ইলমে গায়েব – প্রমাণিত দলিল

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

দলিল দেবার পরও যারা সন্দেহ পোষণ করে আর বলে আল্লাহ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)

কে হয়তো সামান্য জ্ঞান দিয়েছেন, তাদের জন্য সহীহ মুসলিমের এ হাদিসটি। মোঃ মাহাবুবুর রহমান। ≠========[=====================[

ইমাম মুসলিম (রহঃ) হযরত ‘আমর ইবনে আখতাব (আবু যায়দ) আল–আনসারী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “মহানবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের সাথে ফজরের নামায আদায় করেন; অতঃপর তিনি মিম্বরে আরোহণ করেন এবং আমাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন, যতোক্ষণ না যোহরের নামাযের সময় হয়; তিনি মিম্বর হতে অবতরণ করে নামায আদায় করেন এবং নামায শেষে আবার তাতে উঠে আমাদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন। ইতোমধ্যে আসরের নামাযের সময় হয় এবং তিনি মিম্বর হতে অবতরণ করে নামায আদায় করেন; অতঃপর তিনি নামাযশেষে আবারও মিম্বরে আরোহণ করেন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাঁর বয়ান রাখেন। পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত যা যা ঘটবে, তার সবই তিনি আমাদের বলেন। আমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি–ই সবচেয়ে জ্ঞানী যিনি এর অধিকাংশ মনে রাখতে পেরেছিলেন।” [সহীহ মুসলিম: ৪১/৬৯১৩, মুসনাদে ইমাম আহমদ]

ইলমে গায়েবের পক্ষে সহীহ হাদিস

“রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হয়রত আলী (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) কে বলেন, রাওযা খাখ নামক স্থানে পৌঁছালে একজন স্ত্রীলোককে দেখতে পারবে। তার কাছে মুশরিকদের নিকট লেখা একটি গোপন পত্র আছে। পত্রটি নিয়ে আসো। আলী (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ) বর্নিত জায়গায় পৌঁছালে উটের উপর আরোহীত একজন নারীকে দেখতে পাই। আমরা তার কাছে গিয়ে সেই গোপন পত্রটি আমাদের কাছে অর্পণ করতে বলি। সে বলল, আমার কাছে কোন পত্র নেই। আমরা উটকে বসিয়ে তল্লাসী নিলাম। কিন্তু কোন পত্র পেলাম না। তখন আমরা বললাম, রাসূলুল্লাহ মিথ্যা কথা বলেন নি। তোমাকে পত্র বের করতেই হবে। নতুবা আমরা তোমাকে উলঙ্গ করে ছাড়ব। যখন সে আমাদের কঠোর মনোভাব লক্ষ্য করলো তখন সে তার কোমরে পরিধেয় বস্ত্রের গিঁটে কাপড়ের পুটলির মধ্য থেকে পত্রখানা বের করে দিল।” [সহীহ বুখারী, ৬ষ্ঠ খন্ড, হাদিস নং ৩৬৯৪]

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সব ইলমে গায়েব কি আল্লাহর ওহী? নীচের সহীহ হাদিসের ঘটনাবলী কোন ওহীর মাধ্যমে এসেছে?

“ওহে ওহুদ পাহাড়, সুদৃঢ় থাকো। তোমাতে একজন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), একজন সিদ্দিক ও দুইজন শহীদ ছাড়া আর কেউই চড়েনি!” উমর ও উসমান ((রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু)) শহীদ হন এবং আবু বকর ((রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু)) স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বেসালপ্রাপ্ত হন। [বুখারী ৩৪৩৪, তিরমিযী (সহীহ), আবু দাউদ, আন্ নাসায়ী ও ইমাম আহমদ।]

রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আমি শপথ করে বলছি যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভালোবাসেন এমন কাউকে আগামীকাল আমি পতাকা প্রদান করবো (খায়বার যুদ্ধে), যার মাধ্যমে আল্লাহ বিজয় দান করবেন।” পরদিন সকালবেলা তিনি আলী ((রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু)) এর খোঁজ করেন। তিনি চোখের রোগে আক্রান্ত ছিলেন। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থুথু মুবারক দিলে তাঁর চোখ ভাল হয়ে যায়। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে পতাকা হস্তান্তর করেন এবং আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে বিজয় মন্ঞ্জুর করেন।” (বুখারী ৩৪৩৭)

রাসূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদেরকে হাবশা (বর্তমানের ইথিওপিয়া)-এর বাদশা নাজাশী’র মৃত্যু সংবাদ সেই দিনই শুনালেন যেদিন তিনি মারা গিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের (দীনী) ভাইয়ের জন্য মাগফেরাত কামনা কর। (বুখারী ৩৬০১)

“কাতার সোজা করে দাড়াও কারণ আমি পিছনেও দেখি।” (বুখারী ৬৮; মুসনাদ আহমাদ ৩/১৮২)

আবু মুসা আশয়ারী ((রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু)) বর্ননা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আমাকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল বিষয়ের সমস্ত ইলিম দান করা হয়েছে”। (কানযুল উম্মাল ৩১৯২৬; ত্ববরানী শরীফ; মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বা; আবু ইয়ালা!

আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আল্লাহর প্রিয় হাবীব (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুনিয়ার শুরু হতে শেষ পযর্ন্ত যা কিছু অতীতে হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যা কিছু হবে সবকিছু জানেন।

হযরত আমর ইবনে আখতার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন আমাদেরকে নিয়ে ফজরে নামাজ পড়লেন । অতঃপর মিম্বরে আরোহন করলেন এবং আমাদের উদ্দেশ্যে দীর্ঘ বক্তব্য প্রদান করলেন; এমনকি যোহরের নামাজের সময় হয়ে গেল; এক পর্যায়ে তিনি মিম্বর হতে নেমে এসে যোহরের নামাজ পড়ালেন । অতঃপর আবারো আরোহন করলেন মিম্বরে, আর বক্তব্য দেয়া শুরু করলেন, এমনকি আসরের নামাজের সময় উপস্থিত হল । অতঃপর মিম্বর হতে নেমে আসরও পড়লেন, পুণরায় মিম্বরে আরোহন করে বক্তব্য দিতে দিতে সূর্য অস্তমিত হয়ে গেল সেদিন নবীজী আমাদের সামনে অতীতে যা কিছু ছিল এবং ভবিষ্যতে যা কিছু হবে সকল বিষয়ে আমাদেরকে সংবাদ জানিয়ে দিয়েছেন । আমাদের মধ্যে যাদের স্মরণশক্তি অধিক তারা সেসব (অদৃশ্য) সংবাদ বেশি মনে রাখতে পেরে।

[সূত্রঃ সহীহ বোখারী শরীফ, হাদীস নম্বর–৬২৩০, কিতাবুল কদর; সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদীস নম্বর–২৮৯১, কিতাবুল ফিতান; সহীহ তিরমিযী শরীফ, হাদীস নম্বর–২১৯১, কিতাবুল ফিতান]

আল্লাহ কুরআনে বলছেন নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ইলমে গায়েব আছে। অথচ মিথ্যাবাদীরা পোস্ট দেয় নবীজি(সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ইলমে গায়েব নেই। আল্লাহর ও তাঁর রাসুল(সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে তারা চরম মিথ্যাবাদিতার আহস্রয় নিচ্ছে। রাব্বুল আলামিন বলেন, “আপনি যা জানতেন না – তা (আল্লহ) আপনাকে শিখিয়েছেন। কেননা, আপনার প্রতি আল্লাহর অপরিসীম করুণা রয়েছে” (৪:১১৩)। “আর তিনি (নবী) গায়েবের ব্যাপারে কৃপণ নন” (সূরা তাকভীর: ২৪)। “তিনি অদৃশ্য বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করেন না। তাঁর মনোনীত রসূল ব্যতীত।” (৭২:২৬–২৭)।

তাছাড়া অসংখ্য হাদিসে নবী (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর ইলমে গায়েবের প্রমাণ বিদ্যমান। আল–বেদায়া ওয়ান–নেহেয়ায় অসংখ্য ভবিষ্যৎ বাণীগুলো পড়লেই প্রমাণ পাওয়া যায়।

ইলমে গায়েব সম্পর্কিত আকীদা তিন ধরনের রয়েছে এবং এদের পৃথক বৈশিষ্ট্য রয়েছে । (খালিসুল ইতেকাদ গ্রন্থের ৫ পৃষ্ঠা হতে সংগৃহীত) ।

প্রথম প্রকারঃ–

১) মহান আল্লাহ তাআলা সত্ত্বাগত ভাবেই জ্ঞানী । তিনি অবগত না করালে কেউ একটি অক্ষরও জানতে পারে না ।

২) আল্লাহ তাআলা হুযুর আলঅইহিস সালাম ও অন্যান্য আম্বিয়া কেরাম(আলাইহিস সালাম) কে তাঁর আংশিক অদৃশ্য বিষয়াদি জ্ঞান দান করেছেন ।

৩) হুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান সমস্ত সৃষ্টিকূল থেকে বেশী । হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) ও খলীল (আলাইহিস সালাম) মৃত্যুর ফিরিশতা এবং শয়তানও সৃষ্টিকূলের অন্তর্ভূক্ত ।

এ তিনটি বিষয় ধর্মের অত্যাবশ্যকীয় বিষয়াদির অন্তর্ভূক্ত বিধায় এগুলো অস্বীকার করা কুফর ।

দ্বিতীয় প্রকারঃ–

১) আম্বিয়া কিরাম (আলাইহিস সালাম) এর মাধ্যমে আওলিয়া কিরাম (রহমতুল্লাহে আনহু) ও ইলমে গায়বের কিয়দংশ পেয়ে থাকেন ।

২) আল্লাহ তাআলা হুযুর আলাইহিস সালাকে পঞ্চ গায়বের অনেক ক্ষেত্রে সুবিস্তৃত জ্ঞান দান করেছেন ।

যে এ দ্বিতীয় প্রকারের ইলমে গায়বকে অস্বীকার করবে সে পথভ্রষ্ট ও বদময হাবী বলে গণ্য হবে । কেননা এটা শত শত হাদীসকে অস্বীকার করার নামান্তর ।

তৃতীয় প্রকারঃ–

১) কিয়ামত কখন হবে সে সম্পর্কেও হুযুর আলাইহিস সালাম জ্ঞান লাভ করেছিলেন ।

২) বিগত ও অনাগত ভবিষ্যতের সমস্ত ঘটনাবলী যা লওহ মাহফুজে সুরক্ষিত আছে সে সবের জ্ঞান বরং এর চেয়েও বেশী জ্ঞান হুযুর আলাইহিস সালামকে দান করা হয়েছে ।

৩) হুযুর আলাইহিস সালামকে রূহের হাকীকত বা নিগুঢ় তত্ত্ব এবং কুরআনেরসমস্ত অস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থবোধক বিষয়াদির জ্ঞান দান করা হয়েছে । –সুত্রঃ জা’আল হক ১ম খন্ড–

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইলমে গায়েব নিয়ে কিছু বেয়াদব ঠাট্টা করে বলে এমন গায়েব তো আমরাও জানি। তাদের আমল বরবাদ হয়ে গেছে। দেখুন নিচের আয়াতটি:

আর তিনি আদমকে সমস্ত বস্তুর নাম শিখালেন। অতঃপর সেগুলো ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন এবং বললেন, আমাকে এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক। তারা বলল, তুমি পবিত্র! তুমি আমাদেরকে যা শিখিয়েছ তা ব্যতীত আমরা কিছুই জানি না। নিশ্চয় তুমিই জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা। তিনি বললেন, হে আদম, তাদেরকে এসবের নাম বলে দাও। তারপর তিনি তাঁদেরকে সে সবের নাম বলে দিলেন। তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, আমি আসমান ও যমীনের সকল অদৃশ্যের ব্যাপার অবগত রয়েছি? এবং তোমরা যা প্রকাশ কর আর যা গোপন কর সবই জানি! এবং যখন আমি আদমকে সেজদা করতে ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, ইবলীস ব্যতীত সবাই সিজদা করলো। সে অস্বীকৃতি জানালোএবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল। (সূরা বাক্বারা ৩১–৩৪)

আদম (আলাইহিস সালাম) কে আল্লাহ সব শিখালেন। ফেরেস্তারা এ নিয়ে যুক্তিতর্ক না করলেও ইবলিশ তার শয়তানি বুদ্ধিতে করলো। আর বলল, সে তো মাটির তৈরি আর আমি আগুনের। অন্যের শিখানো জ্ঞানে আদম (আ) এর কৃতিত্ব কী? যেমন বর্তমানে শয়তানের শীষ্যরা বলে থাকে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এলমে গায়েবের ব্যাপারে। আল্লাহ তার ৯ লক্ষ বছরের সব আমল বরবাদ করে দিলেন।

প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইল্‌মে গাইব বা অদৃশ্য জ্ঞান

কোরআন শরীফের আলোকে :-

عالم الغيب فلا يظهرعلى غيبه احدا– الا من ارتضى من رسول فانه يسلك من بين يديه ومن خلفه رصدا–

১।

অর্থ : অদৃশ্যের জ্ঞাতা, সুতরাং আপন অদৃশ্যে জ্ঞানের উপর কাউকে এ ক্ষমতাবান করেন না, কিন্তু তাঁর মনোনিত রসূলগণ ব্যতীত যেহেতু তাদের অগ্রে পশ্চাতে পাহারা নিয়োজিত করে দেন। (সূরা জীন, আয়াত নং ২৬–২৭)

وما هو على الغيب بضنين–

২।

অর্থ : তিনি (প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অদৃশ্য বিষয় বর্ণনা করার ব্যাপারে কৃপণ নন। (সূরা তাকভীর, আয়াত নং ২৪)

ماكان الله ليذر المؤمنين على ما انتم عليه حتى يميز الخبيث من الطيب وما كان الله ليطلعكم على الغيب ولكن الله يجتبى من رسله من يشاء فا منوا بالله ورسله وان تؤمنوا وتتقوا فلكم اجرعظيم–

৩।

অর্থ : আল্লাহ মুসলমানদের এ অবস্থায় ছাড়াবার নন যে অবস্থায় তোমরা রয়েছ যে পর্যন্ত না পৃথক করবেন অপবিত্রকে পবিত্র থেকে। আল্লাহর শান এ নয় যে, হে সর্বসাধারণ! তোমাদেরকে অদৃশ্যের জ্ঞান দিয়ে দিবেন। তবে আল্লাহ নির্বাচিত করেন তাঁর রাসূলগণের মধ্য থেকে যাকে চান। সুতরাং ঈমান আনয়ন কর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর; এবং যদি তোমরা ঈমান আনয়ন কর এবং পরহেজগারী অবলম্বন করো তবে তোমাদের জন্য মহা প্রতিদান রয়েছে। (সূরা আলে ইমরান, পারা –৩, আয়াত নং ১৭৯,)।

ولو لا فضل الله عليك و رحمته لهمت طائفلة منهم ان يضلوك و ما يضلون الا انفسهم و ما يضرونك من شئ و انزل الله عليك الكتب و الحكمة وعلمك ما لم تكن تعلم و كان فضل الله عليك عظيما–

৪।

অর্থ : এবং হে মাহবুব! যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া আপনার উপর না থাকত তবে তাদের মধ্যকার কিছু লোক এটা চাচ্ছে যে, আপনাকে ধোকা দিবে, এবং তারা নিজেরা নিজেদেরকেই পথভ্রষ্ট করেছে। এবং আপনার কোন কিছুই ক্ষতি করবে না আর আল্লাহ আপনার উপর কিতাব ও হিকমত অবর্তীন করেছেন। এবং আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা কিছু আপনি জানতেন না এবং আপনার উপর আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে। (সূরা নিসা, আয়াত নং ১১৩, পারা–৫)।

্থ কামিল (এম.এ.) ফিকহ্‌ ফলপ্রার্থী, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা।

এ আয়াত প্রসঙ্গে তাফসীরে খাজীনে রয়েছে :

يعنى من احكام الشؤع وامور الدين وقيل علمك من علم الغيب مالم تكن تعلم وقيل معناه علمك من خفيات الامور واطلعك على ضمائر القلوب وعلمك من احوال المنافقين وكيدهم–

অর্থ : শরীয়তের বিধান ও ধর্মীয় বিষয়বলী। আর বলা হয়েছে–আপনার শিক্ষা দিয়েছেন ঐ ইলমে গাইয় যা আপনি জানতেন না। বলা হয়েছে এর অর্থ হলো এই যে, আপনাকে গোপন বিষয়াবলী, অন্তরসমূহের গোপন কথা, মুনাফিকদের অবস্থাদি ও তাদের ষড়যস্ত্রগুলোর জ্ঞান দান করা হয়েছে।

এ আয়াত শরীফ প্রসঙ্গে তাফসীরে জালালাইন শরীরে রয়েছে : اى من الاحكام والغيب–

অর্থ : শরীয়তের বিধান ও ইলমে গাইব শিক্ষা দিয়েছেন।

وما كان الله ليطلعكم على الغيب ولكن يجتبى من رسله من يشاء–

৫।

অর্থ : আর (হে সাধারণ মানুষ !) এটা আল্লাহর শান নয় যে, অদুশ্য জ্ঞান সম্পর্কে তোমাদেরকে অবহিত করবেন। তবে আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন। (তাঁকে অদুশ্য জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত করেন)। (সুরা আল ইমরান আয়াত নং ১৭৯)

এই আয়াত প্রসঙ্গে তাফসীরে বায়যাবীতে রয়েছে :

وما كان الله ليؤتى احدكم علم الغيب فيطلع على ما فى القلوب من كفر وايمان ولكن الله يجتبى لرسالته من بشاء فيوحى الله وبخبره ببعض المغيبات–

অর্থ : (হে সাধারণ মানুষ) এটা আল্লাহর কাজ নয় যে, তোমাদের মধ্যে কাউকে ইলমে গায়েব দান করবেন এবং অন্তরের কুফুর ও ঈমান সম্পর্কে অবহিত করবেন। তবে এ মহামর্যাদা ও রিসালাতের জন্য আল্লাহ যাকে মনোনিত করেন। অতঃএব তাঁর প্রতি ওহী পাঠান এবং কতেক অদৃশ্যের সংবাদ তাকে প্রদান করেন।

এই আয়াত শরীফ প্রসঙ্গে তাফসীরে খাজীনে এসেছে :

ولكن الله يصطفى ويختار من رسله فيطلعه على مايشاء من غيبه–

অর্থ : কিন্তু আল্লাহ রাসূলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনিত ও নির্বাচিত করেন। অতঃপর তাঁর অদৃশ্যে জ্ঞান থেকে যতটুকু ইচ্ছা তাঁকে দান করেন।

এই আয়াত সম্পর্কে তাফসীরে জালালাইন শরীফে রয়েছে :

ولكن الله يجتنبى ويختار من رسله فيطلعه على مايشاء من غيبه كما اطلع النبى صلى الله عليه و سلم على حبل المنافقين–

অর্থ : কিন্তু আল্লাহ রাসূলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা মনোনিত ও নির্বাচিত তাঁকে গাইব সম্পর্কে অবহিত করেন। যেমন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে মুনাফিকদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেছেন।

ربهم يحشوما من دا بة فى الارض و لاطائر يطير بجناحيه الاامم امثالكم ما فرطنا فى الكتب من شئ ثم الى رون–

৬।

অর্থ : এবং নেই কোন ভূ–পৃষ্ঠে বিচরণকারী এবং নেই কোন পাখি, যা আপন ডানার সাহায্যে ওড়ে, কিন্তু সবই তোমাদের মতো উম্মত আমি এ কিতাবের মধ্যে কোন কিছু লিপিবদ্ধ করতে ত্রুটি করিনি। অতঃপর স্বীয় প্রতিপালকের দিকে উঠানো হবে।

(সূরা আনআম, আয়াত নং ৩৮, পারা ৬)

وما كان هذا القران ان يفترى من دون الله ولكن تصديق الذى بين يديه و تفصيل الكتب لاريب فيه من رب العلمين–

৭।

অর্থ : এবং এ কোরআনের ক্ষেত্রে একথা শোভা পায়না যে, সেটাকে কেউ নিজ পক্ষ থেকে রচনা করেনেবে, আল্লাহ ব্যতিত, হ্যাঁ সেটা পূর্ববর্তী কিতাব সমূহের সত্যায়ন এবং লওহ মাহফুজ এর মধ্যে যা কিছু লেখা আছে সব কিছুরই বিশদ ব্যাখ্যা, সেটাতে কোন সন্দেহ নেই যে, (সেটা) প্রতিপালকের পক্ষ থেকে। (সূরা য়ূনুস, আয়াত নং ৩৭, পারা ১০)

و يوم نبعث فى كل امة شهيداعليهم من انفسهم وجئنابك شهيدا على هولاء ونزلنا عليك الكتب تبيانا لكل شئ وهدى و رحمة وبشرى للمسلمين–

৮।

অর্থ : এবং যে দিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের এর মধ্যে একজন সাক্ষী তাদের মধ্য থেকে উঠাবো যে, তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে। এবং হে মাহবুব! আপনাকে তাদের সবার উপর সাক্ষী বানিয়ে উপস্থিত করবো এবং আমি আপনার উপর এ কোরআন অবর্তীন করেছি, যা প্রত্যেকে বস্তুর সুস্ষ্ট বিবরণ, পথ নির্দেশনা, দয়া ও সুসংবাদ মুসলমানদের জন্য। (সূরা নাহ্‌ল, আয়াত নং ৮৯)

الرحمن– علم القران–

অর্থ: পরম দয়ালু! আপন মাহবুবকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। (সূরা আর রহমান, আয়াত নং ১–২)

হাদীস শরীফের আলোকে :-

৯। : হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে দাঁড়িয়া ছিলেন তিনি (প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদেরকে সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কে কে জান্নাতে যাবে, তাদের স্থানসমূহ বলে দিলেন। এবং কে কে জাহান্নামে যাবে তাদের স্থানসমূহ বলে দিলেন। তাদের মধ্যে যারা স্মরণ রাখার স্মরণ রেখেছে যারা ভুলার ভুল গেছে। (বুখারী শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ৫০৬)

১০।হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু হইতে বর্ণিত,তিনি বলেন, আবুল কাসেম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার প্রাণ যাঁহার হাতে তাঁহার শপথ (করে বলিতেছি যে) আমি যাহা জানি তাহা যদি তোমরা জানিতে তাহা হইলে কাঁদিতে বেশী আর হাসিতে খুব কম। (বুখারী শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ৪৫৬)

১১। : হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন, যায়েদ ইবনে হারেসা, জাফর ইবনে আবু তালিব ও আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহার মৃত্যু সংবাদ যুদ্ধের ময়দান থেকে আসার পূর্বেই রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন রণক্ষেত্রের বিবরণ। তিনি এভাবে দিয়েছেন, যায়েদ পতাকা হাতে নিয়েছে, সেও শহীদ হয়েছে। অতপর আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা পতাকা ধরেছে, সেও শহীদ হয়েছে। (বর্ণনাকারী বলেন) এই সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চক্ষুদ্বয় থেকে অশ্রুধারা প্রবাহিত হচ্ছিল। এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর তরবারি সমূহের এক তরবারি (অর্থাৎ খালিদ ইবনে ওয়ালীদ) ঝান্ডা হাতে তুলে নিয়েছেন। তারপর আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের উপর মুসলমানদেরকে বিজয় দান করেছেন। (বুখারী শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা নং ৫৩৩, ১৫ লাইন পরে)

১২। : হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইয়ামান দেশ থেকে এক ব্যক্তি তোমাদের কাছে আসবে। তাঁর নাম হবে “ওয়াইস”।

একজন মাতা ছাড়া ইয়ামান দেশে তাঁর আর কোন নিকটতম আত্নীয়–স্বজন থাকবে না। তাঁর দেহে ছিল শ্বেত–ব্যাধি। এজন্য তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করেছিলেন। ফলে এক দিরহাম অথবা এক দীনার পরিমান জায়গা ছাড়া আল্লাহ তায়ালা তাঁর সেই রোগটি দূর করে দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা যে কেউ তাঁর সাক্ষাত পাবে, সে যেন নিজের মাগফিরাতের জন্য তাঁর কাছে দোয়া প্রার্থনা করবে। অপর এক বর্ণনায় আছে হযরত ওমর (রা) বলেছেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তাবেয়ীদের মধ্যে সর্বোত্তম এক ব্যক্তি তাঁর নাম ওয়াইসা, তাঁর শুধু একজন মা রয়েছে, এবং তাঁর শরীরে শ্বেত দাগ থাকবে। সুতরাং তোমরা নিজেদের মাগফিরাতের দোয়ার জন্য তাঁর কাছে অনুরোধ করবে। (মুসলিম শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ৫৮১, ২৫ লাইন পরে)।

১৩। : হযরত জাবের ইবনে সামুরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, বারজন খলিফা অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত ইসলাম শক্তিশালী থাকবে। তাঁরা সকলেই হবেন কোরাইশ বংশোদ্ভুত। অপর এক রেওয়ায়াতে আছে, মানুষের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা সঠিকভাবে চলতে থাকবে বারজন খলীফা হওয়া পর্যন্ত। তারা সকলেই হবেন কোরাইশ বংশের। অপর আর এক রেওয়ায়াতে আছে {রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন} বারজন খলিফা অতিবাহিত হওয়া পর্যন্ত ইসলাম শক্তিশালী থাকবে। তাঁরা সকলেই হবেন কোরাইশ বংশোদ্ভুত। (বুখারী ও মুসলিম শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ৫৫০, ২১ লাইন পরে)

১৪। হযরত ইবনে ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, হে আল্লাহ! আমাদের এবং আমাদের শাম দেশের উপর বরকত দান করুন। হে আল্লাহ ! আমাদের জন্যে আমাদের ইয়ামেন দেশে বরকত দান করুন ! তখন সাহাবীরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নজদবাসীর জন্যেও দোয়া করুন। তিনি আবারোও বললেন, হে আল্লাহ ! আমাদের জন্যে আমাদের শাম দেশের বরকত দান করুন। হে আল্লাহ আমাদের জন্যে আমাদের ইয়ামেনে দেশে বরকত দান করুন। এবারও সাহাবীরা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমাদের নজদ বাসীদের জন্যও দোয়া করুন। বর্ণনাকারী বললেন আমার ধারনা, তিনি তৃতীয়বার বললেন, সেখানে তো ভূকম্পন এবং ফেতনা রয়েছে এবং সেখানে শয়তানের শিং উদিত হবে। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ৫৮২, ৯ লাইন পরে)

১৫।হযরত যয়নব আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু এর স্ত্রী বলেন, একদিন রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উপদেশ দিলেন এবং বললেন, হে নারী সমাজ! তোমরা সদকা কর যাকাত দাও যদিও তোমাদের গহনা–অলংকার হয়। কেননা কিয়ামতের দিন তোমরাদের মধ্যে জাহান্নামের অধিক অধিবাসী হবে। (তিরমিজি শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ১৫৯, ২৫লাইন পরে)।

১৬lহযরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন, হযরত সা’দ ইবনে মুয়াজ যখন ইন্তেকাল করেন, আমরা রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তার জানাযায় হাজির হলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক জানাযা পড়ার পর তাকে যখন কবরে রাখা হল ও মাটি সমান করে দেওয়া হল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে দীর্ঘ সময় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করলেন, আমরাও তাঁর সাথে দীর্ঘ তাসবীহ পাঠ করলাম। অতপর তিনি তাকবীর বললেন। আমরা তাকবীর বললাম। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কেন আপনি এমন তাসবীহ ও তাকবীর বললেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ নেক ব্যক্তির পক্ষে তার কবর অত্যন্ত সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এতে আল্লাহ তায়ালা তার কবরকে প্রশস্ত করে দিলেন। (মুসনাদে আহমদ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ২৬, ১২ লাইন পরে)।

১৭। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন, রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় (শেষ যুগে) আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের (অন্তর থেকে) টেনে বের করার মাধ্যমে ইসলাম উঠিয়ে নেবেন না; বরং আলেমদের উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমেই তিনি ইলম উঠিয়ে নেবেন। এমনকি যখন (দুনিয়াতে) কোন আলেম অবশিষ্ট থাকবে না, তখন মানুষ মূর্খ লোকদেরকে নেতা হিসাবে গ্রহণ করবেন। অতঃপর তাদের নিকট মাসায়ালা জিজ্ঞাসা করা হবে আর তারা না জেনেই ফতোয়া দেবে। ফলে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করবে। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ৩৩, ৮ লাইন পরে)।

১৮। হযরত জাবের ইবনে সামুর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, মুসলমানদের একদল নিশ্চয় ” কিসরার “(পারস্যের) সম্রাট বংশের গুপ্ত সম্পদ জয় করবে। যা একটি শ্বেত প্রাসাদে রাক্ষিত রয়েছে। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ৪৬৬, ৭ লাইন পরে)।

১৯। হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু) বলেন, একবার আমরা মক্কা এবং মদীনার মধ্যবর্তী স্থানে হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু এর সঙ্গে ছিলাম, তখন আমরা নতুন চাঁদ দেখার চেষ্টা করি। আমি ছিলাম তীক্ষ্ন দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি। সুতরাং আমি চাঁদ দেখে ফেললাম। আর আমি ছাড়া সেখানে অন্য কেউই চাঁদ দেখতে পেয়েছে বলে দাবি করেনি। আমি হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু কে বললাম, আপনি কি চাঁদ দেখেছেন না? কিন্তু তিনি তা দেখতে পাচ্ছিলেন না। বর্ণনাকারী বলেন, তার পর ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বললেন, অচিরেই আমি আমার বিছানায় শুয়েশুয়ে তা দেখব। (হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন) অতপর ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বদর যুদ্ধের ঘটনাবলী বর্ণনা করতে লাগলেন এবং বললেন, যুদ্ধের একদিন আগে রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কে ঐ সব স্থানে গুলো দেখিয়ে দিলেন,যেই যেই স্থানে কাফেরদে লাশ পরে থাকবে। ইন্‌শাআল্লাহ আগামীকাল এই স্থানে অমুকের লাশ পরবে। এই বলে তিনি এক একটি করে নিহতের স্থান সমূহ দেখালেন। হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন,সৈই মহান সত্তার কসম,যিনি তাকে সত্যে সহকারে প্রেরণ করেছেন, যে সকল স্থান রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিদ্দিষ্ট করেছিলেন, উক্ত স্থান থেকে একটু খানি এদিক ওদিক সরে পরেনি। (বর্ণনাকারী বলেন) অতপর তাদের কে একটি (অনাবাদ) কূপের মধ্যে একটির ওপর একটি কে নিক্ষপ করা হল। এরপর রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কূপের কাছে এসে বললেন, হে অমুকের পুত্র অমুক! হে অমুকের পুত্র অমুক ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাদের কে যে ওয়াদা দিয়েছেন, তোমরা কি তা ঠিক ঠিক পেয়েছ? তবে আমার আল্লাহ আমাকে যা ওয়াদা দিয়েছেন, আমি অবশ্য তা ঠিক ঠিক ভাবে পেয়েছি। তখন হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি কিরূপে এখন দেহসমূহের কথা বললেন, যাদের মধ্যে কোন প্রাণ নেই? তিনি বললেন আমি তোমাদের কে যা বলছি, তোমরা তা তাদের চেয়ে অধিক শুনছ না, অবশ্য তারা আমার কথার কোন জওয়াব দিতে ষক্ষম নয়। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ৫৪৩, ১৪ লাইন পরে)।

২০।হযরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন, আমি রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দেখেছি কোরবানী দিন তিনি আরোহণে থেকে কাকর মারছেন এবং বললেন তোমরা আমার কাছ থেকে তোমাদের হজ্জ্বের আহকাম শিখে নাও। আমি জানি না সম্ভবত আমার এ হজ্জ্বের পর আর আমি হজ্জ্ব করতে পারব না। (বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ সূত্রে মিশকাত শরীফ পৃষ্ঠা ২৩০, ২৩ লাইন পরে)।

২১। হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসরের পর আমাদের মাঝে খুতবার উদ্দেশ্যে দাঁড়ালেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত যাহা কিছু সংঘটিত হইবে উহার সব কিছু আলোচনা করিলেন। সেই কথাগুলি যে স্মরণ রাখিতে বলিয়াছে সে স্মরণ রাখিয়াছে; আর যে ভুলিবার সে ভুলিয়া গিয়াছে। উক্ত ভাষণে তিনি যাহা বলিয়াছেন; তন্মধ্যে (এই কথাও ছিল) দুনিয়া মিষ্টি ও সুস্বাদু। আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবীতে তোমাদিগকে তাঁহার প্রতিনিধি নিযুক্ত করিয়া তাকাইয়া আছেন, তোমরা কি কাজ করিতেছে। সাবধান ! দুনিয়া হইতে বাঁচিয়া থাক এবং বাঁচিয়ে থাক নারী সম্প্রদায় হইতে। তিনি আরও বলিয়াছেন : প্রত্যেক অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর জন্য কিয়ামতের দিন দুনিয়াতে অঙ্গীকার ভঙ্গ পরিমাণ একটা পতাকা হইবে। রাষ্ট্র পরিচালকের অঙ্গীকার ভঙ্গই হইবে সর্বাপেক্ষা বড়। তাহার পতাকা তাহার পশ্চাদ্দেশের নিকটই পোঁতা হইবে। তিনি আরও বলিয়াছেন : তোমাদের কেহ যেন মানুষের ভয়ে উহা ন্যায় ও সত্য কথা বলা হইতে বিরত না থাকে, যখন সে উহাকে সত্য বলিয়া জানে। অপর এক বর্ণনায় আছে; যদি তোমাদের কেহ কোন মন্দ কাজ দেখে, সে যেন কাহারও ভয়ে উহা পরিবর্তন করিতে বিরত না থাকে।এতদ্‌শ্রবণে বর্ণনাকারী হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) কাঁদিয়া ফেলিলেন এব্‌ং বলিলেন, নিশ্চয় আমরা অন্যায় হইতে দেখিয়াছি, কিন্তু মানুষের ভয়ে সেই সম্পর্কে মুখ খুলিয়া নিষেধ করিতে পারি নাই। অতঃপর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিয়াছেন : স্মরণ রাখিও ! আদম সন্তানকে বিভিন্ন শ্রেণীতে সৃষ্টি করা হইয়াছে। তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ এমন আছে, যে মুমিন হিসাবে জন্মলাভ করে, মুমিন হিসাবে জীবন কাটায় এবং মুমিন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আবার তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ এমনও আছে, যে কাফের হিসাবে পয়দা হয়। কাফের অবস্থায় জীবন অতিবাহিত করে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। আবার কেহ কেহ এমনও আছে, যে মুমিন হিসাবে জন্মগ্রহণ করে, মুমিন অবস্থায় জীবন যাপন করে এবং মৃত্যুবরণ করে কাফের অবস্থায়। পক্ষান্তরে তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ এমনও আছে, যে পয়দা হয় কাফের হিসাবে, জীবন কাটায় কাফের অবস্থায়, কিন্তু মৃত্যুবরণ করে মুমিন অবস্থা। অতঃপর বর্ণনাকারী বলেন, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্রোধ সম্পর্কে আলোচনা করিলেন : (ইহারও প্রকারভেদ রহিয়াছে) তাহাদের মধ্যে কেহ কেহ এমন আছে যে, সে শীঘ্র রাগ হয় আবার শীঘ্র ঠান্ডা হইয়া যায়। ফলে একটি অপরটির সম্পূরক। আবার কেহ কেহ এমন আছে, যে দেরীতে রাগ হয় এবং ঠান্ডাও হয়। ইহাও একটি অপরটির ক্ষতিপূরক। তবে তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যে রাগ দেরীতে করে এবং শীঘ্রই উহা প্রশমিত হইয়া যায়। আর সেই ব্যক্তিই সর্বাপেক্ষা মন্দ, যে তাড়াতাড়ি ক্রোধান্বিত হয় এবং উহা প্রশমিত হয় দেরীতে। তারপর তিনি বলিলেন : তোমরা ক্রোধ হইতে বাঁচিয়া চল। কেননা, উহা হইল আদম সন্তানের অন্তরে একটি জলন্ত আঙ্গার। তোমরা কি দেখ না; তাহার রগ–শিরা–উপশিরাসমূহ ফুলিয়া উঠে এবং চক্ষুদ্বয় লাল হইয়া যায়? সুতরাং তোমাদের কেহ যখন ক্রোধ উপলদ্ধি করে তখন সে যেন শুইয়া পড়ে এবং যমীনের সহিত মিশিয়া থাকে। হযরত আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, অতঃপর তিনি ‘ঋণ’ সম্পর্কে আলোচনা করেন। তিনি বলেন : তোমাদের মধ্যে কেহ কেহ এমন আছে, যে উত্তম ব্যবহারে ঋণ পরিশোধ করে। আর যখন তাহার পাওনা উসুল করিতে যায় তখন অশ্লীল ব্যবহার করে। ফলে ইহার একটি অপরটির সম্পূরক। আবার কেহ এমন আছে, যে ঋণ পরিশোধকালে মন্দ আচরণ করে এবং কাহারও নিকট পাওনা হইলে উসুল করার সময় সুন্দর ব্যবহার উসুল করে। ইহাতেও একটি অপরটির সম্পূরক। তবে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সে, যে ঋণ আচারণ প্রদর্শন করে এবং কাহারও নিকট হইতে পাওনা উসূলের সময়ও দুর্ববহার করে। হযরত আবূ সাঈদ রাঃ বলেন, (হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বক্তৃতা চলিতেছিল) এতক্ষণে সূর্য খেজুর গাছের মাথায় এবং দেওয়ালের কিনারয় পৌঁছিল। এই সময় তিনি বলিলেন : জানিয়া রাখ ! আজিকার পূর্ণ একটি দিনের যে ক্ষুদ্র সময়টুকু এখনও বাকী আছে, অনুরূপভাবে এই দুনিয়ারও অতীতের তুলনায় এতটুকু পরিমাণই অবশিষ্ট আছে। (তিরমিজি)

তাবলীগ জামায়াতে বড় কিতাব ফাজায়েলে আ’মাল এর মধ্যে আছে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইলমে গাইব জানেন :-ইমাম মুহাম্মদ বিন মকিক মুদখাল কিতাবে এবং ইমাম আহমাদ কুস্তালানী মাওয়াহাব লুদুনিয়া কিতাবে লিখিয়াছেন এবং অন্যান্য ইমামগণ লিখিয়াছেন হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হায়াত এবং মৃত্যুর মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। অর্থাৎ তিনি দুনিয়াতে থাকা অবস্থায় যেভাবে উমামতকে চিনতেন, উম্মতের অবস্থা জানতেন, উম্মতের নিয়্যত ইচ্ছা এবং মনের কল্পনা জানতেন এখনও সেইভাবে জানেন। এই সকল তাঁহার নিকট ও গোপন নহে। (ফাজায়েলে আমল ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৭৬১)।

উক্ত কিতাবের ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৭৬১ এ উল্লেখ আছে যে, “আল্লামা ছাখাবী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু আবু বকর বিন মুহাম্মদ হইতে বর্ণনা করিয়াছেন আবু বকর বিন মুহাম্মদ বলিয়াছেন আমি আবু বকর বিন মুজাহিদের নিকট উপস্থিত ছিলাম ঐ সময় হযরত শিবলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু আসিলেন। শিবলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু কে দেখিয়া আবু বকর বিন মুজাহিদ শিবলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু এর সাথে কোলা কোলি করিয়া তাঁহার কপালে চুমু দিলেন। আবু বকর বিন মুহাম্মদ বলেন আমি এই ঘটনা দেখিয়া আবু বকর বিন মুজাহেদকে বলিলাম হুযুর আপনি শিবলীর সাথে এই ব্যবহার করিলেন, অথচ আপনি এবং বাগদাদের সকল আলেমগণ মনে করেন শিবলী একজন পাগল। আবু বকর মুজাহিদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু বলিলেন রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি যে কাজ করিতে দেখিয়াছি আমি সেই কাজ করিয়াছি। অতপর তিনি স্বপ্নের কথা ব্যক্ত করিলেন, আমি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে স্বপনে দেখিয়াছি শিবলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তাঁহার দরবারে উপস্থিত হইয়াছে। আর রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়াইয়া শিবলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু সাথে কোলা কোলি করিলেন এবং তাঁহার কপালে চুম্মুন দিলেন। আমি রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করিলাম রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলিলেন যে, শিবলী প্রতি নামাযের পর সূরা তাওবার শেষ আয়াত পড়িয়া সাল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া মুহাম্মদ তিন বার পড়িতেন তাঁর এই আমল ৮০ বছর যাবত চলিতেছে সুবহানাল্লাহ। বুঝা গেল রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিবলীর আমল দেখিতেন এবং কত বৎসর আমল করিতেছে তাও রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানেন।

কতেকগুলো যুক্তিসঙ্গত তথ্যাবলী থেকেও পূর্বাপর যাবতীয় مَاكَانَ وَمَايَكوْن বিষয়ের জ্ঞানের যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়। সে সমস্ত দলীল প্রমাণ নিম্নে দেয়া গেল।

(১) হুযুর সায়্যিদুল আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম হলেন খোদার রাজত্বের উযীরে আযম তথা খলীফায়ে আযম। হযরত আদম (আলাইহিস সালাম) কে আল্লাহর খলীফা মনোনীত করা হয়েছিল। তাহলে নিঃসন্দেহ হুযুর আলাইহিস সালাম সেই রাজত্বের খলীফায়ে আযম এবং পৃথিবীতে বিশ্বনিয়ন্তার প্রতিনিধি। রাজ্যে নিযুক্ত শাসকের দুটো গুণ থাকা আবশ্যক, এক, জ্ঞান, দুই, ইখতিয়ার বা কাজ করার স্বাধীনতা।

এ পার্থিব রাজত্বের শাসকগণ যতবড় পদমর্যাদার অধিকার হন সে অনুপাতে তাদের জ্ঞান কর্মক্ষমতাও বেশী থাকে। কালেকটর বা জিলা প্রশাসকের সম্পূর্ণ জিলা সম্পর্কে জ্ঞান ও সমগ্র জিলার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। ভাইসরয় বা গভর্নরের সমগ্র দেশের জ্ঞান ও অধিকার প্রয়োগের ক্ষমতা থাকা জরুরী। কেননা এ দুটি গুণ ব্যতীত তিনি শাসন করতে পারেন না, রাজকীয় ফরমানও প্রজাদের মধ্যে জারী করতে পারবেন না।

অনুরূপ নবীগণের মধ্যে যার যতবড় পদমর্যাদা রয়েছে তার সে অনুপাতে জ্ঞান ও ক্ষমতা রয়েছে। মহাপ্রভু আল্লাহ আদম (আলাইহিস সালাম) এর খেলাফত প্রমাণ করেছেন তার জ্ঞানেরই ফলশ্রুতি রূপে। অর্থাৎ আদম (আলাইহিস সালাম) কে এত ব্যাপক জ্ঞান দান করেছেন যা আল্লাহর প্রতিনিদিত্বের সহিত সঙ্গতিপূর্ণ। আর ফিরিশতাগণের দ্বারা সিজদা করানো তার বিশেষ ক্ষমতার প্রমাণবহ। ফিরিশতাগণও তার কাছে মাথা নত করেছেন। অতএব নবী করীম (আলাইহিস সালাম) যেহেতু সমগ্র সৃষ্টি জগতের নবী এবং আসমান যমীনের সমস্ত লোক তার উম্মত সেহেতু তাকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) অন্যান্য সমস্ত নবীগণের তুলনায় বেশী জ্ঞান ও ক্ষমতা দেয়ার প্রয়োজন ছিল। এ জন্যই তার থেকে অনেকে মুজিযা প্রকাশ পেয়েছে।

যেমন তিনি আঙ্গুলের ইঙ্গিতেই চন্দ্রকে দ্বিখণ্ডিত করেছেন। ডুবন্ত সূর্যকে ফিরিয়ে এনেছেন, মেঘকে নির্দেশ দেওয়ার সাথে সাথে পানি বর্ষণ করেছে, আবার সেই মেঘ খন্ডকে হুকুম করার সাথে সাথে বর্ষণ বন্ধ হয়ে গেল। এগুলো হলো তার খোদা প্রদত্ত ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ।

(২) মৌলভী কাসেম নানাতুবী সাহেব তাহযিরুন নাস কিতাবে লিখেছেন নবীগণ জ্ঞানের দিক দিয়ে উম্মত থেকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়ে থাকেন, আর বাহ্যিকভাবে আমলের দিক দিয়ে অনেক সময় উম্মত নবীকেও অতিক্রম করে যায়, এতে বোঝা গেল যে আমলের ক্ষেত্রে উম্মত নবীকে অতিক্রম করতে পারে কিন্তু জ্ঞানের দিক থেকে নবীর জ্ঞান অপেক্ষাকৃত বেশ হওয়া প্রয়োজন। হুযুর আলাইহিস সালামের উম্মতের মধ্যে ফিরিশতাও অন্তর্ভুক্ত।

কুরআনেই বলা হয়েছেঃ لِيكوْنَ لِلْعلَمِيْنَ نَذِيْرًا (যাতে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) সমস্ত জগৎবাসীদের জন্য ভীতি প্রদর্শনকারী হন) তাহলে নিঃসন্দেহেহুযুর আলাইহিস সালামের জ্ঞান ফিরিশতাগনের তুলনায় বেশী হওয়া প্রয়োজন। অন্যথায় কোন গুণের দিক দিয়ে হুযুর আলাইহিস সালাম উম্মত থেকে শ্রেষ্ঠ হবেন? লওহে মাহফুজের দায়িত্বে নিযুক্ত ফিরিশতাগণেরতো যা কিছু হয়েছে ও হবে مَاكَانَ وَمَايَكُوْن সে সব কিছুর জ্ঞান রয়েছে। সুতরাং হুযুর আলাইহিস সালামের আরও অধিক জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

(৩) কয়েক বছর উপযুক্ত শিক্ষকের সান্নিধ্যে থাকলে মানুষ জ্ঞানী হয়ে যায়। হুযুর আলাইহিস সালাম জন্ম গ্রহণের আগে কোটি কোটি বছর আল্লাহর মহা দরবারে অবস্থান করেছেন। এমতাবস্থায় হুযুর পূর্ণ আলেম হবেন না কেন?

তাফসীরে রুহুল বয়ানে– لَقَدْ جَاءَكُمْالخ বলা হয়েছে যে একদা হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম হুযুরের সমীপে আরয করলেন একটি নক্ষত্র সত্তর হাজার বছর পর পর উদিত হয়। আমি এটিকে বাহাত্তর হাজার বার আলোক উদ্ভাসিত দেখেছি। তখন হুযুর আলাইহিস সালাম ইরশাদ ফরমানঃ আমিই ছিলাম সেই নক্ষত্র। হিসেব করে দেখুন কত কোটি বছর মহান আল্লাহর দরবারে অবস্থান করেছিলেন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।

৪) ছাত্র বা শিষ্যের জ্ঞানের মধ্যে অপূর্ণতা থাকলে তা কেবল চারটি কারণেই হতে পারে–

এক, শাগরিদ অনুপযুক্ত ছিল; উস্তাদ থেকে পূর্ণ ফয়েয লাভ করতে পারেননি।

দুই, উস্তাদ কামিল ছিলেন না; যার ফলে পরিপূর্ণ শিক্ষা দিতে পারেননি।

তিন, উস্তাদ হয়ত কৃপণ ছিলেন, পরিপূর্ণ জ্ঞান সেই শাগরিদকে দান করেননি কিংবা তার থেকে বেশী প্রিয় অন্য শাগরিদ ছিল যাকেই সব কিছু শিখায়েছেন।

চার, যে কিতাবটি পড়ানো হয়েছিল, সেটি পূর্ণাঙ্গ ছিল না। এ চারটি কারণ ছাড়া অন্য কোন কারণ থাকতেই পারে না।

এখানে শিক্ষক হলেন স্বয়ং আল্লাহ আর ছাত্র হলেন মাহবুব আলাইহিস সালাম এবং যা শিক্ষা দিয়েছেন তা হলো কুরআন ও স্বীয় বিশেয় জ্ঞান সমূহ। এখন বলুন মহাপ্রভু আল্লাহ কি কামিল শিক্ষক নন? বা রসুল আলাইহিস সালাম কি উপযুক্ত শাগরিদ নন? বা রসুল আলাইহিস সালামের চেয়ে ও বেশী প্রিয় আর কেউ আছেন অথবা কুরআন কি পূর্ণ কিতাব নয়?

যখন এগুলোর মধ্যে কোন কারণই বিদ্যমান নেই অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা পরিপুর্ণ জ্ঞান প্রদানকারী, মাহবুব আলাইহিস সালামও পরিপূর্ণ গ্রহণকারী এবং কুরআনহলো একটি পরিপূর্ণ কিতাব যেখানে উক্ত হয়েছেঃ اَلرَّحْمنُ عَلَّمَ الْقُرْانَ (দয়াময় আল্লাহকুরআন শিখিয়েছেন) আর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) হলেন আল্লাহর দরবারে বেশী মকবুল বান্দা তখন তার জ্ঞান কেন অপূর্ণ হবে?

(৫) আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক কথা কেন লাওহে মাহফুজে লিখলেন? লিখার প্রয়োজন হয় স্মরন রাখার জন্য, যাতে ভুলবার উপক্রম না হয় বা অন্যদেরকে জানানো জন্য।

আল্লাহ তাআলা ভুলক্রুটি থেকে পূতঃপবিত্র। কাজেই তিনি অন্যদের জন্য লিখেছেন। অন্যদের মধ্য হুজুর আলাইহিস সালাম হলেন সর্বাধিক প্রিয়। সুতরাং সেই লেখাটা হুজুর (আলাইহিস সালামের) উদ্দেশ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।

(৬) অদৃশ্য বিষয় সমূহের মধ্যে সর্বাধিক অদৃশ্য হলো আল্লাহর সত্ত্বা। হযরত মুসা (আঃ) যখন আল্লাহকে স্ব–চক্ষে কামনা করেছিলেন, তখন বলা হয়েছিলঃ لَنْ تَرَانِىْ (তুমি আমাকে দেখতে পাবেনা) আর যখন মাহবুব আলাইহিস সালাম মিরাজের সময় স্বীয় পবিত্র চর্মচক্ষু মুবারক দ্বারা আল্লাহকে দেখলেন তখন সৃষ্টি জগৎ কি তাঁর দৃষ্টির আড়ালে গোপন থেকে যেতে পারে।

খোদাই যখন আপনার দৃষ্টি থেকে গোপন রইল না তখন কিইবা আছে যা অদৃশ্য থাকতে পারে? আপনার প্রতি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের) কোটি কোটি দরুদ।

তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর দর্শন লাভের বর্ণনা আমার রচিত শানে হাবিবুর রহমানে দেখুন।

মিরকাত শরহে মিশকাতের الايمان بالقدر অধ্যায়ের প্রথম পরিচ্ছেদের শেষে উল্লেখিত আছেঃ

كَمَا اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وْسَلَّمَ رَ اهُ فِى الدُّنْيَالِاِنْقِلَابِه نُوْرًا

(হুযুর আলাইহিস সালাম ইহ জগতেই আল্লাহকে দেখেছিলেন, কেননা তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) নিজেই নুরে পরিণত হয়েছিলেন।)

(৭) শয়তান হলো দুনিয়াবাসীদের পথভ্রষ্টকারী আর নবী আলাইহিস সালাম হলেন সৎপথের দিশারী। শয়তান হলো মহামারীর মত আর নবী আলাইহিস সালাম হলেন সর্বরোগের সর্ববিশেষজ্ঞ ডাক্তার সরূপ। আল্লাহ তাআলা শয়তানকে পথভ্রষ্ট করার সহায়ক এত ব্যাপক ও সুদূর প্রসার জ্ঞান দান করেছেন যে, পৃথিবীর কেউ তার দৃষ্টির অগোচরে থাকে না।

তার কাছে এ খবরও আছে যে কাকে পথভ্রষ্ট করা যাবে, আর কাকে করা যাবে না; এবং যে পথভ্রষ্ট হওয়ার আছে, তাকে কিভাবে পথভ্রষ্ট করতে হবে? অনুরূপভাবে সে প্রত্যেক ধর্মের প্রতিটি মাসআলা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল, যার ফলে সে প্রতিটি সৎকাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখে ও প্রতিটি নীতি বিগর্হিত কাজ করানোর মদদ যোগায়। সে আল্লাহর কাছে দম্ভোক্তি করে বলেছিলঃ

لَاُغْوِ يَنَّهُمْ اَجْمَعِيْنَ اِلَّاعِبَادِكَ مِنْهُمُ الْمُخْلِصِيْنَ

(আমি তোমার বিশুদ্ধ চিত্ত বিশিষ্ট নেককার বান্দাগণ ছাড়া বাকী সবাইকে পথভ্রষ্ট করেই ছাড়বো।) পথভ্রষ্টকারীকে যখন এতটুকু জ্ঞান দান করা হলো, তখন সর্ববিশেষজ্ঞ ডাক্তার সদৃশ্য হুযুর আলাইহিস সালামের সঠিক পথের দিশা প্রদানের জন্য এর চেয়ে অনেক বেশী জ্ঞান থাকা একান্ত প্রয়োজন, যাতে তিনি প্রত্যেক ব্যাক্তির রোগ নির্ণয় ও আরোগ্য লাভের যোগ্যতার পরিমাপ করে চিকিৎসা করতে পারেন।

অন্যথায় সঠিক পথ নির্ধারণের কাজ পরিপূর্ণ হবে না। এবং মহাপ্রভু আল্লাহর সম্পর্কে এ আপত্তি উত্থাপন করা হবে যে, তিনি পথভ্রষ্টকারীকে শক্তিশালী করেছেন আর পথ প্রদর্শনকারীকে দুর্বল রেখেছেন। সেজন্য পথভ্রষ্টতা পরিপূর্ণতা লাভ করল আর হেদায়েত অপরিপূর্ণ রয়ে গেল।

(৮) মহান প্রভু হুযুর আলাইহিস সালামকে নবী বলে সম্বোধন করেছেন। যেমন يَااَيُّهَاالنَّبِىُّ নবী শব্দের অর্থ হলো খবর দাতা। যদি খবর বলতে শুধু দ্বীনের খবরই লক্ষ্যার্থ হয় তাহলে বলতে হয় প্রত্যেক মৌলভীই নবী; আর যদি পার্থিব ঘটনাবলীর খবর ধরে নেওয়া হয়, তাহলে প্রত্যেকটি সংবাদপত্র, রেডিও, টি ভি ও তারবার্তা প্রেরণকারী সবাই নবী রূপে পরিগণিত হবে।

সুতরাং বোঝা গেল যে নবী শব্দের মধ্যে অদৃশ্য বিষয়াদীর খবরাখবরই গুরুত্বপুর্ণ। অর্থাৎ নবী হলেন ফিরিশতাগণ ও আরশ সম্পর্কে খবরদাতা যেখানে তারবার্তা ও সংবাদপত্র সমূহ কোন কাজেই আসবে না। সেখানে একমাত্র নবীর জ্ঞানই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। এতে বোঝা গেল যে ইলমে গায়ব নবী শব্দের অন্তর্ভুক্ত বা অঙ্গীভূত।

এ পর্যন্ত হুযুর আলাইহিস সালামের ইলমে গায়ব সম্পর্কে আলোচনা করা হল। এখন এও জানা দরকার যে হুযুর আলাইহিস সালামের মাধ্যমে আওলিয়া কিরামও ইলমে গায়ব লাভ করে থাকেন। তবে তাদের জ্ঞান নবী (সাল্লাল্লাহু আলেইহে ওয়াসাল্লাম) এর মাধ্যমেই অর্জিত হয় ও উহা নবী (সল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর জ্ঞান সমুদ্রের এক ফোঁটার সমতুল্য।

মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যামূলক গ্রন্থ মিরকাতে শাইখ আবু আবদুল্লাহ; সিরাজী কর্তৃক সংকলিত কিতাবে আকায়িদ এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছেঃ–

اَلْعَبْدُ يَنْقُلُ فِى الْاَحْوَالِ حَتَّى يُصِيْرَ اِلَى نَعْتِ الرُّوْحَانِيَّةِ

(বান্দার আধ্যাত্মির পরিবর্তন হতে থাকে শেষ পর্যন্ত যখন রুহানীয়তের গুণ প্রাপ্ত হয় তখনিই গায়ব সম্পর্কে অবগত হয়।)

মেরকাতের আর এক জায়গায় উক্ত কিতাবে আকায়িদ গ্রন্থের বরাত দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছেঃ–

يَطَّلِعُ الْعَبْدُ عَلَى حَقَائِقِ الْاَشْيَاءِ وَيَتَجَلَّى لَهُ الْغَيْبُ وَغَيْبُ الْغَيْبِ

কামিল বান্দা যাবতীয় বস্তুর নিগূঢ় তত্ত্ব ও রহস্য সম্পর্কে অবিহিত হন এবং তার কাছে অদৃশ্যের বিষয়ও প্রকাশিত হয়ে যায়।)

মিরকাতের দ্বিতীয় খণ্ডের ৬ষ্ঠ পৃষ্ঠায় الَصَّلَوةُ عَلَى النَّبِىِّ وَفَضْلِهَا শীর্ষক অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ আছেঃ–

(পূত পবিত্র আত্মা যখন সীমাবদ্ধ শারীরিক গণ্ডির বাহিরে আসে তখন আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন করে সু–উচ্চ স্তরে উপনীত হয় এবং তাদের সামনে কোনরূপ আবরণ অবশিষ্ট থাকে না। তখন সমস্ত বস্তুকে নিজের সামনে উপস্থিত ও স্থুল বস্তু সদৃশ দেখতে পায়। এধরনের অনূভুতি আপনা আপনিই কিংবা ফিরিশতার ইলহাম দ্বারা অর্জিত হয়।)

শাহ আবদুল আযীয সাহেব (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তাফসীরে আযীযীতে সূরা জ্বিনের তাফসীরে ফরমানঃ–

(লওহে মাহফুজ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন এবং উহার লিপিদর্শন করা সম্পর্কে কোন কোন ওলী থেকে ও মুতওয়াতির পর্যায়ে বর্ণনা পাওয়া যায়।

ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার রচিত কিতাবুল এলামে এবং আল্লামা শামী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার রচিত সুল্লুল হুসসামে উল্লেখ করেছেনঃ–

اَلْخَوَاصُّ يَجُوْزُ اَنْ يَّعْلَمَ لْغَيْبَ فِى قَضْيَةٍ اَوْ قَضَاءٍ كَمَا وَقَعَ لِكَثِيْرٍ مِّنْهُمْ وَاشْتَهَرَ

(এটা বৈধ্য যে বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ (আওলিয়া কিরাম) কোন ঘটনা বা সিদ্ধান্তের ব্যাপারে গায়বী ইলম অর্জন করেন যেমন অনেক আওলিয়া কিরাম থেকে এ ধরনের ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে এবং তা সাধারণ্যে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে।

শাহ ওলিউল্লাহ সাহেব (রহমতুল্লাহে আলাইহে) আলতাফুল কুদস নামক কিতাবে লিখেছেনঃ–

(আরিফের আত্মা একেবারে তার দৈহিক আকৃতির রুপ পরিগ্রহ করে থাকে এবং তার সত্ত্বা রূহের সঙ্গে একাকার হয়ে যায়। তখন তিনি হুযুরী জ্ঞানের সাহায্যে সমগ্র জগত দেখতে পান।)

আল্লামা যুরকানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার রচিত শরেহে মওয়াহেব গ্রন্থের সপ্তম খণ্ডের ২২৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ–

(লাতায়েফুল মেনন কিতাবে উল্লেখিত আছে যে কোন কামিল বান্দা কর্তৃক আল্লাহ তাআলার অদৃশ্য বিষয় সমূহ থেকে কোন অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান লাভ আশ্চর্যের বিষয় নয়। এটা সেই হাদীছেই ব্যক্ত হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে মুমিনের জ্ঞানকে ভয় কর কেননা তিনি আল্লাহর নূরে দেখেন। এটাই অপর এক হাদীছেরও অর্থ জ্ঞাপন করে যেখানে বলা হয়েছে আল্লাহ তাআলা বলেন আমি তার চোখ হয়ে যাই যদ্বারা তিনি দেখেন। সুতরাং তার দেখা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত অসাধারণ শক্তির বলেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। তাই তার গায়ব সম্পর্কে অবগত হওয়াটা বিস্ময়কর কোন ব্যাপার নয়।)

আল্লামা ইমাম শারানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার রচিত اليواقيت والجواهر নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেনঃ–لِلْمُجْتَهِدِيْنَ الْقَدمُ فِى عُلُوْمِ الْغَيْبِ

(গায়বী ইলম সমূহের ক্ষেত্রে মুজতাহিদগণেরও দৃপ্ত পদচারণা রয়েছে।)

হুযুর গাউছে পাক (রহমতুল্লাহে আলাইহে) ফরমানঃ–

نَظَرْتُ اِلَى بِلَادِ اللهِ جَمْعًا–كَخَرْدَلَةٍ عَلَى حُكْمِ اتِّصَالِىْ

(আমি আল্লাহ তাআলার সমস্ত শহরগুলোকে এভাবে দেখেছি যেমন কয়েকটি তৈলবীজ পরস্পর সন্নিবেশিত হয়ে আছে।)

শাইখ আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার রচিত ‍যুবদাতুল আসরার গ্রন্থে হযরত গাউছে পাকের (রহমতুল্লাহে আলাইহে) একটি গুরুত্বপূর্ণ ও প্রণিধানযোগ্য উক্তির বর্ণনা দিয়েছেনঃ–

(গাউছে পাক (রহমতুল্লাহে আলাইহে) ফরমানঃ হে সাহসীভক্তগণ হে আমার সন্তানগণ এসো আমার এ অকুল সমুদ্র থেকে কিছু আহরণ কর। খোদার কসম নেককার ও বদকার লোকদেরকে আমার সামনে উপস্থিত করা হয় আর আমরা চোখের কোনা লওহে মাহফুজের দিকে নিবদ্ধ থাকে। আমি আল্লাহ তাআলার অপার জ্ঞান সমুদ্রে ডুব দিয়ে থাকি।)

আল্লামা জামী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) তার রচিত نفحات الانس কিতাবে হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দী (কুঃসিঃ) এর একটি উক্তি উল্লেখ করেছেন। উক্তিটি হলোঃ–

(হযরত আযীযান (রহমতুল্লাহে আলাইহে) বলেন যে একদল আওলিয়া কিরামের সামনে পৃথিবীটা দস্তরখানার মত আর আমি মনে করি আঙ্গুলের নখের মত। কোন বস্তুই তাদের দৃষ্টি বহির্ভূত নয়।)

ইমাম শারানী (রহমতুল্লাহে আলাইহে) كبريت احمر গ্রন্থে উল্লেখ করেছেনঃ–

(আমি আমার শাইখ সৈয়দ আলী হাওয়াছ (রাদিআল্লাহু আনহু) কে বলতে শুনেছি আমার মতে ওই পর্যন্ত কোন ব্যক্তি কামিল হিসেবে গণ্য হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি নিজ মূরীদের পিতার ঔরসে থাকাকালীন গতিবিধি সংক্রান্ত ক্রিয়া প্রক্রিয়া এমনকি মীছাকের দিন থেকে তার বেহেশত কিংবা দোযখ প্রবেশ করা অবধি তার যাবতীয় অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন।)

শাহ ওলিউল্লাহ সাহেব (রহমতুল্লাহে আলাইহে) فيوض الحرمين নামক গ্রন্থে লিখেছেনঃ–

ثُمَّ اِنَّهُ يَنْجَذِبُ اِلَى خَيْرِ الْحَقِّ فَيُصِيْرُ عَبْدَ اللهِ فَيَتَجَلَّى لَهُ كُلُّ شَئٍّ

অতঃপর সেই আরিফ ব্যক্তি হক তাআলার সুমহান দরবারের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আত্মবিলীন হয়ে যান এরপর তিনি আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হন। তখন তার কাছে প্রত্যেক কিছুই উন্মুক্ত ও প্রতিভাত হয়ে যায়।)

মিশকাত শরীফের প্রথম খণ্ডে কিতাবুত দাওয়াতের ذكر الله والتقرب শীর্ষক অধ্যায়ে বুখারী শরীফের সুত্রে হযরত আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত আছেঃ–

فَاذَا اَحْبَبْتُه‘ فَكُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِىْ يَسْمَعُ بِهِ وَبَصَرَهُ الَّذِىْ يُبْصِرُبِهِ وَيَدَهُ الَّتِىْ يَبْطِش بِهَا وَرِجْلَهُ الَّتِىْ يَمْشِىْ بِهَا

(আল্লাহ তাআলা ফরমান, সেই প্রিয় বান্দাকে যখন আমি ভালবাসি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই, যদ্বারা তিনি শুনেন, চোখ হয়ে যাই, যদ্বারা তিনি দেখেন, হাত হয়ে যাই, যদ্বারা কোন কিছু ধরেন এবং পা হয়ে যাই যদ্বারা তিনি চলাফেরা করেন।)

একথা স্মরণ রাখা দরকার যে হযরত খিযির (আলাইহিস সালাম) ও হযরত ইলিয়াস (আলাইহিস সালাম) এখনও পৃথিবীপৃষ্ঠে জীবিত আছেন। তারা এখন উম্মতে মুস্তাফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর ওলী হিসেবে গণ্য। হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) যখন পৃথিবীতে (পুনরায়) তশরীফ আনবেন, তখন তিনিও এ উম্মতের ওলী হিসেবে আসবেন। তাদের (হযরত খিযির, ইলিয়াস ও ঈসা (আলাইহিস সালাম) ব্যাপক জ্ঞান সম্পর্কে আমি ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি। তাদের জ্ঞানও এখন হুযুর আলাইহিস সালামের উম্মতে ওলীগণেই জ্ঞান হিসেবে পরিগণিত। –সূত্রঃ জা’আল হক ১ম খন্ড–।

মোঃ মাহাবুবুর রহমান

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment