এখানে দু’টি মাসআলা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে একটি হচ্ছে কবরে শাজরা, কাবা শরীফের গিলাফ, ও অন্যান্য পবিত্র বস্তু রাখা, অপরটি হচ্ছে মৃতব্যক্তির কাফন বা কাফনের উপর অঙ্গুলি বা মাটি বা অন্য কিছু দিয়ে আহাদ নামা বা কলেমা তৈয়্যবা আছে। এ দু’টি কাজ জায়েয বরং বিশুদ্ধ হাদীছ ও ফকীহগণের উক্তি থেকে প্রমাণিত আছে। কিন্তু বিরোধিতাকারীরা তা স্বীকার করেন না। তাই এ আলোচনাটা দুটি আধ্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম অধ্যয়ে এ সবের প্রমাণ এবং দ্বিতীয় অধ্যায়ে আপত্তিসমূহের উত্তর দেওয়া হয়েছে।
পবিত্র বস্তু রাখা ও আহাদনামা লিখার প্রমান
কবরে বুযুর্গানেদীনের পবিত্র সস্তু, কাবা শরীফের গিলাফ, শাজরা বা আহাদনামা রাখা মৃতব্যক্তির মাগফিরাতের সহায়ক। কুরআন কারিমে ইরশাদ ফরমান (তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় অন্বেষণ কর) । হযরত ইউসুফ (আঃ) তাঁর ভাইদেরকে বলেছিলেন ।
اِذْهَبُوْا بِقَمِيْصِىْ هَذَا فَاَلْقَوْهَ عَلَى وَجْهِ اَبِىْ يَاَبِ بَصِيْرًا
আমার এ জামাটি নিয়ে গিয়ে আমার পিতার মুখ মন্ডলের উপর রাখিও, তিনি দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাবেন। বোঝা গেল যে বুযুর্গানে কিরামের পোশাক আরোগ্য দান করেন। উল্লখ্য যে ওটা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর জামা ছিল। তাই আশা করা যায় বুযুর্গাদের নামের বরকতে মৃত ব্যক্তির জ্ঞান খোলে এবং উত্তর সমূহ স্মরণ আসে।
মিশকাত শরীফের غسل الموت শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত উম্মে আতিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যখন আমরা যয়নব বিনতে রসূল আলাইহিস সালামের গোসলের কাজ শেষ করলাম, তখন নবী করীম আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামকে খবর দিলাম। তিনি (দঃ) আমাদেরকে তাঁর তোহবন্দ শরীফ প্রদান করলেন এবং বললেন একে তোমরা কাফনের ভিতরে মইয়তের গায়ে জড়িয়ে দিবে। এর প্রেক্ষাপটে ‘লুমআত’ গ্রন্থ উল্লেখিত আছো।
هَذَالْحَدِيْثِ اَصْلٌ فِى التَّبَرٌكِ بِاَثَارِ الضَّلِحِيْنَ وَلِبَاسِهِمْ كَمَا يَفْعَلُه بَعْضَ مُرِيْدِى الْمَشَائِخِ مِنْ لُبْسِ اَقْمَصِهِمْ فِى الْقَبْرِ
নেক বান্দাদের বস্তু এবং কাপড়সমূহ থেকে বরকত গ্রহণের উৎস হচ্ছে এ হাদীছ। যেমন মশায়েখের কতেক মুরিদকে কবরে মশায়েখের জামা পড়িয়ে দেয়া হয় একটি হাদীছ প্রসঙ্গে “আশআতুল লুমআত” শরীফে বর্ণিত আছে –
এর থেকে প্রমাণিত হলো যে নেক বান্দাদের পোশাক এবং তাঁদের পবিত্র বস্তুসমূহ দ্বারা মৃত্যুর পর কবরের মধ্যেও বরকত গ্রহণ করা মুস্তাহাব, যেমন মৃত্যুর আগে মুস্তাহব ছিল। শেখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী তাঁর রচিত আখবারুল আখয়ারে স্বীয় সম্মানিত পিতা হযরত সাইফুদ্দিন কাদেরী (কুঃসিঃ) এর জীবণী বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন।
(যখন তাঁর ইন্তিকালের সময় ঘনিয়ে আসে তখন তিনি বলেন- কেউ ওই শে’র ও বাক্যগুলো, যেগুলো ক্ষমা ও মাগফিরাতের সহায়ক, কোন কাগজে লিখে আমার কাফনের মধ্যে রেখে দিবে) শাহ আবদুল আযীয ছাহেব (কুঃসিঃ) স্বীয় ফাতওয়ার কিতাবে বলেছেন-
কবরে শাজরা রাখাটা বুযুর্গানে দ্বীনের অনুসৃত নীতি। তবে এটা রাখার দু’টি পদ্ধতি আছে – একটি হচ্ছে মৃত ব্যক্তির বুকের উপর কাফনের নিচে বা উপরে রাখা। একে ফকীহগণ নিষেধ বলেন। অপরটি হচ্ছে মৃত ব্যক্তির মাথার দিকে কবরে একটি তাক করে ওখানে শাজরার কাগজ রাখ। মিশকাত শরীফের غسل الميت শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে হুযূর আলাইহিস সালাম আবদুল্লাহ ইবনে উববীর কবরে তশরীফ নিয়ে যান। যে মুহুর্তে তাকে কবরে রাখা হচ্ছিল, তনি (দঃ) তাকে বের করালেন, তার মুখে থুথু ফেললেন এবং নিজের পবিত্র জামা তাকে পরিয়ে দিলেন। বুখারী শরীফের প্রথম খন্ডে কিতাবুল জনায়েয শীর্ক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে যে, এক দিন হুযুর আলাইহিস সালাম তোহবন্দ শরীফ গায়ে দিয়ে বাইরে তশরীফ আনলেন। কোন এক জন সাহাবী হুযুর আলহিস সালাম থেকে সেই তোহবন্দ শরীফটা চেয়ে নিয়ে নিলেন । সাহাবায়ে কিরাম তাঁকে বললেন ওই সময় হুযুর আলাইহিস সালামের তোহবন্দটার প্রয়োজন ছিল কিন্তু কোন প্রার্থীক বিমুখ করা তাঁর স্বভাব নয়। আপনি কেন চেয়ে নিলেন? উত্তরে তিনি (সাহাবী) বললেন –
وَاللهِ مَاسَئَلْتُهُ لِاَلْبَسَهَا اِنَّمَا سَئَلْتَهُ لِتَكُوْنَ كَفَنِىْ قَالَ سَهَلً فَكَانَتْ كَفَنَهُ
খোদার কসম, আমি এটা পরিধানের জন্য লই নাই। আমিতো এ জন্যেই নিয়ছি যে, এটা আমার কাফন হবে। হযরত সাহল (রাঃ) বলেছেন যে ওটা ঠিকি তার কাফন হয়েছিল। হযরত আবু নয়ীম (রাঃ) মাআরিফাতুস সাহাবা গ্রন্থে এবং হযরত দায়লমী (রাঃ) তাঁর মসনদুল ফিরদাউসে হযরত হাসান আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর বরাত দিয়ে বর্ণনা করেছেন যে সায়ৈদুনা হযরত আলী (রাঃ) এর মাতা ছাহেবানী ফাতিমা বিনতে আসাদকে হুযূর আলাইহিস সালাম স্বীয় জামা দিয়ে কাফন দিয়েছেন এবং কিছু সময় ওর কবরে নিজেই শুয়ে থাকেন। অতঃপর ওকে দাফন করেন। সাহাবায়ে কিরাম এর রহস্য জানতে চাইলে তিনি ফরমান –
اِنىْ اَلَيَسْتُهَا لِتَلبَسَ مِنْ ثِيَابِ الْجَنَّةِ وَاضَطَجَعْتُ مَعهَا فِىْ قَبْرِ هَا لِاَخَفِّفَ عَنْهَا ضَغْطَةَ الْقَبْرِ
জামা এ জন্য পরায়েছি যেন সে বেহেশতের পোশাক পায় এবং তার কবরে এ জন্য শুয়েছি যে যেন কবরের সংকীর্ণতা দুরীভূত হয়। হযরত ইবনে আবদুল বির কিতাবুর ইস্তেয়ান ফি মাআরিফাতিল আসহাব’ গন্থে উল্লেখ করেছেন যে হযরত আমীর মুয়াবিয়া (রাঃ) ইন্তেকালের সুয়াহ্নে ওসীয়ত করেছিলেন আমাকে হুযুর আলইহিস সালাম তার একটি জামা দান করেছেন ওটাকে আমি এ সময়ের জন্য রেখে দিয়েছি এ পবিত্র জামাটা আমার কাফনের নিচে রেখে দিবে।
وَخُذْ ذَالِكَ الشَّعْرَ وَالْاَظْفَارَ فَاَجْعَلْهُ فِىْ فَمِىْ وَعَلَى عَيْنِىْ وَمَوَاضِعِ السُّجُوْدِ مِنِّىْ
এই পবিত্র চুল ও নখগুলো নাও । এগুলোকে আমার মুখে, চোখের উপর এবং আমার সিজদার অঙ্গ সমূহে রাখবে।
হযরত হাকিম (রহঃ) মুসতদারক গ্রন্থে হযরত হামিদ ইবনে আবদুর রহমান রওয়াসী (রহঃ) থেকে উদ্ধৃতি করেছেন যে হযরত আলী (রাঃ) এর কাছে কিছু মেশক ছিল তিনি ওসীয়ত করেছেন আমাকে এর থেকে সুগন্ধি দিবে এবং বলেছেন এটা হুযূর আলাইহিস সালামের মেশকের অবশিষ্টাংশ । এগুলো ছাড়া আরও প্রমাণ দেয়া যায়। কিন্তু এতটুকুই যথেষ্ট মনে করি। যদি কেউ আরো বিস্তারিত ভাবে জানতে চান, তাহলে আলা হযরতের আল হরফূর হাসন” কিতাবটি অধ্যয়ন করতে পারেন।
মইয়তের কপালে বা কাফনের উপরে আহাদ নামা বা কলেমা তৈয়্যবা লিখা এবং অনুরূপ আহাদ নামা কবরে রাখা জায়েয। এটা আঙ্গুল দিয়ে বা অন্য কিছু দিয়ে লিখা জায়েয আছে। ইমাম তিরমীয়ী হাকিম মুহাম্মদ ইবনে আল নওয়াদেরুল উসুলে” বর্ণনা করেন যে হুযুর আলাইহিস সালাম ইরশাদ ফরমান –
مَنْ كتَبَ هَذَا الذُعَاء وجَعَلَهُ بَيْنَ صَدَرِ الْمَيِّتِ وَكَفنِهِ نى رُقْعَةٍ لَمْ يَنَلْهُ عَذَابُ الْقَبْرِ وَلَايَرَى مُنْكَرًا وَّنَكِيْرًا
যে কেউ এ দুআটা কোন কাগজে লিখে মৃত ব্যক্তির বুক ও কাফনের মাঝখানে রাখলে ওর কবর আযাব হবে না এবং সে মুনকার নকিরকে দেখবে না। ফাতওয়ায়ে কুবরা লিল মক্কীতে এ হাদীছ উদ্ধৃতি করে বলা হয়েছে-
اَنَّ هَذَالدُّعَاءَ لَهُ اَصْلٌ وَّاِنَّ الفَقِيْهَةَ ابْنَ عَجِيْلٍ كَانَ يَاْمرُبِهِ ثُمَّ افتى بِجَوَازِ كِتَابَتِهِ قِيَاسًا عَلَى كِتَابَةِ اللهِ فِىْ نَعَمِ الزَّكَوةِ
(এ হাদীছটা) এ দুআর উৎস এবং ফকীহ ইবনে আজিল এর নির্দেশ দিতেন এবং যাকাতে উটসমূহের গায়ে যে আল্লাহ লিখা হয়, এর উপর অনুমান করে এ দুআ লিখা জায়েয বলে ফাতওয়া দিতেন । সেই দুআটা হচ্ছে—
لَااِلَهَ اِلَّااللهُ وَاللهُ اَكْبَرُ . لَااِلَهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَاشَرِيْكَ لَهُ لَااِلَهَ اِلَّااِللهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُالْحَمْدُ . لَااِلَهَ اِلَّااللهُ وَلَاحَوْلَ وَلَاقُوَّةَ اِلَّابِااللهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيْمِ
আল হরফুল হাসানে তিরমীযী থেকে উদ্ধৃতি করে বলা হয়েছে যে হযরত সিদ্দীক আকবর (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, যে কেউ যদি এ আহাদ নামা পাঠ করে, তাহলে ফিরিশতা সেটা সীল করে কিয়ামতের জন্য রেখে দেবে। যখন বান্দাদেরকে কবর থেকে উঠানো হবে, তখন ফিরিশতা সেই চিরকুট নিয়ে ডাক দিবে অমুক আহাদ ওয়ালা কোথায়? অতঃপর এ আহাদ নামা তাকে দেয়া হবে ইমাম তিরমীযী বলেন-
وَعَنْ طَاؤس اَنَّهُ اَمَرَبِهَذِهِ الْكَلَمَاتِ فَكُتِبَ فِىْ كَفْنِهِ
হযরত তাউস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি হুকুম দিয়েছেন, তাই তাঁর কাফনে কালেমাসমূহ লিখা হয়েছে। কিতাবুল ইসতিহসানে উল্লেখিত আছে –
ذَكَرَالْاِ مَامَ الصَّفَّارُ لَوْ كُتِبَ عَلَى جَبْهَةِ الْمَيِتِ اَوْ عَلَي عَمَامَتِهِ اَوْكَفَنِهِ وَعَهْدِ نَامَهُ يَرجى اَنْ يَّغْفِرَاللهُ تَعَاَلَى لِلْمَيِّتِ وَيَجْعَلَهُ اَمِنًامِّنْ عَذَابِ الْقَبْرِ
ইমাম সফফার (রহঃ) বলেন যদি মাইয়তের কপালে বা পাগড়ীতে বা কাফনের উপর আহাদ নামা লিখা হয় তাহলে আশা করা যায় যে আল্লাহ মইয়তের মাগফিরাত এবং কবর আযাব থেকে রেহাই দেবেন । দুররুল মুখতারের প্রথম খন্ড الشهيد অধ্যায়ের একটু আগে উল্লেখিত আছে-
كَتَبَ عَلَى جَبْهَةِ الْمَيِّتِ اَوْ عَمَامَتِهِ اَوْ كَفَنِهِ عَهْدِنَامَهُ يُرْجى اَنْ يَّغْفِرَ اللهُ لِلْمَيِّتِ
মইয়তের কপালে বা পাগড়ীতে বা কাফনের উপর আহাদ নামা লিখা হলে আশা করা যায় যে আল্লাহ একে ক্ষমা করবেন।
দুররুল মুখতারে এ জায়গায় একটি ঘটনার উল্লেখ আছে জণৈক ব্যক্তি ওসীয়ত করেছিলেন যে তার বুকে বা কপালে যে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লিখে দেয়া হয়। সুতরাং তাই করা হয়েছিল। একজন স্বপ্নে ওকে কি অবস্থায় আছে জিজ্ঞাসা করেছিল । এর উত্তরে সে বলে যে দাফনের পর তার কাছে আযাবের ফিরিশতা এসেছিল কিন্তু সিমিল্লাহ লিখা দেখে বলেছে তুমি আল্লাহর আযাব থেকে বেঁচে গেছ। ফাতওয়ায়ে বযাযিয়ার কিতাবুল জানাযাতের একটু আগে উল্লেখিত আছে –
وَذَكَرَ الْاِمَامُ الصَّفَّارُ لَوْ كَتَبَ عَلَى جَبهَةِ الْمَيِّتِ عَلَى عَمَامَتِهِ اَوْكَفَنهِ عَهْدِنَامَه يُرْجَى اَنْ يَّغْفِرَاللهُ تَعَالَى لِلْمَتِّتِ وَيَجْعَلَهُ اَمِنًا مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ قالَ نصِيْرٌ هَذِهِ رَوَايَة فِىْ تَّجَوِيْزِ ذَالكَ وَقَدْ روىَ اَنَّهُ كَانَ مَكْتُوْبًا عَلَى اَفْخَاذِ اَفْرَاس فِىْ اصْطَبَلِ الفَارَوْقِ حُبِسَ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ
ইমাম সাফফার (রহঃ) উল্লেখ করেছেন যে, যদি কপালে বা পাগড়ী বা কাফনের উপরে আহাদ নামা লিখা হয় তাহলে আশা করা যায় যে, আল্লাহ ওকে ক্ষমা করবেন এবং কবর আযাব থেকে মুক্ত রাখবেন । ইমাম নসীর (রাঃ) বলেছেন, এ বর্ণনা থেকে বোঝা গেল যে এ ধরনের লিখাটা জায়েয আছে এবং বর্ণিত আছে যে হযরত ফারুকে আযম (রাঃ) এর ঘোড়াশালের ঘোড়াগুলোর উরুতে حُبِسَ فِىْ سَبِيَلِ الله লিখা ছিল। এছাড়া ফকীহগণের আরও অনেক রিওয়ায়েত পেশ করা যায়। কিন্তু এতটুকুই যথেষ্ট মনে করলাম। অতিরিক্ত বিশ্লেষণের জন্য আল-হরফুল হাসান বা ফাতওয়ায়ে রজভীয়া শরীফ অধ্যয়ন করুন।
বিবেকও বলে যে, কয়েকটি কারণে আহাদ নামা ইত্যাদি লিখা বা কবরে রাখা জায়েয হওয়া চাই।
প্রথমতঃ কবরের উপর সবুজ ঘাস ও ফুলের তাসবীহের বদৌলতে যদি মইয়তের উপকার হতে পারে, তাহলে কবরের ভিতরে লিখিত তাসবীহ ইত্যাদির ফায়দা কেন পৌছবে না?
দ্বিতীয়তঃ কবরের বাহির থেকে মইয়তের তলকীন করার অর্থাৎ যাতে পরীক্ষাতে কামিয়াব হতে পারে সে জন্য মইয়তের কানে আল্লাহর নাম পৌছিয়ে দেয়ার নির্দেশ আছে । তাহলে এটাকেও এক প্রকার তলকীন বলা যায়। কারণ আল্লাহর নাম লিখিত দেখলে মইয়তের কাছে মুনকার নকিরের প্রশ্নের উত্তর স্মরণ হতে পারে। হাদীছ শরীফে
لقنواموتكم বাক্য দ্বারা অনির্দিষ্ট তলকীনকে বোঝানো হয়েছে। তাই লিখিত বা মৌখিক সব রকমের তলকীন জায়েয আছে।
তৃতীয়তঃ আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের নামের বরকতে মুসীবত দূরীভূত হয়, জ্বলন্ত অগ্নি নিভে যায় এবং ভীত সন্ত্রস্ত আত্না সান্ত্বনা লাভ করে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান আল্লাহর
الابذكر الله تطمئن القلوب যিকিরের ফলে আত্নার শান্ত লাভ হয়। তফসীরে নিশাপুরী ও রূহুল বয়ানে সূরা কাহাফের আয়াত
مايعلمهم الا قليل ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে এবং তফসীরে সাবীতে একই আয়াত প্রসঙ্গে বর্ণিত আছে যে আসহাবে কাহাফের নাম অনেক কাজে উপকার আসে। যেমন হারানো জিনিস তালাশ করা, যুদ্ধের সময়, পালিয়ে যাবার সময়, আগুন নিভানোর জন্য একটি কাগজে লিখে আগুনে নিক্ষেপ করুন, শিশু কান্নাকাটি করলে লিখে দোলনায় শিশুর মাথার নিচে রেখে দিবেন, ভাল ফলনের জন্য কোন কাগজ লিখে ক্ষেতের মাঝখানে লাঠিতে টাঙিয়ে দিবেন। জ্বর, মাথা ব্যথার জন্যও উপকারী, বিচারকের সামনে যাবার সময় লিখে ডান উরুতে বাঁধবেন, মালের হিফাজতের জন্য, সামুদ্রিক যাত্রার সময়, এবং খুন-খারাবী থেকে রক্ষা পাবার জন্যও খুবই উপকারী (আল হরফুল হাসান, তফসীরে খাজায়েনুল ইরফান ও জুমুল দ্রষ্টব্য ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন যে আসহাবে কাহাফ সংখ্যায় ছিলেন সাত জন ইয়ামলিখা, কমছিলিনা, মছলিনা মারনুস, বরনুস শাজনুশ ও মরতুশ। (রূহুল বয়ান সূরা কাহাফের আয়াত ما يعلمهم الاقليل এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)। মুহাদ্দেছীনে কিরাম কোন কোন সময় বিশুদ্ধ সনদ উদ্ধৃতি করে বলেন- لوقرءت هذه الاسناد على مجنون لبرء من جنته যদি এই সনদ কোন পাগলের জন্য পাঠ করা হয়, তাহলে সে ভাল হয়ে যাবে। ) সনদের মধ্যে বুযুর্গানে দীন ও হাদীছ বর্ণনা কারীদের নামইতো আছে। আসহাবে বদরের নামের উপর ওজীফা পাঠ করা হয়। এ সব বুযুর্গানে কিরামের মুবারক নাম কেবল জীবিতদের জন্য উপকারী, এবং মৃতদের জন্য নয় এ রকম কখনও হতে পারে না। নিশ্চয়ই মৃতব্যক্তিদেরও উপকার হবে। তাই মইয়তের জন্য কাফন ইত্যাদিতে নিশ্চয় যেন আহাদ নামা লিখা হয়। – সূত্রঃ জা’আল হক ২ খন্ড –