আল-হাদিসের আলোকে ইলমে দ্বীন অর্জনের ফজিলত

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

হাদিস ১:

আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَلَكَ طَرِيقًا يَلْتَمِسُ فِيهِ عِلْمًا سَهَّلَ اللَّهُ لَهُ طَرِيقًا إِلَى الْجَنَّةِ قَال أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ{رواه الترمذي

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইলম (জ্ঞান) অর্জন করার উদ্দেশ্যে পথ চলবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দিবেন।

(তিরমিযী হা/২৬৪৬; ইখনু মাজাহ হা/২২৩; সহিহুল জামে‘ হা/৬২৯৮, সনদ সহিহ, বাইহাকি, শুআবুল ঈমান : ৫৩৬৭)।

হাদিস ২ :

হযরত আবু উমামাহ আল-বাহেলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

عَنْ أَبِى أُمَامَةَ الْبَاهِلِىِّ قَالَ ذُكِرَ لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَجُلاَنِ أَحَدُهُمَا عَابِدٌ وَالآخَرُ عَالِمٌ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِى عَلَى أَدْنَاكُمْ ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ اللَّهَ وَمَلاَئِكَتَهُ وَأَهْلَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ حَتَّى النَّمْلَةَ فِى جُحْرِهَا وَحَتَّى الْحُوتَ لَيُصَلُّونَ عَلَى مُعَلِّمِ النَّاسِ الْخَيْرَ.

নবী করীম (ﷺ)-এর সম্মুখে দু’জন ব্যক্তির স্মরণ করা হয়, যাদের মধ্যে একজন আবেদ, অপরজন আলেম ছিলেন। নবী করীম (ﷺ) বললেন, একজন আলেমের ফযিলত তথা শ্রেষ্ঠত্ব একজন আবেদের উপর, যেমনটি আমার শ্রেষ্ঠত্ব তােমাদের একজন সাধারণ ব্যক্তির (সাহাবীর) উপর। অতঃপর নবী করীম (ﷺ) আরও বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা, তাঁর ফেরেশতাকুল, আসমানবাসী, যমিনবাসী এমনকি গর্তের পিঁপড়া ও মৎস্যকুল সে ব্যক্তির উপর আল্লাহর রহমত বর্ষণের দু’আ করেন, যে ব্যক্তি মানুষকে কল্যাণের শিক্ষা দেন।

১.তিরমিযী, আস সুনান, কিতাবুল ইলম, হাদীস নং ২৬৮৫;

২.দারেমী, আস সুনান, হাদীস নং ২৮৯

৩.মিশকাত হা/২১৩, সনদ হাসান।

হাদিস ৩:

হযরত আবু দারদাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি জ্ঞানের সন্ধানে কোন রাস্তা পাড়ি দেয়, তবে আল্লাহ তা’আলা তাকে জান্নাতের রাস্তায় পরিচালনা করেন এবং নিশ্চয় ফেরেশতারা জ্ঞান অন্বেষণকারীর সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে তাদের পদতলে নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন এবং জ্ঞানী আলেম ব্যক্তির জন্য নভােমন্ডল এবং ভূ-মন্ডলের প্রত্যেক কিছু এমনকি পানির মৎসকুল পর্যন্ত আল্লাহর দরবারে পাপ মােচনের দুআ করেন। আবেদের উপর আলেমের শ্রেষ্ঠত্ব ঠিক তেমনি যেমনটি চৌদ্দ তারিখের চন্দ্রের শ্রেষ্ঠত্ব সমস্ত তারকারাশির উপর। নিশ্চয়ই আলেমগণ সমস্ত নবীগণের ওয়ারিশ। নিশ্চয়ই আম্বিয়ায়ে কেরামের মিরাছ দিনার বা দিরহাম নয়। বরং তাদের মিরাছ হলাে ‘ইলম (জ্ঞান)। সুতরাং যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনে সমর্থ হয়েছে, সে ব্যক্তি আম্বিয়ায়ে কেরামের রেখে যাওয়া এ সম্পদের এক বিরাট অংশের অধিকারী হয়েছে।

১.ইমাম আবু হানীফা, আল মুসনাদ, খ. ১ পৃ.৫৭;

২.তিরমিযী, আস সুনান, কিতাবুল ইলম, হাদীস নং ২৬৮২

৩.আবুদাউদ হা/৩৬৪১;

৪.মিশকাত হা/২১২;

৫.তিরমিজিঃ সহিহুল জামে‘ হা/৬২৯৭, সনদ সহিহ,

৬.ইমাম মুত্তাকী আল হিন্দীঃ কানযুল উম্মাল : ২৮৭৩৭

হাদিস ৪:

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

طَلَبُ الْعِلْمِ فَرِيضَةٌ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ

‘প্রত্যেক মুসলিমের ওপরে জ্ঞান অন্বেষণ করা ফরজ। (ইবনু মাজাহ হা/২২৪; মিশকাত হা/২১৮, সনদ হাসান।)

হাদিস ৫:

হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে,

আল্লাহ তা’আলা যার জন্য মঙ্গল ইচ্ছা করেন, তাকে দ্বীনের জ্ঞান (তথা দ্বীন বুঝার সক্ষমতা) দান করেন। আর আমি বণ্টনকারী, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দান করেন।

১.বুখারী, আস সাহীহ, কিতাবুল ইলম, হাদীস নং ৭১;

২.মুসলিম, আস সাহীহ, কিতাবুয যাকাত, হাদীস নং ১০৩৭

৩.ইবনু মাজাহ হা/২২৩;

৪.সহিহুল জামে‘ হা/৬২৯৭, সনদ সহিহ।

হাদিস ৬:

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,

إِنَّ الْعُلَمَاءَ هُمْ وَرَثَةُ الأَنْبِيَاءِ إِنَّ الأَنْبِيَاءَ لَمْ يُوَرِّثُوا دِينَارًا وَلاَ دِرْهَمًا إِنَّمَا وَرَّثُوا الْعِلْمَ فَمَنْ أَخَذَهُ أَخَذَ بِحَظٍّ وَافِرٍ.

‘আলেমরাই নবীগণের উত্তরাধিকারী। নবীগণ দিনার বা দিরহামের উত্তরাধিকারী করেন না। বরং তারা ইলমের উত্তরাধিকারী করেন। ফলে যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করল সে বৃহদাংশ গ্রহণ করল। (সহিহুল বুখারী হা/৭১)

হাদিস ৭:

রাসূল (ﷺ) প্রতি ফজর সালাতের পর প্রার্থনা করতেন এই বলে যে,

اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا وَرِزْقًا طَيِّبًا وَعَمَلاً مُتَقَبَّلاً

‘হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট উপকারী জ্ঞান, কবুলযোগ্য আমল ও পবিত্র রুজি প্রার্থনা করছি।’ (আহমাদ ইবনে মাজাহ, তাবারানি, মিশকাত হা/২৪৯৮)

হাদিস ৮:

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

بَلِّغُوا عَنِّى وَلَوْ آيَةً

‘আমার পক্ষ হতে মানুষের নিকটে পৌঁছে দাও, যদি একটি মাত্র আয়াতও হয়’। (বুখারী হা/৩৪৬১; তিরমিজি হা/২৬৬৯)

হাদিস ৯:

হাদিসে এসেছে,

عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمِ يُجَاءُ بِالرَّجُلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُلْقَى فِى النَّارِ فَتَنْدَلِقُ بِهِ أَقْتَابُهُ فَيَدُورُ بِهَا فِى النَّارِ كَمَا يَدُورُ الْحِمَارُ بِرَحَاهُ فَيُطِيفُ بِهِ أَهْلُ النَّارِ فَيَقُولُونَ يَا فُلاَنُ مَا لَكَ مَا أَصَابَكَ أَلَمْ تَكُنْ تَأْمُرُنَا بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَانَا عَنِ الْمُنْكَرِ فَقَالَ كُنْتُ آمُرُكُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَلاَ آتِيهِ وَأَنْهَاكُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَآتِيهِ.

ওসামা ইবনু যায়েদ (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, এক ব্যক্তিকে ক্বিয়ামতের দিন নিয়ে আসা হবে। তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এতে করে তার নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যাবে। আর সে তা নিয়ে ঘুরতে থাকবে যেমনভাবে গাধা আটা পিষা জাঁতার সাথে ঘুরতে থাকে। জাহান্নামিরা তার নিকট একত্রিত হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করবে, আপনি কি আমাদের ভালো কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ করতেন না? সে বলবে, হ্যাঁ। আমি তোমাদের ভালো কাজের আদেশ করতাম, কিন্তু নিজে করতাম না। আর খারাপ কাজের নিষেধ করতাম কিন্তু নিজেই তা করতাম।

(সহিহুল বুখারী হা/৩২৬৭; মিশকাত হা/৫১৩৯)

হাদিস ১০:

হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ، قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: اِذَا مَاتَ الاِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ اِلَا مِنْ ثَلَاثَةٍ اِلَا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، اَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، اَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُوْ لَهُ

-(مسلم 4310 )

‘যখন মানুষ মারা যায়, তখন তার আমল (ও ছওয়াব) বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু তিনটি আমল ব্যতীত (যেগুলোর ছওয়াব বন্ধ হয় না) :

(১) সদকায়ে জারিয়া,

(২) ইলম যার দ্বারা (লোকের) উপকার সাধিত হয় এবং

(৩) সুসন্তান, যে তার (পিতা-মাতা) জন্য দো‘আ করে।’

(মিশকাত হা/২০৩, মুসলিম হা/১৬৩১)

হাদিস ১১:

রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘জ্ঞানের মর্যাদা আমার নিকট ইবাদতের চেয়ে বেশী। তোমাদের দ্বীনের সর্বোত্তম দিক হলো তোমাদের আল্লাহভীতি’ (হাকেম, ত্ববারানী, বায্যার, ছহীছুল জামে‘ হা/ ৪৩১৪)।

হাদিস ১২:

হযরত মুআবিয়া (رضي الله عنه) বর্ণিত,

রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- ‘আল্লাহ যার কল্যাণের ইচ্ছা করেন তাকে দ্বীনের সুষ্ঠু জ্ঞান দান করেন আর আমি নিছক বণ্টনকারী মূলতঃ দান করেন আল্লাহই’ (বুখারী-মুসলিম, মিশকাত হা/২০০)।

হাদিস ১৩:

রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞানার্জনের উদ্দেশ্যে কোন পথ অবলম্বন করে আল্লাহ এর বিনিময়ে তার জন্য জান্নাতের একটি পথ সহজ করে দিবেন। তাদের সম্মানে ফেরেশতারা নিজেদের পাখা বিছিয়ে দেয় এবং তাদের জন্য যমীন ও আসমানের সকল কিছু এমনকি পানির মাছ পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে। একজন ইবাদতকারীর উপর জ্ঞানীর মর্যাদার তুলনা হল সমস্ত তারকারাজির উপর চাঁদের মর্যাদার তুলনা। জ্ঞানীরা হলেন নবীদের উত্তরাধিকারী। নবীগণ উত্তরাধিকার হিসাবে দীনার বা দিরহাম (অর্থ-সম্পদ) রেখে যান না বরং তারা জ্ঞানকে রেখে যান। যে তা গ্রহণ করলো সে যেন পূর্ণ অংশই পেল’ (আবুদাঊদ, তিরমীযী, ইবনে মাজাহ, সনদ ছহীহ) ।

হাদিস ১৪:

রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘যখনই কোন দল আল্লাহর কোন ঘরে একত্রিত হয়ে কুরআন তেলাওয়াত করে এবং ঐ বিষয়ে পরস্পর আলোচনা করে তখনই তাদের উপর (আল্লাহর পক্ষ থেকে) শান্তি অবতীর্ণ হতে থাকে। আল্লাহর রহমত তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখে। ফেরেশতারাও তাদেরকে ঘিরে রাখেন এবং আল্লাহ তাদের কথা তার ফেরেশতাদের নিকট উল্লেখ করেন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৪)।

হাদিস ১৫:

রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সেই যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে এবং অপরকে শিক্ষা দেয়’ (বুখারী, মিশকাত হা/২১০৯)।

হাদিস ১৬:

এক মজলিস অপর মজলিস অপেক্ষা উত্তম। এক মজলিসে দোয়া করা হচ্ছে। এই দোয়া আল্লাহ কবুল করতে পারেন আবার কবুল করতে নাও পারেন। অপর মজলিসে ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, এরাই উত্তম। এই বলে রাসূল (ﷺ) ইলমে দ্বীন শিক্ষার মজলিসে বসে গেলেন। (দারেমী)।

হাদিস ১৭:

হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদীসে তিনি বলেন- “রাতের কিছু সময় ইলমে দ্বীন সম্পর্কে আলোচনা করা পূর্ণ রাত জাগ্রত থেকে ইবাদত করা অপেক্ষা উত্তম। (দারেমী)

হাদিস ১৮:

হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণিত অন্য এক খানা হাদীসে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন,”একজন (হক্কানী ফকিহ) আলেম শয়তানের মোকাবেলায় হাজার আবেদ অপেক্ষা অধিক উত্তম (ভারী/শক্তিশালী)।”

১.তিরমিযী, আস সুনান, কিতাবুল ইলম, হাদীস নং ২৬৮১;

২.ইবন মাজাহ, আল মুকাদ্দামা, হাদীস নং ২২২

অন্য বর্ণনায় এসেছে- প্রত্যেক জিনিসের একটি স্তম্ভ থাকে। ফিকহ শাস্ত্র হচ্ছে চীনের স্তম্ভ।

হাদিস ১৯:

হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি জ্ঞানের অন্বেষণে বের হয়, সে ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকে, যতক্ষণ না সে প্রত্যাবর্তন করে।

[তিরমিযী, তাবরানী- উভয়েই এ হাদীস ‘হাসান পর্যায়ের বলে অভিমত দিয়েছেন]

১. তিরমিযী, আস সুনান, কিতাবুল ইলম, হাদীস নং ২৬৪৭;

২.তাবরানী, আল মুজামুস সাগীর, হাদীস নং ৩৮০।

৩.দারিমী

হাদিস ২০:

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّهَا قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ أَوْحَى إِلَيَّ أَنَّهُ مَنْ سَلَكَ مَسْلَكًا فِي طَلَبِ الْعِلْمِ سَهَّلْتُ لَهُ طَرِيقَ الْجَنَّةِ وَمَنْ سَلَبْتُ كَرِيمَتَيْهِ أَثَبْتُهُ عَلَيْهِمَا الْجَنَّةَ وَقَصْدٌ فِي عِلْمٍ خَيْرٌ مِنْ فَضْلٍ فِي عِبَادَةٍ.

আয়েশা (رضي الله عنه) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা আমার নিকট অহি প্রেরণ করেছেন এই মর্মে, যে ব্যক্তি ইলম হাছিলের লক্ষ্যে কোন পথ গ্রহণ করবে, তার জন্য আমি জান্নাতের পথ সহজ করে দেব এবং যার দু’চক্ষু আমি অন্ধ করেছি তার বদলে আমি জান্নাত দান করব। আর ইবাদত অধিক করার তুলনায় অধিক ইলম অর্জন করা উত্তম। [মিশকাত হা/২৫৫; তিরমিজী, ছহীহুল জামে‘ হা/১৭২৭, সনদ সহীহ, বায়হাকী]

হাদিস ২১:

হযরত হাসান বসরী (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদীসে আছে- রাসূল (ﷺ) কে বনি ইসরাঈলের দুজন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হল। এদের একজন ছিলেন আলেম যিনি শুধু ফরজ নামাজ আদায় করতেন এবং লোকদের ইলম শিক্ষা দান করতেন। অপর ব্যক্তি যিনি সারাদিন রোজা রেখে কাটাতেন এবং সারারাত্রি নামাজে থাকতেন, এদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে? রাসূল (ﷺ) জবাবে বললেন- যে সারাদিন রোজা রাখে এবং সারারাত নামাজে কাটায় সেই আবিদ অপেক্ষা যে আলেম শুধু ফরজ নামাজ আদায় করেন এবং লোকদেরকে দ্বীনি ইলম শিক্ষা দেন সেই আলেম শ্রেষ্ট । যেমন আমার ন্যায় রাসূলের ফজিলত তোমাদের একজন সাধারণ লোকের উপর” (দারেমী)।

হাদিস ২২:

হযরত সাখবারা আজদী (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদীসে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- “যে ব্যক্তি ইলম অর্জন করবে তার জন্য তা তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যাবে” (তিরমীজি ও দারেমী)।

হাদিস ২৩:

হযরত হাসান বসরী (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদীসে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- “ইলম অর্জন অবস্থায় যার মৃত্যু হবে জান্নাতে তার ও নবীদের মধ্যে মাত্র এক ধাপের পার্থক্য থাকবে (দারেমী)

হাদিস ২৪:

রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-,”নিশ্চয়ই ইলমে দ্বীন অন্বেষনকারী, পিতা-মাতার অনুগত সন্তান এবং স্বামীর অনুগত স্ত্রী বিনা হিসাবে নবীগণের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে”।

হাদিস ২৫:

অন্য হাদীসে রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- “নিশ্চয়ই ফেরেস্তাগণ ইলমে দ্বীন অন্বেষণকারীর সন্তুষ্টির জন্য তাদের পায়ের নীচে তাদের ডানা সমূহ বিছিয়ে দেন”।

হাদিস ২৬:

রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- “একজন আলেম বা তালিবুল ইলম যখন কোন গ্রামের উপর দিয়ে গমন করেন তখন আল্লাহপাক সেই আলেম বা তালিবুল ইলিমের সম্মানে সেই গ্রামের মুর্দাদের কবরের আজাব চল্লিশ দিনের জন্য উঠিয়ে নেন”।

হাদিস ২৭:

নবী (ﷺ) ইরশাদ করেন-“যে ব্যক্তি একজন তালিবুল ইলম বা ইলমে দ্বীন অন্বেষনকারীকে সম্মান করলো সে যেন সত্তরজন নবীকে সম্মান করলো।

হাদিস ২৮:

হযরত আনাস (رضي الله عنه) সূত্রে বর্ণিত,রাসূল (ﷺ) বলেছেন: “ইলমে দ্বীন অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ।”

তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াইবুল ঈমান, ২য় খন্ড,৭২৪ পৃ: হজরত আনাছ (رضي الله عنه) থেকে ৬টি সনদে উল্লেখ আছে।
২.মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদিস নং ২৮৪৭।
৩.ইমাম তাবারানী তাঁর ‘আওছাতে আনাস (رضي الله عنه) থেকে, ২য় খন্ড, ৪৮ পৃ: ও ৬ষ্ঠ খন্ড, ২১৯, ২৯৮ ও ২৩১ পৃ।
৪.খতিবে বাগদাদী : তারিখে বাগদাদ, ১ম খন্ড, ৪০৭ পৃঃ।
৫.সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ২২৪।
৬.মুসনাদে বাজ্জার, হাদিস নং ৬৭৪৬।
৭.মিসকাত শরীফ : ইলিম অধ্যায়ে হাদিস নং ২১৮।
৮.ইমাম ইবনে আদী তার কামিলে’ ৫ম খন্ড, ২৪২ পৃ
৯.ইমাম তাবারানী: মুজামুল আওসাত, হাদিস/৯; হজরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে।
১০.ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, ১০ম খন্ড, ৫৭-৬০ পৃ: এরূপ মােট ৮টি হাদিস বিভিন্ন সাহাবী থেকে বর্ণিত রয়েছে।
১১.হাফিজ ইমাম উকাইলী (رحمة الله) তাঁর কিতাবুদ দ্বোয়াফায়’ ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে।
১২.ইমাম আবু নুয়াইম তাঁর হুলিয়াতে’ ৮ম খন্ড, ৩২৩ পৃঃ।
১৩.ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, ২য় খন্ড, ৫৬ পৃঃ; হা: নং ১৬৬৫।

হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্নিত হাদিসটির বিভিন্ন সূত্রঃ

– ইমাম ইবনে সিরিন (رحمة الله) সূত্রে।
– মুছান্না ইবনে দিনার (رحمة الله) সূত্রে।
(মুজামে ইবনে আরাবী, হাদিস নং ২০৯৫)
– আছিম আহওয়াছ (رحمة الله) সূত্রে।
(ইমাম তাবারানী: মুজামুল আওছাত, হাদিস নং ২০০৮)।
– যিয়াদ ইবনে মায়মুন (رحمة الله) সূত্রে।
(ইমাম তাবারানী: মুজামুল আওছাত, হাদিস নং ২৪৬২)।
– ইমাম যুহুরী (رحمة الله) সূত্রে।
(ইমাম তাবারানা: মুজামুল আওছত, হাদিস নং ৮৩৮১)
– ইসহাক ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবী ত্বলহা (رحمة الله) সূত্রে।
(ইমাম তাবারানী: মুজামুল কবীর, হাদিস নং ২০৮৪)
– মাকহুল (رحمة الله) এর সূত্রে।
(ইমাম তাবারানী: মুসনাদে শামেঈন, হাদিস নং ৩৩৭৫)।

হাদিস ২৯:

“আলিমের ঘুম মূর্খ আবিদের (ইবাদতকারীর) নফল ইবাদতের চেয়েও উত্তম।”

সূত্রসমূহঃ
হযরত সালমান ফারছী (رضي الله عنه) সূত্রে।
হযরত আলী (رضي الله عنه) সূত্রে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবী আওফা (رضي الله عنه) সূত্রে।

i) হযরত সালমান ফারছী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: আলিমের ঘুম অজ্ঞ লোকের নফল নামাজের চেয়েও উত্তম।”

১.ইমাম আবু নুয়াইম: হিলিয়াতুল আউলিয়া, ৪র্থ খন্ড, ৩৮৫ পৃঃ।
২.আল্লামা মানাভী: ফায়জুল কাদির, হদিস নং ১২৭৪১।
৩.আত তানভীর শরহে জামেউছ ছাগীর, হাদিস নং ৯২৭৫।
৪.ইমাম সুয়ূতী, ফাতহুল কবীর, হাদিস নং ২৩।
৫.ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ২৮৭১১।
৬.ইমাম আযলুনী; কাশফুল খাফা, হাদিস নং ২৮৬৭।

ii) উক্ত হাদিসের অন্যান্য রেফারেন্স।
১.মুসনাদে ফেরদৌস, হাদিস নং ৬৭৩১।
২.ইমাম গাজ্জালী: এহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন, ১ম খন্ড, ৩৪৩ পৃ:।
৩.ইমাম মােল্লা আলী: আসরারুল মারফুয়া, হাদিস নং ৫৬৭।
৪.গাউছে পাক: সিররুল আছরার, ৬০ পৃ।
৫.তাফছিরে রুহুল বয়ান, সূরা যারিয়াতের ১৫-১৯ নং আয়াতের তাফছিরে।
৬.বাহরুল মাদিদ ফি তাফছিরিল কুরআনিল মাজিদ, ৫ম খন্ড, ৫৬৯ পৃ:।
৭.তাফছিরে মাজহারী, ৬ষ্ঠ, খন্ড, ১৮৯ পৃঃ।
৮.ইমাম সূয়ূতী: শরহু সুনানু ইবনুে মাজাহ, ১ম খন্ড, ৯৮ পৃঃ।
৯.ইমাম মােল্লা আলী কারী : মেরকাত শরহে মেসকাত, ৬০৩৪ নং হাদিসের ব্যাখ্যায়।
১০.আল্লামা মানাভী: আত, তাইছির বি’শরহে জামেইছ ছাগীর, ২য় খন্ড, ৪৬২ পৃ:।
১১.আত তানভীর শরহে জামেউছ ছাগীর, ২য় খন্ড, ৫৪৫ পৃ:।
১২.তাখরিজু আহাদিসুল এহইয়া, হাদিস নং ৫।
১৩.ইমাম আজলুনী: কাশফুল খফা, হাদিস নং ২৮৩৯।
১৪.মাজমুয়ায়ে ফাতওয়া, ৭ম খন্ড, ৪৪ পৃঃ।
১৫.কুওয়াতুল কুলুবে ফি মুয়ামালাতিল মাহবুব, ১ম খন্ড, ৬৭ পৃ:।
১৬.তাফছিরে কবীরের” ২য় জি: ১৮৯ পৃ:

iii) “হজরত আলী (رضي الله عنه) সূত্রে।
(ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ২৯৩৮৬)।

iv) হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আবী আওফা (رضي الله عنه) থেকে জয়ীফ সনদে বর্ণনা করেছেন।
ইমাম অজিলুনী (রঃ) তিনি ইমাম বায়হাকী (রঃ) সূত্রে : কাশফুল খফা।

হাদিস ৩০:

“আলিমগণ নবীদের ওয়ারিছ (উত্তরাধিকারী)।”

১.সুনানে আবী দাউদ, হা: নং ৩৬৪১।
২.তিরমিজি শরিফ, ২৬৮২ নং হা।
৩.সুনানে ইবনে মাজাহ, হা: নং ২২৩।
৪.মুসনাদে আহমদ, ৫ম খন্ড, ১৯৬ পৃ:।
৫.ইমাম তাহাবী: শরহে মুশকিলুল আছার, হাদিস নং ৯৮২।
৬.মুজামে ইবনে আরাবী, হাদিস নং ১৬০৯।
৭.ছহীহ্ ইবনে হিব্বান, ১ম খন্ড, ২৮৯ পৃ:।
৮.ইমাম তাবারানী: মুসনাদে শামেঈন, হাদিস নং ১২৩১।
৯.মুসনাদে শিহাব, হাদিস নং ৯৭৫।
১০.ইমাম বায়হাক্বী: আল আদাব, হাদিস নং ৮৬২।
১১.ইমাম বায়হাকী: মাদখাল, হাদিস নং ৩৪৭।
১২.তাফছিরে রুহুল মায়ানী, ১৬ তম খন্ড, ৬২৭ পৃ:।
১৩.তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৫ম খন্ড, ৫৮৫ পৃ।
১৪.ইমাম গাজ্জালী: মুকাশাফাতুর কুলুব, ১ম খন্ড।


হাদিস ৩১:


“পথভ্রষ্ট আলিমগণ দাজ্জাল অপেক্ষা অধিক ভয়ংকর।”

[আবূ যার (رضي الله عنه) সূত্রে, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২০৩৩৫]

হাদিস ৩২:

“তারা ইলম ছাড়া ফাতওয়া দিয়ে নিজেও পথভ্রষ্ট হবে, অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করবে।”

১.সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-৪৫৭১,
২.বুখারী শরীফ, হাদিস নং-১০০,
৩.সহীহ মুসলিম শরীফ, হাদিস নং-৬৯৭১,
৪.মুসনাদুস শিহাব, হাদিস নং-৫৮১

ফিত্না বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হল ইলমহীন, অপরিপক্ক যুবকদের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা।

হাদিস ৩৩:

হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে,

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ، سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «أَلَا إِنَّ الدُّنْيَا مَلْعُونَةٌ وَ مَلْعُونٌ مَا فِيهَا إِلَّا ذِكْرُ اللَّهِ وَمَا وَالَاهُ وَعَالِمٌ أَوْ مُتَعَلِّمٌ» «هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ

‘মনে রেখ, নিশ্চয় দুনিয়া অভিশপ্ত। অভিশপ্ত এতে যা আছে তা-ও। শুধু আল্লাহ তা‘আলার জিকির ও জিকিরের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো এবং আলেম ও তালেবে এলেম ছাড়া।’

১.তিরমিযী, আস সুনান, কিতাবুয যুহদ, হাদীস নং ২৩২২;

২.ইবন মাজাহ, আস সুনান, কিতাবুয যুহদ, হাদিস

নং ৪১১২

হাদিস ৩৪:

হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

مَنْ تَعَلَّمَ عِلْماً مِمَّا يُبْتَغَيْ بِهِ وَجْهُ اللهِ – عَزَّ وَجَلَّ لا يَتَعَلُّمُهُ إِلَّا لِيُصِيْبَ بِهِ عَرَضاً مِنَ الدُّنْيَا لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الْجَنَّةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি এমন জ্ঞান অর্জন করেছে, যা দিয়ে ইলম ও সৎকাজের ফযিলত আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। আর যদি সে ঐ জ্ঞান দুনিয়া অর্জনের নিমিত্তে শিখে, তাহলে সে কিয়ামতের দিন বেহেশতের ঘ্রাণও পাবে না’।

(আবু দাউদ, ইমাম নববী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)

১. আবু দাউদ, আস সুনান, কিতাবুল ইলম, হাদীস নং ৩৬৬৪।

২.ইবন মাজাহ, আস সুনান, আল মুকাদ্দামা,

হাদীস নং ২৫২।

হাদিস ৩৫:

হযরত আনাস ইবন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেন, পৃথিবীতে ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টান্ত আকাশের সেই সমস্ত তারকারাজির ন্যায় যাদের আলােতে স্থলপথ এবং সমুদ্রপথের অন্ধকারে দিশা মিলে এবং যদি সেই তারকারাজি অদৃশ্য হয়ে যায় তবে (পথিকের পথের দিশা) রাস্তা হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা দেখা দেয়। (অর্থাৎ, ওলামায়ে কিরাম যদি না হন, তবে সাধারণ মানুষ পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।)

[ইমাম আহমদঃ আল-মুসনাদ, হাদীস নং ১২৬২১]

হাদিস ৩৬:

হযরত জাবির (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেন, ‘ইলম (জ্ঞান) দু’ ধরণের। এক ধরণের ইলম ক্বলব বা অন্তরে জন্ম নেয় এবং ঐ জ্ঞান উপকারী এবং আরেক ধরণের জ্ঞান মৌখিক হয় যা আদম সন্তানের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে হুজ্জত স্বরূপ।

১.দারেমী, আস সুনান, হাদীস নং ৩৬৪;

২.মুনযেরী, আত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং ১৪০

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে- ইলম দু ধরণের হয়ে থাকে। এক ধরণের ইলম অন্তরে গ্রথিত হয়। আরেক ধরণের জ্ঞান মুখ-গহবরে সঞ্চারিত হয়। আর এ জ্ঞান আল্লাহর বান্দাদের জন্য হুজ্জত বা প্রমাণ স্বরূপ। (অর্থাৎ, বান্দা যদি বিশুদ্ধ আমল না করে, তবে এ ইলম তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে)

হাদিস ৩৭:

‘সোনা রূপার খনির মতো মানুষও (বিভিন্ন প্রকারের) খনি। তাদের মধ্যে যারা ইসলাম গ্রহণের পূর্বে উত্তম (গুণ বৈশিষ্ট্যধারী) হয়ে থাকে, দীনের সঠিক বুঝ-জ্ঞান লাভ করতে পারলে ইসলাম গ্রহণের পরও তারাই উত্তম মানুষ হয়ে থাকে।’ -সহীহ মুসলিম : আবু হুরাইরা (رضي الله عنه)।

হাদিস ৩৮:

‘জ্ঞান বিজ্ঞানের কথা জ্ঞানী ও বিজ্ঞানীদের হারানো ধন। সুতরাং যেখানেই তা পাওয়া যাবে, প্রাপকই তার অধিকারী। -তিরমিযি।

হাদিস ৩৯:

“দ্বীনের জ্ঞানী ব্যক্তি কতইনা উত্তম মানুষ। তার কাছে লোকেরা এলে তিনি তাদের উপকৃত করেন, আর না এলে তিনি কারো মুখাপেক্ষী হন না।’-মিশকাত।

হাদিস ৪০:

‘জ্ঞানের আধিক্য (নফল) ইবাদতের আধিক্যের চাইতে উত্তম।” -বায়হাকি : আয়েশা রা.।

হাদিস ৪১:

‘সর্বোত্তম মানুষ হলো তারা, জ্ঞানীদের মধ্যে যারা উত্তম।’ -দারিমি।

হাদিস ৪২:

“যে ব্যক্তি জ্ঞানান্বেষণে আত্মনিয়োগ করে, এ কাজের ফলে তার অতীতের দোষত্রুটি মুছে যায়।’ -তিরমিযি, দারিমি।

হাদিস ৪৩:

‘রাতের কিছু অংশ জ্ঞান চর্চা করা, সারা রাত (ইবাদতে) জাগ্রত থাকার চাইতে উত্তম।’ (দারিমি)

হাদিস ৪৪:

আবুদ দারদা (رضي الله عنه) বলেন :

إِنَّمَا الْعِلْمُ بِالتَّعَلُّمِ

ইলম তো শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমেই অর্জিত হয়। (তাবাকাতুশ শাফিইয়াহ আল কুবরা, হাসান)

হাদিস ৪৫:

ইবনে মাসঊদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন :

لَا حَسَدَ إِلَّا فِيْ اثْنَتَيْنِ: رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ مَالاً فَسَلَّطَهُ عَلَى هَلَكَتِهِ فِي الْحَقِّ، وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهُ حِكْمَةً فَهُوَ يَقْضِيْ بِهَا وَيُعَلِّمُهَا

দুই ব্যক্তির ওপর ঈর্ষা করা যেতে পারে: একজন হলো, যাকে আল্লাহ তাআলা মাল দিয়েছেন এবং তাকে সত্যের পথে খরচ করার তাওফীকও দিয়েছেন। আর অপরজন হলো, যাকে আল্লাহ হেকমত দিয়েছেন অতঃপর সে ঐ হেকমত দ্বারা ফয়সালা করে এবং মানুষকে তা শিক্ষা দেয়। (বুখারী)

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment