কলম এবং কাগজের ঘটনা (হাদিস আল-কিরতাস)- এর প্রধান বর্ণনাকারীগণের উপলদ্ধি

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

প্রবন্ধকার: ইবনে আহমেদ আল-হিন্দির।

অনুবাদক: নাঈম আল-জা’ফরী

পর্ব- ৭

(গ)। কলম ও কাগজের ঘটনার পর- জাবির (রাঃ) ইসলামে উমর (রাঃ)-এর গুরুত্ব তুলে ধরে তাঁর ফজিলত বর্ণনা করেছেন।

আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আকিল ইবনে আবি তালিব(রাহঃ), জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন: রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন: “এই ধর্মে আবু বকর ও উমর এর দৃষ্টিভঙ্গির এবং শ্রবণশক্তির গুরুত্ব রয়েছে।” [শরহে উসুল ইতিকাদ আহলুস-সুন্নাহ ওয়াল-জামাআহ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১১৪০, #২৫০৭: হাসান]; [সিলসিলাহ আল-আহাদীস আল-সহীহা, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৫৭, #৮১৫ : ইসনাদ হাসান]।

(ঘ)। জাবির (রাঃ) এর সাক্ষ্য দেন যে উমর (রাঃ) তাঁর জীবন ও সম্পদের চেয়েও নবী (সাঃ)-এর সোহবাত পছন্দ করতেন।

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিত, যখন আমরা হুনাইন উপত্যকার মুখোমুখি হওয়ার সময়, আমরা তিহামার একটি খাড়া উপত্যকায় থেকে ভোরের অন্ধকারে অবতরণ করলাম, কিন্তু শত্রুরা গুহা ও সরু পথে অতর্কিত আক্রমণের জন্য ভালোভাবে প্রস্তুত ছিল। আল্লাহর কসম, আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি হতবাক করে তাদের সৈন্যরা আমাদের সবাইকে একযোগে আক্রমণ করে এবং লোকদের (মুসলিম) পিছনের সারি পরাজিত হয়, তাই রাসুল (সাঃ) ডানদিকে গিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলেনঃ “হে লোকেরা, আমার কাছে এসো, আমি রাসুল-আল্লাহ, আমি মুহাম্মাদ ইবনে আবদিল্লাহ।” কিন্তু উটগুলো একে অপরের সাথে ধাক্কাধাক্কি এবং হুড়াহুড়ি করছিল এবং লোকেরা দৌড়াচ্ছিল, শুধু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে মুহাজিরুন, আনসার ও তাঁর পরিবারের একটি দল ছিল মাত্র কিন্তু তাদের সংখ্যা বেশি ছিল না। যারা তাঁর (সাঃ) সাথে তাঁদের নিজ অবস্থানে অবিচল ছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন আবু বকর ও উমর এবং তাঁর(সাঃ) পরিবারের মধ্যে ছিলেন আলী(কঃ) ও আব্বাস এবং তাঁর পুত্র আল-ফাদল বিন আব্বাস (রাঃ) এবং আবু সুফিয়ান বিন আল-হারিস এবং রাবিয়াহ বিন আল হারিস এবং উম্মে আয়মানের পুত্র আয়মান বিন উবায়দ এবং উসামা ইবনে যায়েদ; এছাড়াও হাওয়াযিনের একজন লোক তার সাদা উটের উপর ধারালো বর্শা ডগায় একটি কালো পতাকা ধরেছিল। [মুসনাদে আহমাদ, ভলিউম ২৩, পৃষ্ঠা ২৭৩-২৭৫, #১৫০২৭ : ইসনাদ হাসান – ইবনে ইসহাক যা শুনেছেন তাই বলেছেন তা হাদীসের পরবর্তী অংশে উল্লেখ করা হয়েছে]।

মন্তব্য: জাবির (রাঃ) এর মতে, হুনাইনের যুদ্ধে যারা নবী (সাঃ) এর সাথে তাদের অবস্থান নিয়ে ছিলেন উমর (রাঃ) তাদেরই একজন।

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমার দিনে খুতবা দিচ্ছিলেন, এমন সময় মদীনায় পণ্যের একটি কাফেলা আসল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবীগণ এর দিকে ছুটে গেলেন। তখন তাঁর সাথে আর কেউ অবশিষ্ট ছিল না শুধুমাত্র বারোজন ব্যক্তি ছাড়া যাদের মধ্যে আবু বকর ও উমর ছিলেন; এবং এই সময়েই এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছিল। “এবং যখন তারা ব্যবসা অথবা খেলাধুলা দেখতে পেল, তখন সেটার দিকে ছুটে গেল আর আপনাকে (খোতবার মধ্যে) দন্ডায়মান রেখে গেল। (৬২:১১)।” [সহীহ মুসলিম, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৩৮২, #৮৬৩ ঘ]।

মন্তব্য: কলম এবং কাগজের ঘটনা – জাবির (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে উমর (রাঃ) কখনই বাণিজ্য পরিচালনা বা সম্পদ সংগ্রহে আগ্রহী ছিলেন না। অতঃপর তিনি উমর (রাঃ) সম্পর্কে এই আয়াতটি উল্লেখ্য করেন: {ঐ সব লোক, যাদেরকে অমনোযোগী করে না কোন ব্যবসা-বাণিজ্য, না বেচা-কেনা আল্লাহর স্মরণ থেকে এবং নামজ কায়েম রাখা ও যাকাত প্রদান করা থেকে; তারা ভয় করে ওই দিনকে, যেদিন উল্টে যাবে অন্তর ও চোখসমূহ}[কুরআন ২৪:৩৭]।

(ঙ)। কলম ও কাগজের ঘটনার পর জাবির (রাঃ)-এর সাক্ষ্য দেন যে, যখন ‘উমার (রাঃ)-এর লাশ খাটের উপর রাখা ছিল তখন আলী (কঃ) অতিশয় প্রশংসা করেন।

আমাদের কাছে সুফিয়ান বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, আমাদের কাছে জাফর (আস-সাদিক) তাঁর পিতা জাবির ইবনে আবদুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, যখন ‘উমর (রাঃ) শহীদ হন এবং তাঁর দেহকে ধৌত করা হয় এবং কাফন পড়ানো হয়। আলী (কঃ) উমর (রাঃ)-এর খাটিয়ার কাছে দাঁড়িয়ে বলেন, “সাল্লাল্লাহু আলাইকা (আল্লাহর শান্তি ও আশীর্বাদ আপনার উপর বর্ষিত হোক) এবং তারপর বলেন: আমি এই আবৃত লোকটির আমলনামা ব্যতীত অন্য ব্যক্তির আমলনামা দিয়ে আল্লাহর সাথে দেখা করতে চাই না। [মা’রিফাহ ওয়া আল-তারিখ, খন্ড ২, পৃষ্ঠা ৭৪৫] ; [মুসতাদরাক আলা সহীহাইন, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১০০, #৪৫২৩] ; [তারিখ আল-মদীনা, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ৯৩৭ ও ৯৪০]। এই প্রতিবেদনের শহিদ রয়েছে। (সহীহ আল-বুখারী ৩৬৮৫)

মন্তব্য: এই বর্ণনাতে আমরা জাবির (রাঃ)-এর সাক্ষ্য পাই যে, উমর (রাঃ) এর খাটিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে আলী (কঃ) প্রশংসা করেছেন। আলী (কঃ) বলেন যে, তিনি উমর (রাঃ) এর কাজের অনুকরণ করতে চেয়েছিলেন। যদি উমর (রাঃ) এমন কেউ হন যে নবী (সাঃ) কে অপমান করেছেন এবং উমর (রাঃ)-এর প্রতি নবী (সাঃ) অসন্তুষ্ট হয়ে মারা গিয়ে থাকেন, তাহলে আলী (কঃ) এত সুন্দরভাবে উমর (রাঃ)-এর প্রশংসা করতেন না।

(চ)। কলম এবং কাগজের ঘটনার পর – মুহাম্মাদ আল-বাকির(রহঃ) এর উপস্থিতিতে জাবির বিন আবদুল্লাহ(রহঃ) সালতে ইমামতি করেন।

জাফর বিন মুহাম্মাদ তাঁর পিতার (মুহাম্মদ আল-বাকির) সূত্রে বর্ণনা করেছেন: আমরা জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) এর কাছে গেলাম এবং তিনি আমার পালা পর্যন্ত লোকদের (যারা তার সাথে দেখা করতে গিয়েছেন) প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকেন। আমি বললামঃ আমি মুহাম্মাদ বিন আলী বিন হুসাইন। তিনি আমার মাথায় তাঁর হাত রাখলেন এবং আমার উপরের বোতামটি খুললেন এবং তারপরে নীচের বোতামটি খুললেন এবং তারপর তাঁর হাতের তালু আমার বুকের উপর রাখলেন (আমাকে আশীর্বাদ করার জন্য), এবং আমি সেই দিনগুলিতে একজন ছোট বালক ছিলাম এবং তিনি বলেন: আপনি স্বাগতম, আমার ভ্রাতুষ্পুত্র। আপনি যা জিজ্ঞাসা করতে চান জিজ্ঞাসা করুন। এবং আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম কিন্তু তিনি অন্ধ হওয়ায় (তিনি আমাকে অবিলম্বে উত্তর দিতে পারলেন না), এবং প্রার্থনার সময় হয়ে যাওয়ায়, নিজের চাদরে নিজেকে ঢেকে উঠে দাঁড়াল এবং যখনই তিনি তাঁর কাঁধের উপর অপর প্রান্ত রাখতে গেলেন তখনই ছোট (আকারে) হওয়ার কারণে তা নিচে পড়ে যায়। যদিও অন্য একটি আবরণ অবশ্য পাশেই কাপড়ের আলনায় পড়ে ছিল। এবং তিনি আমাদের (আল-বাকির, ইত্যাদি) সালাতের নেতৃত্ব দেন। আমি তাঁকে বললামঃ আমাকে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর হজ্জ সম্পর্কে বলুন। [সহীহ মুসলিম, ভলিউম ৩, পৃষ্ঠা ৩৪৩-৩৪৪, #২৯৫০(১২১৮)]।

মন্তব্য: আমরা দেখতে পাই যে জাবির বিন আবদুল্লাহ (রহঃ) তাঁর বাড়িতে মুহাম্মাদ আল-বাকির (রহঃ)-এর নামাজের ইমামতি করেছেন। যদি এমন হতো অথবা তিনি বিশ্বাস করতেন যে নবী (সাঃ) কলম ও কাগজে আহলে বাইতের বারোজন ইমামের নাম লিখতে বলেছেন অথবা আহলে বাইতের মাধ্যমে নির্দেশনা চাওয়া বা তাঁদেরকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করার কথা নবী (সাঃ) প্রচার করেছেন, তাহলে জাবির বিন আবদুল্লাহ (রাঃ) আহলে বাইতের সদস্য মুহাম্মদ আল-বাকির (রহঃ) এর উপস্থিতিতে নামাযের ইমামতি করতেন না। জাবির (রাঃ) মুহাম্মাদ আল বাকির (রহঃ) কে নামাজের ইমামতি করাতেন। কারণ আবূ মাসউদ আল আনসারী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদিন আমাদেরকে বললেনঃ যে সর্বাপেক্ষা বেশী কুরআনের পাঠক ও কুরআনী জ্ঞানের অধিকারী সে-ই কওমের (লোকজনের) ইমামাত করবে। সবাই যদি কুরআনের জ্ঞানের সমপর্যায়ের হয় সেক্ষেত্রে যে ব্যক্তি সুন্নাত সম্পর্কে অধিক পরিজ্ঞাত হবে সে-ই ইমামাত করবে। সুন্নাহর জ্ঞানেরও সবাই সমান হলে হিজরতে যে অগ্রগামী সে ইমামাত করবে। কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির নিজস্ব প্রভাবাধীন এলাকায় ইমামাত করবে না কিংবা তার অনুমতি ছাড়া তার বাড়ীতে তার বিছানায় বসবে না। বর্ণনাকারী আশাজ্জ তার বর্ণনায় سِلْمًا (ইসলাম) শব্দের স্থানে سِنًّا (বয়স) শব্দ উল্লেখ করেছেন।[দেখুন, সহীহ মুসলিম #৬৭৩ এবং সুনানে নাসাঈ #৭৮১]।

চলবে

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment