শায়খ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী (রহঃ) বলেন, যে ব্যক্তি ওজুতে মনোযোগী তাকে আল্লাহ নামাজে মনোযোগ দান করেন।
আমরা ওজু করার সময় চিন্তা করি শুধু কোনরকমে ওজু করে নামাজ পড়তে চলে যাব। আমরা নামাজকে গুরুত্ব দেই কিন্তু ওজুকে তেমন গুরুত্ব দেইনা। কিন্তু ওজুর নিজস্ব গুরুত্ব আছে। ওজু যেমন বাহ্যিক/শারীরিক পবিত্রতা বা শুদ্ধতা প্রদান করে তেমনি অন্তরেরও পবিত্রতা বা শুদ্ধতা প্রদান করে। তাছাড়া, যে ওজুতে পূর্ন মনোযোগ দিতে পারবে সে নামাজেও মনোযোগ দিতে পারবে। ওজুতে একাগ্রতা অর্জনের পদ্ধতিগুলো হলঃ-
১. মনে মনে ভাবুন এটি হতে পারে আপনার জীবনের শেষ ওজু। যখন আপনি মুখে পানি দিচ্ছেন চিন্তা করুন এটি আপনার শরীর ও অন্তরকে পরিবত্রতার নুরে আলোকিত করছে।
২. “বিসমিল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহ” বলে ওজু শুরু করুন এবং ওজুর মাঝে ও শেষের দোয়াগুলো ভালভাবে পড়ুন। যদি অযুর পূর্বে কেউ بِسْمِ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰه বলে, তাহলে যতক্ষণ অযু সহকারে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেস্তাগণ তাঁর জন্য নেকী লিখতে থাকবে।
পবিত্র হাদীসে বর্ণিত আছে: “যে ব্যক্তি ভালভাবে অযু করলো অতঃপর আসমানের দিকে দৃষ্টি দিলো এবং কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করলো, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয়। সে যেটা দিয়ে ইচ্ছা করে সেটা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।”
(সুনানে দারমী, ১ম খন্ড, ১৯৬ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৭১৬)
হাদীস শরীফে আরো বর্ণিত আছে: “যে ব্যক্তি অযু করার পর একবার ‘সূরা কদর’ পাঠ করবে, তাকে সিদ্দীকীনদের এবং যে ব্যক্তি দুইবার পাঠ করবে তাকে শহীদদের মর্যাদা দান করা হবে। আর যে ব্যক্তি তিনবার (সূরা কদর) পাঠ করবে, তাকে আল্লাহ্ তাআলা হাশরের ময়দানে নবীদের সাথে হাশর করাবেন।”
(কানযুল উম্মাল, ৯ম খন্ড, ১৩২ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৬০৮৫। আল হাভী লিল ফতোওয়ায়ে লিস সুয়ূতী, ১ম খন্ড, ৪০২ পৃষ্ঠা)
হাদীস শরীফে আছে,
যে অযু করার পর এই কলেমাটি পড়বে:
سُبْحٰنَكَ اللّٰہُمَّ وَبِحَمْدِكَ اَشْهَدُ اَنْ لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّا اَنْتَ اَسْتَغْفِرُكَ وَاَتُوْبُ اِلَيْكَ
অনুবাদ: তোমার সত্ত্বা পবিত্র আর হে আল্লাহ্! তোমার জন্য সমস্ত প্রশংসা, তুমি ছাড়া আর কোন মাবুদ নাই। তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার দরবারে তাওবা করছি।
তখন এর উপর মোহর লাগিয়ে আরশের নীচে রেখে দেওয়া হয় এবং কিয়ামতের দিন এটা পাঠকারীকে দিয়ে দেওয়া হবে।
(শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ২১ পৃষ্ঠা, নাম্বার- ২৭৫৪)
৩. ওজুর সকল সুন্নাত ও মুস্তাহাবসমূহ অনুসরন করা।
৪.
(ক) আল্লাহর ভয় মনে জাগ্রত করা
(খ) ওজুর পানির সাথে সাথে আপনার শরীরের প্রত্যেক অঙ্গের গুনাহগুলো ঝড়ে যাচ্ছে তা মনে মনে উপলব্ধি করুন।
(গ) প্রত্যেক অঙ্গের গুনাহের জন্য তওবা করুন।
(ঘ) মনে মনে ভাবুন যে আপনার অঙ্গগুলোতে নুর বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাদীছ শরীফে আছে, হাশরের ময়দানে ওজুর পানি দিয়ে ধোয়ার বদৌলতে আপনার অঙ্গগুলো আলোকিত হবে।
৫. ওজু শেষে দুই রাকাআত নফল নামাজ পড়া যাকে বলা হয় “তাহিয়্যাতুল অজু”।