কলেমা তাইয়্যিবা নিয়ে ইদানিং সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন সহীহ ধোঁকাবাজ সম্প্রদায়ের তথাকথিত আলেমরা।
তারা বলে থাকেন যে, কলেমা তৈয়্যব একসাথে লিখলে তা শির্ক হবে!! তারা যুক্তি দেখাচ্ছেন আল্লাহর পাশে প্রিয় নবী (ﷺ) নাম মোবারক লিখলে তা শির্ক হবে, তাই “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” এর নিচে “মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” (ﷺ) লিখতে হবে!!
তারা নাকি কোরআন হাদিসের কোথাও পবিত্র এই কলেমা একসাথে লেখা খুঁজেই পান না।
তাই পবিত্র হাদিস শরীফ থেকে কিছু দলিল পেশ করছি, যাতে করে সাধারণ মানুষ সহীহ ধোঁকাবাজদের সহীহ ধোঁকা থেকে নিজেদের ঈমান-আমল হেফাজত করতে পারেন।
দলিল নং ১
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুরাইদা (রাঃ) তাঁর পিতা হযরত বুরাইদা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আবু যার ও তাঁর চাচাতো ভাই নুআঈম রাসূল (ﷺ)-এর খোঁজে বের হলেন। আমিও তাঁদের সাথে ছিলাম। আর রাসূল (ﷺ) তখন পাহাড়ের আড়ালে ছিলেন। রাসূল (ﷺ)-কে পেয়ে আবু যার (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা আপনার নিকট এসেছি আপনি কি বলেন তা শুনতে। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন, আমি বলি – “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” (ﷺ)। অতঃপর আবু যার ও তাঁর সঙ্গী তাঁর উপর ঈমান আনলেন।
এই হাদিসটির সনদ নিয়ে কোন মুহাদ্দিস সমালোচনা করেননি।
{রেফারেন্স: ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, আল-ইসাবা ফি তামিযিস সাহাবা, ৬/৩৬৫ পৃ:, ক্রমিক. ৮৮০৯} হাদিসটির সনদ সহীহ।
দলিল নং ২
তাবেয়ী আবু মিযলায (রাঃ) তিনি হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)-এর ঝান্ডা ছিল কালো এবং পতাকা ছিল সাদা রঙের। এই পতাকায় লেখা ছিল “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” (ﷺ)।
{রেফারেন্স: তাবারানী, আল-মুজামুল আওসাত, ১/৭৭ পৃ:, হা নং ২১৯, ইমাম হাইছামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৫/৩২১ পৃ:, হা নং ৯৬৩৯, আখলাকুননবী, আবুশ শাইখ আল আসবাহানী, ২/৪১৬ পৃ:, হা নং ৪২৪। হাদিসটির সনদ সহীহ।
দলিল নং ৩
হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)-এর আংটির পাথরটি ছিল আবিসিনিয়া এলাকার। আর তার উপর লেখা ছিল, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” (ﷺ)। উপরের প্রথম লাইন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’, দ্বিতীয় লাইন ‘মুহাম্মদ’, তৃতীয় লাইন ‘রাসূলুল্লাহ’।
{রেফারেন্স: আবুল শাইখ আল আসবাহানী, আখলাকুননবী, ২/২৮২-২৮৩ পৃ:, হা নং ৩৩৫। হাদিসটির সনদ সহীহ।
দলিল নং ৪
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, মিরাজের রাত্রে আমি বেহেশতে প্রবেশের প্রাক্কালে তার দুপাশে স্বর্ণাক্ষরে লেখা ৩ টি লাইন দেখতে পেলাম।
১. “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” (ﷺ)।
২. আমরা যা ভালো কর্ম পেশ করছি তা পেয়েছি, আর যা খেয়েছি তা থেকে উপকৃত হয়েছি, যা ছেড়ে এসেছি সে ব্যাপারে তা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি।
৩. উম্মত হলো গুনাহগার আর রব হলেন ক্ষমাশীল।
{রেফারেন্স: ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৩/৪২৯ পৃ:, হা নং ৫৩১৬, ইমাম সুবকী, তবাকাতুশ শাফিয়্যাহ, ১/১৫০ পৃ:, ইমাম সুয়ূতী, জামেউস সগীর, ১/৩৯৮ পৃ:, হা নং ৬৮০৮} এই হাদিসটির সনদ সহীহ।
দলিল নং ৫
হযরত উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, হযরত আদম (আঃ) যখন অপ্রত্যাশিতভাবে (ইজতেহাদি) ভুল করলেন তখন তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, হে পরওয়ারদিগার! হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)-এর উসিলায় আমাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি মুহাম্মদ (ﷺ)-কে কিভাবে চিনেছো ? জবাবে আদম (আঃ) আরজ করলেন, হে আল্লাহ! আপনি স্বীয় কুদরতি হাত দ্বারা আমাকে সৃষ্টি করে আমার দেহের অভ্যন্তরে যখন আত্মা প্রবেশ করিয়ে ছিলেন, তখন আমি মাথা তুলে আপনার আরশের পায়ায় লেখা দেখেছিলাম, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” (ﷺ)। আমি বুঝতে পারলাম, আপনি আপন নামের সাথে এমন একটি নাম মিলিয়ে রেখেছেন যেটি সমগ্ৰ সৃষ্টি জগতে আপনার নিকট সবচেয়ে প্রিয়।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, হে আদম (আঃ) তুমি সত্য বলেছো। নিশ্চয় ঐ নাম সমগ্ৰ জাহানে আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়। যেহেতু তুমি সেই নাম নিয়েই আমার কাছে প্রার্থনা করেছ, সেহেতু আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। যদি মুহাম্মদ (ﷺ) না হতেন, আমি তোমাকেও সৃষ্টি করতাম না।
{রেফারেন্স: ইমাম হাকেম নিশাপুরী, আল মুস্তাদরাক, ২/৪৮৬ পৃ:, হা নং ৪২২৮, ইমাম হাকেম বলেন, হাদিসটির সনদ সহীহ, ইমাম তাবরানী, মু’জামুল আওসাত, ৬/৩১৩ হা নং ৬৫০২, ইমাম তাবরানী, মু’জামুস সগীর, ২/১৮২ পৃ:, হা নং ৯৯২, ইমাম ইবনে হাজার নুরুদ্দীন হায়সামী, মাযমাউদ যাওয়াইদ, ৮/২৫৩ পৃ:, ইমাম সুয়ূতী, খাসায়েসুল কুবরা, ১/১২ পৃ:, হা নং ১২, ইমাম ইবনে কাসীর, বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ১/১৮ পৃ:, ইমাম কাস্তাল্লানী
, মাওয়াহিবুল ল্লাদুনীয়া, ১/৮২ পৃ:, ইমাম সুয়ূতী, তাফসীরে দুররে মানসুর, ১/১৪২ পৃ:, ইমাম বায়হাক্বী, দালায়েলুল নবুয়ত, ৫/৪৮৯ পৃ:, মাওলানা আশরাফ আলী থানবী, নশরত্তীব, ২৮ পৃ:}
আরো অসংখ্য কিতাবে এই হাদিস শরীফটি উল্লেখ করা হয়েছে।
দলিল নং ৬
হযরত জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, জান্নাতের দরজায় লিখা আছে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” (ﷺ)।
{রেফারেন্স: ইমাম খতিবে বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, ৮/৩৮৭ পৃ:, ক্রমিক. ৩৮৭২, ইমাম আদি, আল-কামিল, ৭/২২৮ পৃ:, ক্রমিক. ১৬১৬, ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ২/২৫৭ পৃ:, হা নং ৩১৯৫} হাদিসটির সনদ সহীহ।
দলিল নং ৭
ইমাম ইবনে আসাকীর (রাঃ) হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমি মিরাজের রাতে আরশে লিখা দেখেছি, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” (ﷺ)।
{রেফারেন্স: ইমাম সুয়ূতী, আদদুররুল মানসূর, ৫/২১৯ পৃ:, ইবনে আসাকীর, তারিখে দামেস্ক, ৩৯/৫১ পৃ:}
দলিল নং ৮
ইমাম মুসলিম (রাঃ) সহীহ মুসলিম শরীফে একটি শিরোনাম কায়েম করেন। তা হলো, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে হত্যা করবে না যতক্ষণ না সে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ” বলবে।
{রেফারেন্স: ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ১/৫১ পৃ:}
তাহলে কি ইমাম মুসলিম (রাঃ) এই কলেমা সহীহ মুসলিম শরীফে লিখে শির্ক করেছেন ?
আমার কাছে এই বিষয়ে আরো ১৮ টি সহীহ হাদিস মজুদ আছে।