠা ২৭৬]

সুতরাং এই শিয়া তাফসীরগ্রন্থটি একমত যে কুর’আনের ১১:৭৩ আয়াতে ওই মহিলাকে ‘আহলে বাইত’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস্ সালাম)-এর স্ত্রী হওয়ার কারণেই।

উপরন্তু, কুর’আনের আরেকটি আয়াত শিয়াদের এই দাবিকে খণ্ডন করেছে এ কারণে যে হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস্ সালাম)-এর স্ত্রীকে সন্তান জন্মের সুসংবাদ দেয়ার আগেও “আহলি” বলা হয়েছিলো:

فَرَاغَ إِلَىٰ أَهْلِهِ فَجَآءَ بِعِجْلٍ سَمِينٍ.

অর্থ: অতঃপর চুপচাপ আপন স্ত্রীর (আহলিহি) কাছে গেলো, তারপর এক মোটাতাজা গো-বৎস নিয়ে তার মেহমানদের কাছে ফিরে এলো। [শিয়াপন্থী অনুবাদক সারওয়ার, কুর’আন, ৫১/২৬]

وَلَقَدْ صَرَّفْنَا لِلنَّاسِ فِي هَـٰذَا ٱلْقُرْآنِ مِن كُلِّ مَثَلٍ فَأَبَىٰ أَكْثَرُ ٱلنَّاسِ إِلاَّ كُفُوراً.

অর্থ: এবং নিশ্চয় আমি মানুষের জন্যে এ কুর’আনের মধ্যে প্রত্যেক প্রকারের উপমা বিভিন্নভাবে বর্ণনা করেছি। অতঃপর অধিকাংশ মানুষ অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ছাড়া অন্য কিছু মানলো না। [আল-কুর’আন, ১৭/৮৯; নূরুল ইরফান]

উদাহরণ-৬:

আল্লাহ ঘোষণা করেন –

يٰنِسَآءَ ٱلنَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ ٱلنِّسَآءِ إِنِ ٱتَّقَيْتُنَّ فَلاَ تَخْضَعْنَ بِٱلْقَوْلِ فَيَطْمَعَ ٱلَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلاً مَّعْرُوفاً وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلاَ تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ ٱلْجَاهِلِيَّةِ ٱلأُولَىٰ وَأَقِمْنَ ٱلصَّلاَةَ وَآتِينَ ٱلزَّكَـاةَ وَأَطِعْنَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُـمُ ٱلرِّجْسَ أَهْلَ ٱلْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيـراً.

অর্থ: হে নবী (দ.)-এর স্ত্রীবৃন্দ! তোমরা অন্যান্য নারীর মতো নও, যদি আল্লাহকে ভয় করো তাহলে কথায় এমন কোমলতা অবলম্বন কোরো না যেনো অন্তরের রোগী কিছু লোভ করে; হ্যাঁ, ভালো কথা বলো। আর নিজেদের গৃহসমূহে অবস্থান করো এবং বে-পর্দা থেকো না যেমনটি পূর্ববর্তী যুগের পর্দাহীনতা; আর নামায কায়েম রাখো, যাকাত দাও এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্য করো। হে নবীর পরিবারবর্গ (আহলে বাইত) – আল্লাহ তো এটাই চান যে, তোমাদের থেকে প্রত্যেক অপবিত্রতা দূরীভূত করে দেবেন এবং তোমাদেরকে পবিত্র করে অতীব পরিচ্ছন্ন (তাতহীর) করে দেবেন। [আল-কুর’আন, ৩৩/৩২-৩৩; নূরুল ইরফান]

সবশেষে, উপরোক্ত আয়াতগুলোতে স্ত্রীদেরকেই বিশেষভাবে ‘আহলে বাইত’ নামে ডাকা হয়েছে মর্মে বিষয়টি নির্ধারণ করার পর আমরা আবারো একই জিনিস দেখতে পাই যে কুর’আন ৩৩:৩২-৩৩ আয়াতেও নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদেরকে ‘আহলে বাইত’ বলা হয়েছে। অতএব, আমাদের ইতিপূর্বে প্রদর্শিত কুর’আনী সার্বিক উদাহরণগুলো হতে অনন্য কিছু আমরা এতে পাই না।

শিয়াদের কিছু অপযুক্তির জবাব:

অপযুক্তি-১:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ১১ জন স্ত্রী ছিলেন। একেক স্ত্রী একেক বাড়িতে থাকতেন। অতএব, যদি ‘তাতহীরের’ (৩৩/৩৩) আয়াতটি তাঁর সমস্ত স্ত্রীকে নির্দেশ করে থাকে, তবে এতে আহলুল বাইত/أهل البيت (গৃহের মানুষেরা) (একবচন/الْمُفْرَدُ) না বলে আহলুল বুয়ূত/أهل البيوت (গৃহসমূহের মানুষেরা) (বহুবচন/الْجَمْعُ) বলা উচিত ছিলো।

জবাব:

প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদের এখানে ‘পরিবারের সদস্য’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, কোন্ পরিবার তার সংজ্ঞা না দিয়েই। কিন্তু এটা নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারকে বোঝায়, স্ত্রীদের পরিবারকে নয়। সুতরাং যেহেতু এটা নবী পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি)-এর পরিবার, তাই এটা আহলুল বাইত (একবচন) হওয়া উচিত, আহলুল্ বুয়ূত (বহুবচন) নয়। আর তাঁর স্ত্রীবৃন্দসহ সকল সদস্য, আহলে কিসা এবং যাঁদের উপর সাদাকা হারাম, তাঁরা সকলেই আহলে বাইতের অধীন, কেননা এটা নবীয়ে আকরাম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারকেই নির্দেশ করে – যদিও অন্যান্য সদস্যবৃন্দ বিভিন্ন বাড়িতে বসবাস করে থাকেন। অধিকন্তু, আমরা এমন একটি সুস্পষ্ট হাদীস্ পাই যেখানে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদেরকে আহলুল-বাইত বলা হতো, যদিও তাঁরা বিভিন্ন বাড়িতে বসবাস করতেন।

وحدثنا زهير بن حرب وإسحاق بن إبراهيم. كلاهما عن جرير. قال زهير: حدثنا جرير عن منصور، عن إبراهيم. قال: قلت للأسود: هل سألت أم المؤمنين عما يكره أن ينتبذ فيه؟ قال: نعم. قلت: يا أم المؤمنين! أخبريني عما نهى عنه رسول الله صلى الله عليه وسلم أن ينتبذ فيه. قالت: نهانا، أهل البيت، أن ننتبذ في الدباء والمزفت.

অর্থ: ইব্রাহীম (রা.) বর্ণনা করেছেন: আমি আসওয়াদ (রা.)-কে বল্লাম তিনি মু’মিনদের মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন কিনা (কোন্ পাত্রে) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নাবীয/মদ প্রস্তুত অপছন্দ করেছেন। তিনি (আসওয়াদ) বললেন: হ্যাঁ; আমি জিজ্ঞেস করলাম: মু’মিনদের মা, আমাকে সেসব পাত্র সম্পর্কে অবহিত করুন যেগুলোতে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাবীয প্রস্তুত করতে নিষেধ করেছেন। তিনি (হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) (উত্তরে) বল্লেন: তিনি আমাদেরকে মানে তাঁর পরিবারের সদস্যদের [আহলুল বাইতকে] লাউ বা বার্নিশ করা পাত্রে নাবীয প্রস্তুত করতে নিষেধ করেছিলেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করি: আপনার কি মনে আছে সবুজ কলস, এবং (অন্য) কলস? তিনি (উত্তরে) বলেন: আমি যা শুনেছি তা তোমাকে বর্ণনা করলাম। আমি কি তোমাকে তা বর্ণনা করবো যা আমি শুনিনি? [সহীহ মুসলিম, কিতাব-২৩, আন্তর্জাতিক নম্বর-৪৯১৮]

মন্তব্য: ওপরের হাদীসে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীবৃন্দকে আহলুল বাইত (রা.) বলা হয়েছে, যদিও তাঁরা আলাদা আলাদা গৃহে বসবাস করতেন। এটা এ কারণে যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক তাঁর সকল স্ত্রীর প্রতিই নিষেধাজ্ঞাটি দেয়া হয়েছিলো।

এ রকম আরেকটি উদাহরণ হলো যায়দ ইবনে আরকাম (রা.)-এর বর্ণিত হাদীসটি (সহীহ মুসলিম, কিতাব-৩১, হাদীস নং-৫৯২০) যা’তে তিনি বলেছেন সাদাকা গ্রহণ যাঁদের জন্যে হারাম তাঁরা আহলে বাইত (রা.), যদিও তাঁরা আলাদা আলাদা গৃহে বসবাস করেন। তিনি (রা.) এ কথা বলেননি তাঁরা আহলে বুয়ূত (গৃহসমূহের মানুষ)।

হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর আহল/মানুষেরা একটি পরিবার, আর তাই তাঁরা সবাই আহলু-বাইতিন্। যদি বলা হয় “আহলু-বুয়ূতিন,” তাহলে এটা অনেকগুলো পরিবারকে বোঝাবে।

إِنَّا كُنَّا أَهْلَ بُيُوتٍ، وَكُنَّا إِنَّمَا نَأْتِي رَسُولَ اللَّهِ ﷺ

মুসতাদরাক আল-হাকিম গ্রন্থে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা) এক ব্যক্তিকে বলেন:

إِنَّ آلَ مُحَمَّدٍ كَذَا وَكَذَا أَهْلَ بَيْتٍ وَأَظُنُّهُ قَالَ تِسْعَةَ أَبْيَاتٍ مَا فِيهِمْ صَاعٌ مِنْ طَعَامٍ.

অর্থ: [মুহাম্মদের আ‘ল (পরিবার) হলো এই এবং এই আহলু-বাইতিন, – আমি মনে করি তিনি নয়টি আবইয়াতের (গৃহের) কথা উল্লেখ করেন – সেগুলোর কোনোটিতেই এক সা’আ পরিমাণেও খাবার নেই।]

মন্তব্য: এর মানে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আহলুল বাইত/পরিবারবৃন্দ ছিলেন নয়টি গৃহে (বসবাসরত), যা দরিদ্র।

প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবার একটি পরিবার, তবে তা তাঁর স্ত্রী/পরিবারের জন্য নয়টি গৃহ নিয়ে গঠিত। এই উদাহরণগুলো এবং এগুলোর মতো আরো অনেকগুলো উদাহরণ প্রমাণ করে যে আহলুল বাইত বাক্যটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারের সম্পর্কে ব্যবহৃত হয়েছিলো এবং এতে এমন কী বিভিন্ন বাড়িতে বসবাসকারীরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। আহলুল বাইত হলেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবার, তাঁর একটিই পরিবার, একাধিক পরিবার নয়। আহলুল্ বাইত হলেন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবার। আমরা আরবীতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারকে ‘পরিবারসমূহ’ (জম’আ বা বহুবচনে) বলি না। এটা শুধুমাত্র একটা পরিবার, প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবার। এটা তাঁর মালিকানাধীন বাড়ির সংখ্যার সাথে যুক্ত নয়। আমরা জানি, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইমামে আলী (কার্রামাল্লাহু ওয়াজহাহু) এবং হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-এর সাথে একই বাড়িতে থাকতেন না।

দ্বিতীয়তঃ শিয়াদের বারো ইমাম (রহ.) ভিন্ন ভিন্ন গৃহে বসবাস করতেন এবং হযরতে ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা)-এর একই বাড়িতে বসবাস করতেন না। তাই যদি এখানে শিয়াদের ত্রুটিপূর্ণ যুক্তি প্রয়োগ করা হয়, তাহলে এটা অনেক শিয়া ইমামকেও আহলুল্ বাইত থেকে বাদ দেবে। অতএব, হয় শিয়াদের উচিত তাদের ভুল বোঝাবুঝি সংশোধন করা, নতুবা তাদের ইমামদেরকেও আহলুল্ বাইত থেকে বাদ দেয়া।

অপযুক্তি-২:

পাল্টা যুক্তি – يٰأَيُّهَا ٱلَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَدْخُلُواْ بُيُوتَ ٱلنَّبِيِّ إِلاَّ أَن يُؤْذَنَ لَكُمْ إِلَىٰ طَعَامٍ غَيْرَ نَاظِرِينَ إِنَاهُ – অর্থ: হে ঈমানদার সকল! নবীর গৃহসমূহে হাজির হয়ো না যতোক্ষণ না অনুমতি পাও, যেমন – খানার জন্য আমন্ত্রিত হও, না এভাবে যে তোমরা নিজেরা তা রান্না হবার জন্য (দীর্ঘক্ষণ) অপেক্ষায় থাকবে। [শিয়াপন্থী অনুবাদক শাকির, আল-কুর’আন, ৩৩/৩৫; সুন্নী নূরুল ইরফান তাফসীরেরই অনুরূপ]

জবাব:

এখানে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ‘গৃহসমূহ’ (বিশেষ্য/إسم) উল্লেখিত হয়েছে; তাই এটাকে বহুবচনে (الْجَمْعُ) হতে হবে। অথচ কুর’আনের ৩৩/৩৩ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গৃহের মানুষদের (সমষ্টিবাচক বিশেষ্য/إسْم الجَمْع)। তাই এটাকে একবচনে (الْمُفْرَدُ) হতে হবে। কেননা প্রথমোক্ত ক্ষেত্রে উল্লেখিত হচ্ছে গৃহসমূহ, অথচ দ্বিতীয় ক্ষেত্রে (কুর’আন ৩৩/৩৩) হলেন (একটি গৃহের) সদস্যবৃন্দ (أهل) যা বহুবচন (الْجَمْعُ)।

এ রকম আরেকটি উদাহরণ হলো যায়দ ইবনে আরকাম (রা.)-এর বর্ণিত হাদীসটি (সহীহ মুসলিম, কিতাব-৩১, হাদীস নং-৫৯২০) যা’তে তিনি বলেছেন সাদাকা গ্রহণ যাঁদের জন্যে হারাম তাঁরা আহলে বাইত (রা.), যদিও তাঁরা আলাদা আলাদা গৃহে বসবাস করেন। তিনি (রা.) এ কথা বলেননি তাঁরা আহলে বুয়ূত (গৃহসমূহের মানুষ)…তিনি এ সকল সদস্যদের জন্য আহলে বাইত শব্দটি উচ্চারণ করেন যাঁরা বিভিন্ন বাড়িতে বসবাস করতেন।

(চলবে)

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment