বিবিধ কর্মকাণ্ড
========
* স্বীয় মা-বাবাকে ও পীর উস্তাদগণকে সালাম, কদমবুসির অভ্যাস করবেন এবং পীর উস্তাদের নিকট দোয়ার প্রার্থী হলে প্রথমে হাদিয়া পেশ করবেন তা মুস্তাহাব।
* এক মুসলমান অন্য মুসলমানের প্রথম সাক্ষাতে সালাম প্রদান করবেন কারণ তা সুন্নত।
* কোন দালানে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার সময় অথবা লিফ্ট উপরের দিকে উঠাকালে অথবা প্লেইন উপরের দিকে উঠার সময় অথবা কোন রাস্তায় চলাকালে উপর দিকে উঠার সময় ‘আল্লাহু আকবার’ পড়তে পড়তে উপরে উঠবেন এবং নিচের দিকে নামার সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ পড়তে পড়তে নামবেন এটা সুন্নত। (বুখারিশরীফ)
* সবসময় ‘পাছআনপাছ’ তথা শ্বাস,প্রশ্বাসে জিকির জারি রাখবেন। অর্থাৎ শ্বাস নিতে খেয়ালের সাথে ‘আল্লাহ’ এবং নিঃশ্বাস ছাড়তে খেয়ালের সাথে ‘হু’ পড়বেন। এ জিকির ২৪ ঘন্টা জারি রাখার অভ্যাস করবেন। এটা হলো মা’রিফাত যাত্রার প্রথম স্তর।
* পরনিন্দা ও পরচর্চা থেকে বিরত থাকবেন।
* সহিহ-শুদ্ধ করে নামায পড়ার নিমিত্তে কম পক্ষে সূরা ফাতিহা ও অন্য চারখানা সূরা শুদ্ধ করে তারতীলের সাথে শিখতে চেষ্টা করবেন।
* হালাল রোজগার অন্বেষণ করবেন এবং হারাম রোজগার থেকে বিরত থাকবেন।
* প্রত্যেহ অন্তত একবার শাজরাশরীফসহ দোয়া পাঠের অভ্যাস করবেন এবং কমপক্ষে দৈনিক ‘একশ এগারো’ বার দরূদশরীফ পাঠ ও একশতবার ইস্তেগফার এবং একশত বার ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যতা ইল্লা বিল্লাহ’ অভ্যাস করে নিবেন।
* জুমার দিনে খাস করে একশতবার দরূদশরীফ পাঠ ও একবার সূরা কাহাফ (১৫ পারা) পাঠ করবেন। এতে দুনিয়া আখেরাতে মঙ্গল নিহিত রয়েছে।
* সমতল বিছানায় খাওয়া দাওয়ার অভ্যাস করবেন। চেয়ার টেবিলে বসে খাবার গ্রহণকালে এক/দুই পা চেয়ারে উঠিয়ে খাবেন যাতে ইহুদি নাসারাদের অনুকরণ না হয়। জুতা পায়ে রেখে খাওয়া দাওয়া করা খেলাফে সুন্নত বিদআতে সাইয়িয়া। সুতরাং উভয় পা থেকে জুতা খুলে খাওয়া দাওয়া করা সুন্নতে হাসানা। অন্যথায় শক্ত গোনাহ হবে। (جمع الجوامع ‘জমউল জাওয়ামী ১/২৫৬ পৃষ্ঠা)
* মসজিদে প্রবেশ করে না বসে যদি সম্ভব হয় দুই রাকাত নফল নামায পড়ার অভ্যাস করবেন।
* পরিবারের সকলের সাথে ভাল ব্যবহার করবেন।
* মা-বাবার খেদমত করে দুনিয়া ও আখেরাতের উন্নতির আশায় থাকবেন।
* ছেলে-মেয়েদেরকে প্রথমে ইসলামী শিক্ষা দিবেন। মা-বোন পরিবার পরিজনকে পর্দার গুরুত্ব বুঝিয়ে পর্দার সাথে চলাফেরার অভ্যাস করবেন।
* ঘরে মূর্তি, পুতুল ও তাসবির রাখবেন না, কেননা এতে ঘরে রহমতের ফিরিশতা প্রবেশ করবে না।
* পুরুষের জন্য টাকনুর নিচে পায়জামা, লুঙ্গি পরিধান করলে হাদিসশরীফের ভাষ্য মোতাবেক জাহান্নামি হবে। এজন্য এ অবৈধ আমল পরিহার করতে হবে।
* পুরুষের জন্য দাড়ি চার আঙুল পরিমাণ লম্বা রাখতে হবে, অন্যথায় শক্ত গোনাহ হবে।
ইসমে আ’জম
========
দৈনিক একবার ইসমে আ’জম পাঠ করবেন। নিম্নলিখিত ইসমে আ’জমখানা আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী আলাইহির রহমত কর্তৃক লিখিত গাউসুল আ’জম সৈয়দ আব্দুল কাদির জিলানী আল হাসানী ও হোসাইনী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর জীবনীগ্রন্থ ‘নুজহাতুল খাতীরিল ফাতির ফি মানকিবে সৈয়দ শরীফ আব্দুল কাদির’ নামক কিতাবের ৪৯ পৃষ্ঠা (উর্দ্দু) লেখা রয়েছে,
اسم اعظم- اللهم انى اسئلك يا علم الامور الخفية و يا من السماء بقدرته منبة ويا من الارض بعزته مدحية ويا من الشمس والقمر بنور جلاله مشرقة مضية ويا مقبل على كل نفس مؤمنة زكية ويا مسكن رعب الخائفين واهل التقية ويا من حوائج الخلق عنده مقضية ويا من نجى يوسف من رق العبودية يا من ليس له بواب ينادى ولا حاجب يغشى ولا وزير العطى ولا غيره رب يدعى ولا يزداد على كثرة الحوائج الا كرما وجودا وصلى على محمد واله واعطنى سوالى انك على كل شئ قدير-
ভাবার্থ:- হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি। হে গুপ্ত কার্যাবলির মহাজ্ঞানী, হে পবিত্র সত্ত্বা! আপনার মহিমায় আকাশ স্থিতিশীল। হে পবিত্র সত্ত্বা! জমিনের অধিবাসীগণ আপনার মহত্ত্বের গুণগ্রাহী। হে পবিত্র সত্ত্বা! চন্দ্র-সূর্য আপনার নূরে উজ্জ্বল ও প্রদীপ্ত। হে সকল পবিত্র ও বিশুদ্ধ মু’মিন আত্মাসমূহের প্রার্থনা কবুলকারী। হে ভীরু ও মোত্তাকিদের উদ্বেগের প্রশান্তিদাতা। হে পবিত্র সত্ত্বা! সৃষ্টিকুলের প্রয়োজন আপনার নিকটই পূর্ণ হয়ে থাকে। হে পবিত্র সত্ত্বা! আপনি হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দান করেছেন। হে পবিত্র সত্ত্বা! যার কিছুই নেই আপনার কাছে প্রার্থনা করলে আপনি তার ভাগ্য মোচন করে দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ বান্দার ডাকে সাড়া দেয়া তার প্রয়োজন মিটাতে আল্লাহ তা’য়ালার কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় না। বান্দার প্রয়োজন মিটাতে কোন উজির বা অন্যের সহযোগিতা প্রয়োজন হয় না। আপনি এমন প্রতিপালক যাকে সর্বদা ডাকা হয়ে থাকে। কেবলমাত্র আপন দয়া ও বদান্যতার অধিক পরিমাণে সৃষ্টির প্রয়োজন আপনি পূরণ করতে থাকেন। হে আল্লাহ! আপনি হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর এবং তাঁর বংশধরগণের উপর রহমত তথা শান-মান মর্যাদা বৃদ্ধি করুন এবং আমার আবেদন মঞ্জুর করুন। নিশ্চয় আপনি প্রত্যেক কিছুর উপর ক্ষমতাবান।’
উপকারীতা: কথিত আছে,
১. এই দোয়া পাকপবিত্র অবস্থায় অনবরত পাঠ করলে দেহে মনে অসীম শক্তির সঞ্চার হয়।
২. এই দোয়া আমলকারী ব্যবসায়ীগণ অগাধ-ধনসম্পত্তির অধিকারী হন।
৩. প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় এই দোয়া সাতবার পাঠ করলে তার শত্রুগণ আপন হতে দুর্বল হয়ে যায় এবং তার মান-মর্যাদা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।
দোয়ায়ে না’দে আলী ও তার সনদ
================
নাদে আলীর সনদ ও অনুমোদন প্রসঙ্গে হযরত শাহ ওলি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ১১৭৬ হিজরি) ছিলেন উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ও তরিকতের সনদপ্রাপ্ত অন্যতম শায়খে কামিল বা বুজুর্গ। তিনি প্রচলিত যে সকল তরিকার সনদ ও ইজাজতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। এ সকল তরিকার সনদ ও ইজাজতের সবিস্তার বিবরণ রয়েছে তাঁর লিখিত ‘انتباه فى سلاسل اولياء الله’ ইনতেবাহ ফি সালাছিলে আউলিয়াল্লাহ’ নামক প্রসিদ্ধ গ্রন্থে।
এছাড়া এতে বিশেষ বিশেষ দোয়া ও আমালিয়াত সম্পর্কে তিনি যে সব সনদ ও ইজাজত লাভ করেছিলেন তারও বর্ণনা দিয়েছেন এ প্রসিদ্ধ গ্রন্থে।
প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, دعاء سيفى ‘দোয়ায়ে ছাইফি’ ও আমালিয়াত সম্পর্কে শায়খ মুহাদ্দিস গাউছ রাহমাতুল্লাহ আলাইহি এর সংকলিত جواهر خمسه ‘জাওয়াহিরে খামাসাহ’ নামক কিতাবের সনদ ও ইজাজত লাভ করেছিলেন, তাও শাহ ওলি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত তার লিখিত انتباه ‘ইনতেবাহ’ নামক কিতাবের ১৩৭-১৩৯ পৃষ্ঠায় সবিস্তার বর্ণনা দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, جواهر خمسه ‘জাওয়াহিরে খামাসাহ’ কিতাবটি আমালিয়াত সম্পর্কে লিখিত একটি সুপ্রসিদ্ধ কিতাব। উক্ত কিতাবের একটি বিশেষ দোয়া হচ্ছে دعاء سيفى ‘দোয়ায়ে সাইফি’ আর এর একটি বিশেষ অংশ হচ্ছে ناد على নাদে আলী। জাওয়াহিরে খামাসার ২৮১ পৃষ্ঠায় নাদে আলী নিম্নলিখিত ভাষায় লিখা হয়েছে,
ناد عليا مظهر العجائب تجده عونا لك فى النوائب كل هم وغم سينجلى بنبوتك يامحمد يارسول الله وبولائتك يا على يا على يا على
অর্থ: হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আহ্বান কর যিনি যাবতীয় অলৌকিক ঘটনাবলীর উৎসস্থল। তুমি বিপদে তাঁকে সাহায্যকারী পাবে। প্রত্যেক চিন্তা ও ব্যথা ইয়া রাসূলাল্লাহ আপনার নবুয়তের মাধ্যমে দূরীভূত হয়ে যাবে। ইয়া আলী ইয়া আলী ইয়া আলী তোমার বেলাওয়াতের দ্বারা।
শাহ ওলী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত তাঁর ‘ইনতেবাহ’ নামক গ্রন্থের ১৩৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন,
در سفر حج چوں بہ لاھور رسید ودست بوش شیخ محمد سعید لاھوری یافت ایشاں اجازت دعائ سیفی دارند بل اجازت جمیع اعمل جواھر خمسہ وسند خود بیان کردند-
অর্থাৎ ‘শাহ ওলি উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত বলেন, আমি হজ্বের সফরে যখন লাহোর শহরে পৌছলাম, তখন সেখানকার এক বুজুর্গ শায়খ মুহাম্মদ লাহোরী আলাইহির রহমতের সাথে সাক্ষাত করি। আমি তার দস্তবুসি বা হস্ত চুম্বনের সৌভাগ্য লাভ করি। তিনি আমাকে ‘দোয়ায়ে সাইফি’সহ সমস্ত ‘জাওয়াহিরে খামাসা’ কিতাবের আমালিয়াতের ইজাজত ও সনদ প্রদান করেন।
সনদ নিুরূপ,
১. শাহ ওলী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত
২. শায়খ মুহাম্মদ সাঈদ মুহাদ্দিসে লাহোরী আলাইহির রহমত
৩. শায়খ মুহাম্মদ আশরাফ মুহাদ্দিসে আলাইহির রহমত
৪. শায়খ আব্দুল মালিক মুহাদ্দিস আলাইহির রহমত
৫. শায়খ বায়জিদ ছানী মুহাদ্দিস আলাইহির রহমত
৬. শায়খ অজি উদ্দিন মুহাদ্দিসে গুজরাটি আলাইহির রহমত
৭. শায়খ মুহাম্মদ গাউছ মুহাদ্দিস আলাইহির রহমত যিনি جواهرخمسه ‘জাওয়াহিরে খামাসাহ’ কিতাবের লিখক বা সংকলক।
প্রকাশ থাকে যে, শায়খ মুহাম্মদ গাউছ আলাইহির রহমত থেকে ইমাম জাফর সাদিক রাদিয়াল্লাহু আনহু পর্যন্ত বিস্তারিত সনদ শাহ ওলী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত এর লিখিত انتباه ইনতেবাহ কিতাবে মজুদ রয়েছে।
অনুরূপ আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত (ওফাত ১০৫২ হিজরি) তদীয় اخبار الاخيار ‘আখবারুল আখইয়ার’ নামক গ্রন্থের ৫ম পরিচ্ছেদ ১১৯ পৃষ্ঠায় হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী রাহমাতুল্লাহ আলাইহির রহমত এর পবিত্র জীবনচরিত আলোচনা প্রসঙ্গে লিখেন,
یہ اس ذات والاصفات کے ہیں (مجدد الف ثانی) جو علی یا علی کھتے تھے آپ مجدد ہے- سو سال کے بعد مجدد نہیں بلکہ حضرت علی کے ہزار سال کے بعد والے مجدد ہے-
অর্থাৎ ‘তাঁর গুণসম্পন্ন সত্তা (হযরত মুজাদ্দিদে আলফেসানী রহমতুল্লাহি আলাইহি) যিনি ‘আলী ইয়া আলী’ বলতেন। তিনি শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ছিলেন না বরং তিনি হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সহস্র বছর অতিবাহিত হওয়ার পরের মুজাদ্দিদ ছিলেন।