ক্লান্ত কাফেলা। পারস্য থেকে যাত্রা। বহু পথ পেরিয়েছে। অবশেষে রাস্তা ফুরালো। সামনে কুফা নগর। এখানেই থামবে কাফেলা। কাফেলার উদ্দেশ্য ব্যবসা। কাপড়ের ব্যবসা।
কাফেলার মালিক পারসিক। নাম, যুতাহ। অমায়িক, সজ্জন মানুষ। বেশ ধনী।
বেশ কিছুদিন ব্যবসা চলল। যুতাহ বহু দেশেই গিয়েছে। ব্যবসা করেছে। কিন্তু এ অঞ্চল সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেউ কাউকে ঠকায় না। সত্য ও উদারতা মিশ্রিত এক অপূর্ব জাতি।
এরা এমন কেন? মানুষ এতটা ভালো কিভাবে হয়! যুতাহ অনুসন্ধান করল। বুঝতে পারল কারণ একটাই। কুফাবাসিরা মুসলিম। তাদের ধর্ম ইসলাম। আর ইসলামই তাদের এতটা সভ্য করে তুলেছে।
দিন যায়। আগ্রহ বাড়ে। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিল যুতাহ। মুসলিম হবে। কিন্তু নিজের বাপ-দাদার ধর্ম! কি করি! দোদুল্য মন নিয়ে হাজির হল খলিফার দরবারে।
সে সময় মুসলিম জাহানের খলিফা স্বয়ং মওলা আলী। সেই আলী, যাঁর সম্পর্কে মদিনা-মুনিব বলেছেন : আমি যার মওলা, আলী তার মওলা। যিনি জ্ঞান-নগরীর দরজা।
যুতাহ দেখল খলিফাকে। ও খোদা! মানুষ এত সুন্দর হয় কি করে! চোখ দু’টো যেন বেহেস্তী ফুল। কি মায়া! কি মনোরম! কন্ঠ যেন পর্বত অটুট দৃঢ়। আর কন্ঠস্বর সেই পর্বত বয়ে আসা কুলকুল ঝর্ণা। মুখের প্রতি-প্রত্যেক শব্দে শিউলি ঝরে। স্বর্গসুবাস আর জ্ঞানের পবিত্র স্নিগ্ধ পরশ।
নবী’র খলিফা এত সুন্দর। তাহলে নবী না জানি কত সুন্দর! দ্বিধা কেটে গেল। যুতাহ’র মনে আর সন্দেহ নেই। মুসলিম হবেই। খলিফার স্বর্গশোভা রূপ তাঁকে বিমোহিত করেছে।
বেশ কিছু দিন পর। যুতাহ এখন মুসলিম। তার নতুন নাম, নুমান। সে দিনরাত খলিফার বাসগৃহের দরজায় দাঁড়িয়ে। এত দেখে, তবুও তৃষ্ণা মেটে না।
আজ খলিফার দরবারে যাবে নুমান। একা না। সাথে নিবে সাবিতকে। তাঁর একমাত্র ছেলে। ছ’বছর বয়স। আজ কালেমা পড়াবে ছেলেকে। বায়াত করাবে। স্বয়ং মওলা আলী’র হাতে।
নুমান দাঁড়িয়ে। নত চোখ। দুরুদুরু বুক। সমীহে কাঁপছে।
– হে খলিফাতুল মুসলিমিন! হে বেলায়াতের রাজাধীরাজ! অনুগ্রহ করুন। আমার সন্তানকে মুসলিম করুন। এ সন্তানের প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম যেন আপনার দাসত্ব করে। একে আপনার গোলাম করে নিন।
খলিফা হাসে। সেই স্নিগ্ধ তাবাসসুম। যা দেখলে মনে পরে মদিনা-মুনিব (দ) এঁর কথা।
– সাবিত! সন্তান আমার। কাছে এসো। মাথায় হাত বুলাবো। তোমার পিতা দো’আ চায়। যাও দো’আ করলাম। তোমার সন্তানেরা ইসলামের সবচে বড় খেদমতগার হবে। তোমার সন্তান সূর্য হয়ে জ্বলবে। আলোকিত করবে বিশ্বাসীর হৃদয়-রাজ্য।
সাবিতের একটি সন্তান হয়েছিল। নাম রাখা হল সাবিতের পিতার নামে। মানে, নুমান। পুরোনাম, নুমান বিন সাবিত।
হ্যাঁ! তিনি ইমামে আ’যম! তিনি আবু হানিফা!
যিনি আমার মওলা আলী’র দো’আর ফসল।