আকাইদে নিজামিয়্যাহ (পর্ব – ১-৩)
(ফিকহে আকবার গ্রন্থের অনুবাদ)
মূল : শাইখ ফখরুদ্দিন রহিমাহুল্লাহ
ভাষান্তর : সুলতান সাঈদ
আকিদা : ১
তাওহিদের ভিত্তি ও যা দ্বারা বিশ্বাস বিশুদ্ধ হয় তা এই, যে, সাক্ষ্য অন্তর থেকে এভাবে দেয়া,
(১) আমি ইমান আনলাম আল্লাহ তাআলাকে সত্ত্বায় একক জেনে। এবং, গুণাবলীতেও অদ্বিতীয় মেনে নিয়ে।(২) আর, আমি ফিরিশতাগণের প্রতি ইমান আনলাম, যে, তারা আল্লাহ তাআলার বান্দা। এবং, গুনাহ ও নাফরমানি থেকেও মুক্ত এমনকি পুরুষ কিংবা মহিলা হওয়া থেকেও পবিত্র।
(৩) অতঃপর, আমি ইমান আনলাম আল্লাহ তাআলার কিতাবসমূহের প্রতি। যেমন, তাওরাত, ইনজিল, যবুর ও কুরআনমজিদ ইত্যাদি যেগুলোর সংখ্যা বর্ণিত নেই।
(৪) এবং, আমি ইমান আনলাম সমস্ত নবি ও রসুলের প্রতি।
(৫) তারপর, ইমান আনলাম মৃত্যুর পরে জীবিত হওয়ার প্রতি।
(৬) এবং, ইমান আনলাম পরকালের প্রতি।
(৭) আর, ইমান আনলাম আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে কল্যাণ ও অকল্যাণের অনুমান করানোর প্রতি অর্থাৎ সমস্ত সৃষ্টির এরকম স্তরে পৌঁছানো, যারমধ্যে স্থান ও সময়ের বাধ্যতার সাথে ভালো ও মন্দ এবং লাভ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আকিদা : ২
কৃতকর্মের হিসাব, আমলের পরিমাণ স্থির, বেহেশত, দোজখ, পুলসিরাত এবং হাউজে কাওসার চিরসত্য।
আকিদা : ৩
আল্লাহ তাআলা এক। (তিনি) এমন নন, যে, গণনার মত তাঁর পরে দ্বিতীয় প্রকাশ পাবে অর্থাৎ তাঁর কোনো অংশীদার নেই। না সত্ত্বায়, না গুণাবলীতেও।
আকিদা : ৪
সৃষ্টির সাথে তাঁর কোনো সাদৃশ্য নেই। নাঈম বিন হাম্মাদ বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলাকে তাঁর সৃষ্টির কারো সাথে সাদৃশ্য করবে অথবা, তাঁর সৃষ্ট কোনো জিনিসের সাথে তুলনা দিবে, তাহলে নিশ্চিত, সে কুফর করেছে।
আকিদা : ৫
(আল্লাহ তাআলা) অতিবাহিত হওয়া সময়ে সদাসর্বদা ছিলেন। এবং, পরবর্তীতেও চিরদিন থাকবেন স্বীয় নামের সাথে আর স্বীয় সত্তা ও গুণবাচক কার্যাদির সাথেও।
আর, তাঁর নিজস্ব গুণসমূহ ৭টি। যথা :
(১) সিফাতে হায়াত। অর্থাৎ, জীবিত থাকার গুণ।
(২) সিফাতে কুদরত। মানে, শক্তিধর হওয়ার গুণ।
(৩) সিফাতে ইলম। এর অর্থ, জ্ঞাত হওয়ার ক্ষমতা।
(৪) সিফাতে কালাম। অর্থাৎ, বাকশক্তির গুণসম্পন্ন হওয়ার শক্তি।
(৫) সিফাতে সামা’। মানে, শ্রবণ করার ক্ষমতা।
(৬) সিফাতে বাসর। এর মানে, দর্শন করার গুণ। আর,
(৭) সিফাতে ইরাদাত তথা প্রতিজ্ঞা ও ইচ্ছা করার ক্ষমতা।
এবং, তাঁর কর্মশক্তি :
(১) তাখলিক। অর্থাৎ, সৃষ্টি করা।
(২) তারযিক। মানে, রিজিক দেয়া।
(৩) ইনশা। মানে, রচনা করা। এর অর্থ, মূল থেকে তৈরি করা।
আবার, (৪) ইবদা’। অর্থাৎ, মূল ছাড়াই তৈরি করা।
আর, (৫) সুন’। এর মানে, কারিগরি ও তা ছাড়াও।
আকিদা : ৬
আল্লাহ তাআলার নাম ও গুণাবলী সবই অনাদি। অর্থাৎ, চিরকালীন। যার কোনো উৎস নেই। এবং, তা সীমাহীন। মানে, সর্বময়। যার কোনো সমাপ্তিও নেই।
আকিদা : ৭
আল্লাহ তাআলা সর্বজ্ঞ। অর্থাৎ, তিনি আপন সিফাতে ইলম দ্বারা জানেন। যা অনাদি। এবং, তিনি হচ্ছেন শক্তিশালী। মানে, তিনি আপন শক্তিতেই অনাদি শক্তিমান। এবং, তিনি বক্তা। অর্থাৎ, নিজস্ব বাকশক্তিতেই কথা বলেন। যা তাঁর সর্বময় সত্তার গুণ। তাঁর বাকশক্তির উৎপত্তি নেই। আর, তিনি হলেন খলিক। অর্থাৎ, স্রষ্টা। আপন তাখলিক তথা সৃষ্টি করার গুণ থেকেই। এবং, তিনি কর্তা। মানে, তিনি আপন কর্মশক্তির গুণ দ্বারা কার্যকারক। যা অনন্তই। এসব তাঁর অনাদি গুণ। অর্থাৎ, তিনি চিরদিনই জ্ঞানী, শক্তিশালী, স্রষ্টা, কর্তা ইত্যাদি।
আকিদা : ৮
যা রচিত হয়েছে, তা সৃষ্ট ও ক্ষণস্থায়ী। অর্থাৎ, প্রকৃত কর্তা আল্লাহ তাআলা যা করেছেন, তা অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে এসে রচিত হয়েছে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলার ক্রিয়ায় তা উদ্ভব হয়ে সৃষ্ট হয়েছে এবং প্রথমে ছিলনা, পরে অস্তিত্বে এসেছে। মোটকথা, তা উদ্ভাবিত হয়েছে। তবে, ক্রিয়া আল্লাহ তাআলার সৃষ্টি নয়। বরং, তাঁর চিরস্থায়ী গুণ। অর্থাৎ, তা অস্তিত্বহীন থেকে আলাদা। কারণ, অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আসা সৃষ্টি ও ক্ষণস্থায়ীর অবস্থা তাঁর জন্য নয়। পক্ষান্তরে, শুরু ও শেষ অস্তিত্বহীন। অর্থাৎ, না হওয়া থেকে তিনি পবিত্র। এবং, সদাসর্বদা অস্তিত্বেই রয়েছে। এ কারণে অসৃষ্ট ও চিরস্থায়ী।
আকিদা : ৯
মহান আল্লাহ তাআলার গুণাবলীর সবই চিরস্থায়ী। অস্থায়ী বা সৃষ্ট নয়। কাজেই, যে ব্যক্তি বলে, মহান আল্লাহ তাআলার গুণাবলী সৃষ্টি অথবা অস্থায়ী। কিংবা, এ মাসআলায় বিলম্ব করবে বা সন্দেহে তার সন্দেহ দুইদিকে বরাবর করবে হ্যাঁ ও না বলার মধ্যে অথবা সন্দেহের একদিকে প্রাধান্য দিবে অস্থায়িতার হ্যাঁ ও না বলায়, তাহলে সে কাফির।
আকিদা : ১০
কুরআন মাজিদ, এখানে উদ্দেশ্য আল্লাহর নিজের বাণী। যেমনটি মোল্লা আলি কারি রহিমাহুল্লাহ-এঁর শরহে ফিকহুল আকবারে রয়েছে। (কুরআন) -এর মর্যাদা সবকিছুর উর্ধ্বে। গ্রন্থ সমূহে হাত দ্বারা লেখা হয়েছে, বর্ণগুচ্ছের ধরণে, বাক্যের অবস্থায় ও অন্তর সমূহে সংরক্ষণ করা হয়েছে অদৃশ্য বিষয়াদির খেয়াল অনুসারে কিংবা অর্থ সমূহের ভাবনাযুক্ত শব্দে এবং ভাষা সমূহে পড়া যায়, এরকম ধ্যানধারণার শব্দাবলীর বর্ণের মাধ্যমে শ্রবণ করা যায়। এবং, নবি কারিম ﷺ -এঁর প্রতি ভিন্ন অবস্থা আর সময়ের একক ও মিশ্রিত ভাষার মাধ্যমে প্রকাশিত এবং অবতীর্ণ হয়েছে।
আকিদা : ১১
আমাদের উচ্চারণ অর্থাৎ শব্দ করে বলা কুরআনুল কারিম হচ্ছে সৃষ্টি। এমনকি আমাদের লেখা কুরআন মাজিদও আমাদের পাঠ বা আমাদের মুখস্থ করার মত। মোল্লা আলি কারি রহিমাহুল্লাহ-এঁর শরহে ফিকহুল আকবারে রয়েছে, ‘কুরআন শরিফ সৃষ্টি এজন্য, যে, বলা, লেখা ও পড়া এগুলো হচ্ছে বান্দার কাজ। আর, বান্দার কাজ তো সৃষ্টিই।
ভাষান্তর : সুলতান সাঈদ