ইসলাম কেন চুপ থাকার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে?
কারন জিহ্বা দ্বারা সংশ্লিষ্ট গুনাহ গুলো আমাদের ভালো আমলগুলোকে নষ্ট করে দিবে।
অতিরিক্ত কথা বা জিহ্বা দ্বারা সৃষ্ট কবিরা গুনাহ সমূহঃ
০১. মিথ্যা কথা বলা
০২. মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া
০৩. মিথ্যা শপথ করা
০৪. গীবত করা বা পরনিন্দা করা
০৫. অভিশাপ দেয়া
০৬. খোঁটা দেওয়া
০৭. চোগলখোরি করা
ইমাম আহমদ, দারেমী, তিরমিযী, ইবনে আবিদ দুনিয়া এবং বায়হাক্বী ‘শুয়াবুল ঈমান’-এ হযরত সাইয়্যেদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আমর رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُمَا বলেন, হুযুর নবী করীম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেনঃ مَنْ صَمَتَ نَجَا “যে চুপ থেকেছে সে নাজাত পেয়েছে”।
[তিরমিযী, কিতাবু সিফাতিল কিয়ামাহ, ৪/২২৫, হাদীসঃ ২৫০৯, দারেমী, কিতাবুর রাকা-ইক, ২/২৯৯, হাদীসঃ ২৭১৩, ইবনুল মুবারক, আয-যুহদ, ৩৮৫, ইমাম আহমদ, মুসনাদ, ২/১৫৯, ইবনে আবিদ দুনিয়া, আস-সামত, ৪৩, হাদীসঃ ১০]
নিরাপত্তাপ্রার্থী চুপ থাকুক
ইবনে আবিদ দুনিয়া, বায়হাক্বী ‘শুয়াবুল ঈমান’- এ, কাযায়ী- ‘মুসনাদুশ শিহাব’ –এ বর্ণনা করেনঃ-
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَسْلَمَ فَلْيَلْزَمِ الصَّمْتَ
হযরত সাইয়্যিদুনা আনাস বিন মালিক رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُمَا বর্ণনা করেন, হুযুর নবী পাক صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেনঃ “যে নিরাপদ থাকতে চায় তার চুপ থাকা আবশ্যক”।
[মুসনাদ আবী ইয়া’লা, মুসনাদ আনাস বিন মালিক, ৩/২৭১, হাদীসঃ ৩৫৯৫]
শরীরের ওপর হালকা এবং মীযানে ভারী
ইবনে আবিদ দুনিয়া বর্ণনা করেনঃ-
عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَلَا أُعْلِمُكَ بِعَمَلٍ خَفِيفٍ عَلَى الْبَدَنِ، ثَقِيلٍ فِي الْمِيزَانِ؟ قُلْتُ: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ. قَالَ هُوَ الصَّمْتُ، وَحُسْنُ الْخُلُقِ، وَتَرْكُ مَا لَا يَعْنِيكَ
হযরত সাইয়্যেদুনা আবু যার গীফারী رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বলেনঃ হুযুর নবীয়ে রাহমাত صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم আমাকে বলেছেনঃ “আমি কি তোমাকে এমন আমল বলে দেব না যা শরীরের ওপর হালকা আর আমলের মীযানে (দাড়িপাল্লায়) ভারী?” আমি আরয করলামঃ কেন নয়? তিনি صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم বললেনঃ “তা (আমল) হল চুপ থাকা, উত্তম চরিত্র তৈরী করা এবং অনর্থক কাজ ছেড়ে দেয়া।”
[ইবনে আবী দুনিয়া, কিতাবুস সামত ওয়া আদাবুল লিসান, ৭/৮৭, হাদীসঃ ১১২, হায়ছমী, মাজমাউয যাওয়াইদ, ১০/৩০১, মুনযিরী, আত তারগীব ওয়াত তারহীব, ৪/৭, গাযালী, ইহইয়াউল উলুম, ৩/১০৯]
সহজ ইবাদত – ইসলামে চুপ থাকার উপকারিতা
ইবনে আবিদ দুনিয়া বর্ণনা করেনঃ-
عَنْ صَفْوَانَ بْنِ سُلَيْمٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِأَيْسَرِ الْعِبَادَةِ وَأَهْوَنِهَا عَلَى الْبَدَنِ: الصَّمْتُ وَحُسْنُ الْخُلُقِ
হযরত সাইয়্যিদুনা সাফওয়ান ইবনে সুলাইম رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেন যে, হুযুর নবী আকরাম صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেনঃ “আমি কি তোমাদের এমন ইবাদতের ব্যাপারে বলব না যা সহজ এবং শরীরের ওপর খুবই হালকা? তা হল চুপ থাকা এবং সুন্দর চরিত্র।
[ইবনে আবী দুনিয়া, কিতাবুস সামত ওয়া আদাবুল লিসান, ৭/৪৬, হাদীসঃ ২৭, সুয়ূতী, জামেউস সগীর, হাদীসঃ ২৭৫৯, সুয়ূতী, দুররুল মনছুর, ২/৭৫, গাযালী, ইহইয়াউল উলুম, ৩/৯৫]
চুপ থাকার নসীহত – চুপ থাকার উপায়
ইবনে নাজ্জার বর্ণনা করেনঃ- হযরত সাইয়্যেদুনা আবু যার গীফারী رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ থেকে বর্ণিত,
اُوْصِيْكَ بِحُسْنَ الْخُلُقِ، وَالصَّمْتِ، هُمَا أَخَفُّ الأعْمَالِ عَلَى الأبْدَانِ (وَأَثْقَلَهُمَا) فِيْ الْمِيْزَانِ
“আমি বারগাহে রিসালাতে আরয করলামঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم! আমাকে কোন নসীহত করুন।” তিনি صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এরশাদ করলেনঃ “আমি তোমাকে সুন্দর চরিত্র গঠন ও চুপ থাকার নসীহত করছি। এই দুটি আমল শরীরের ওপর সবচেয়ে হালকা আর মীযানে খুব ভারী।”
[কানযুল উম্মাল, কিতাবুল আখলাক্ব, ৩/২৬৫, হাদীসঃ ৮২০২]
সবচেয়ে উত্তম এবং সহজ আমল
ইবনে আবিদ দুনিয়া বর্ণনা করেনঃ- হযরত সাইয়্যেদুনা ইমাম শাবী’ رَحْمَۃُ اللّٰہِ تَعَالٰی عَلَیْہ হতে বর্ণিত হুযুর পূরনূর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এক সাহাবীকে এরশাদ করলেনঃ
أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى أَحْسَنِ الْعَمَلِ وَأَيْسَرِهِ؟ قَالَ: بَلَى بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي(يا رسول الله) قَالَ: حُسْنُ الْخُلُقِ، وَطُولُ الصَّمْتِ، عَلَيْكَ بِهِمَا فَإِنَّكَ لَنْ تَلْقَى اللَّهَ بِمِثْلِهِمَا
“আমি কি তোমাকে সবচেয়ে উত্তম এবং সহজ আমলের ব্যাপারে বলে দেব না? সাহাবী আরয করলেনঃ আমার পিতা মাতা আপনার ওপর কোরবান! কেন নয়। অবশ্যই বলুন। হুযুর صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেনঃ “তা হল উত্তম চরিত্র এবং দীর্ঘ চুপ থাকা। দুটোকেই আবশ্যিকভাবে গ্রহণ করে নাও কারণ তুমি আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ এঁর দরবারে ঐ দুটোর মত (অর্থাৎ তার চেয়ে বেশী) অন্য কোন আমল নিয়ে যেতে পারবে না।
[ইবনে আবী দুনিয়া, কিতাবুস সামত ওয়া আদাবুল লিসান, ৭/৩৪৬, হাদীসঃ ৬৫০]
সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন ইবাদত
আবু নুয়াইম ‘তারিখে আসবাহান’-এ বর্ণনা করেনঃ-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الصَّمْتُ أَرْفَعُ الْعِبَادَةِ
হযরত সাইয়্যেদুনা আবু হোরায়রা رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ এরশাদ করেন যে, প্রিয় নবী মুস্তফা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেনঃ “চুপ থাকা সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ইবাদত।”
(তারিখে ইস্পাহান লি আবী নু’য়াইম, ২/৩৪, হাদীসঃ ৯৯৯, আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল-বাযিয়ার)
আলেমের সৌন্দর্য আর জাহেলের পর্দা
আবুশ শায়খ বর্ণনা করেনঃ- হযরত সাইয়্যেদুনা মুহরিয ইবনে যুহায়র আসলামী رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেনঃ মুস্তফা জানে রহমত صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেনঃ
الصَّمْتُ زَيْنٌ لِلْعَالِمِ، وَسِتْرٌ لِلْجَاهِلِ
“চুপ থাকা হলো আলেমের সৌন্দর্য আর জাহেলের পর্দা।”
[জামেউস সগীর, পৃঃ ৩১, হাদীসঃ ৫১৫৯; আবু শায়খ, (মুহরিয বিন যুহায়র হতে)
বায়হাক্বী, শুয়াবুল ঈমান, ৭/৮৬, হাদীসঃ ৪৭০১ (সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা থেকে)]
চুপ থাকা চরিত্র সমূহের সরদার
ইমাম দায়লামী ‘মুসনাদুল ফিরদাউস’-এ বর্ণনা করেনঃ- হযরত সাইয়্যদুনা আনাস বিন মালেক رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেনঃ আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ এঁর মাহবুব صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করেনঃ
الصَّمْتُ سَيِّدُ الأَخْلاَقِ
“চুপ থাকা আখলাকসমূহের (সকল চরিত্রের) সরদার।”
(মুসনাদুল ফিরদাউস, ২/৩৬, হাদীসঃ ৩৬৬৬)
কথা (মানুষকে) দোযখে উল্টো মুখ করে ফেলবে
আবুল কাসিম আল-যুজাজি ‘আমালিয়াহ’ কিতাবে এবং ইমাম তাবরানী বর্ণনা করেনঃ-
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ ذَاتَ يَوْمٍ عَلَى رَاحِلَتِهِ فَقَلَ لَهُ معاذ بن جبل: أىُّ الاعْمال أفضل؟ فَأَشَارَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى فِيهِ قَالَ: الصَّمْتُ إِلَّا مِنْ خَيْرٍ. قَالَ: وَهَلْ يُؤَاخَذُنُا الله بِمَا (تَكَلَّمَ) بِهِ أَلْسِنَتُنَا؟ فَضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ على فَخِذَ مُعَاذٍ، ثُمَّ قَالَ: «يَا مُعَاذُ ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ وَهَلْ يُكَبَّ النَّاسِ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ فِي جَهَنَّمَ إِلَّا مَا نَطَقَتْ بِهِ أَلْسِنَتُهُمْ فَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللَّهِ (وَالْيَوْمِ الْآخِرِ) فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَسْكُتْ عَنْ شَرٍّ، قُولُوْا خَيْرًا تَغْنَمُوا وَاسْكُتُوا عَنْ شَرٍّ تَسْلَمُوا»
হযরত সাইয়্যেদুনা উবাদাহ ইবনে ছামিত رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ বর্ণনা করেন, আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ এঁর প্রিয় হাবীব صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم একদিন ঘরের বাইরে তাশরীফ নিয়ে গেলেন আর বাহনে (ঘোড়ায়) আরোহন করলেন। তখন হযরত সাইয়্যেদুনা মু’আয ইবনে জাবাল رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہ আরয করলেনঃ কোন আমল সবচেয়ে উত্তম? তিনি صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم পবিত্র নূরানী মুখ (ঠোঁট) মোবারকের দিকে ইশারা করে বললেনঃ নেকীর কথা ব্যাতীত চুপ থাকা।”
আরয করলেনঃ আমারা জবান থেকে যা কিছু বলি, আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ কি তার জন্য আমাদের পাকড়াও করবেন? তখন সরকারে দো জাহা صَلَّی اللّٰہُ تَعَالٰی عَلَـیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তাঁর রান মোবারকের ওপর হাত মেরে ইশারা করেলেনঃ
“হে মু’আয! তোমার ওপর তোমার মা কাঁদুক! জবান দ্বারা বলা কথাই মানুষকে জাহান্নামে উল্টো মুখ করে ফেলে দেবে। পরে যে আল্লাহ عَزَّوَجَلَّ ও আখিরাতের ওপর ঈমান রাখে তাঁর উচিৎ ভালো কথা বলে অথবা খারাপ কথা থেকে বিরত থাকে। (অতঃপর ইরশাদ করেনঃ) ভালো কথা বলো তাহলে ভালো থাকবে আর খারাপ কথা থেকে (বিরত থেকে) চুপ থাক তাহলে নিরাপদে থাকবে।
(মুসতাদরাক হাকেম, কিতাবুল আদব, ৪/৩১৯, হাদীসঃ ৭৭৭৪)