সুলতান মাহমুদ গজনবী যিনি এ উপমহাদেশের মূতিপূজারীদের ত্রাস ছিলেন । উনার সাথে বিখ্যাত এক মনীষীকে নিয়ে একটি বিষ্ময়কর ঘটনা ইতিহাসের পাতায় লিখা আছে।
সেই সুলতান মাহমুদ একদিন তার বাগানে অবস্থিত ঘরের ছাদে বসে ছিলেন। সেখানে থাকা সেই মুসলিম বিজ্ঞানীকে বললেন, সেই বাড়ির চারটি দরজার মধ্যে কোন দরজা দিয়ে সুলতান মাহমুদ বের হবেন, তা যেন সেই বিজ্ঞানী গুনে ঠিক করেন। তারপর বিজ্ঞানী যেন তার অভিমত একটি কাগজে লিখে সুলতান মাহমুদের কম্বলের নিচে রেখে যান। সেই বিজ্ঞানী অঙ্ক কষে বের করেন এই প্রশ্নের উত্তর। তা একটি কাগজে লিখে কম্বলের নিচে রেখে যান। এদিকে, সুলতান মাহমুদ একজন রাজমিস্ত্রীকে ডেকে নিয়ে আসেন। তাকে দিয়ে নতুন করে একটি দরজা বানান তিনি। তারপর বের হয়ে দ্রুত ছুটেন তার কম্বলের নিচের কাগজটি দেখতে। সেখানকার লেখা দেখে তাজ্জব বনে যান সুলতান মাহমুদ। লেখা রয়েছে-
“আপনি পূর্ব দিকের দেয়াল কেটে একটি নতুন দরজা বানিয়ে সেটি দিয়ে বের হবেন”
বিশ্বের অন্যতম পরাক্রমশালী বীর সুলতান মাহমুদ বিজ্ঞানীর এই অবাক করা জ্ঞানের সুক্ষতা দেখে বিষ্মিত হয়েছিলেন। পরিক্ষা করার জন্যে সাথে সাথে তিনি সেই বিজ্ঞানীকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়ার নির্দেশ দিলেন।এ অবস্থায় সেই বিজ্ঞানীর কিছুই করার ছিলো না। তাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়া হলো।
কিন্তু সেই বিজ্ঞানী মারা যাননি, এমনকি বেশি আঘাতও পাননি। কারণ নিচে ছিলো মশামাছি প্রতিরোধের জাল। সেখানে আটকে ধীরে ধীরে নিচে পড়ে যাওয়ায় ভয়ানক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচেন তিনি। সুলতান মাহমুদ আরও অবাক হলেন। বিজ্ঞানীকে তার ব্যক্তিগত ডায়েরি নিয়ে আসতে বলা হলো। সেই ডায়েরিতে মূলত ছিলো জ্যোতির্বিদ্যা সংক্রান্ত কথা। সেখানকার একটি লেখা দেখেও তাজ্জব বনে যান সুলতান মাহমুদ।
“আমি আজকে উঁচু জায়গা থেকে নিচে পড়ে যাবো। কিন্তু বিশেষ আঘাত পাবো না”
বিখ্যাত এই বিজ্ঞানীর নাম আল-বিরুনী। পুরো নাম আবু আল-রায়হান মুহম্মদ ইবনে আহমাদ আল-বিরুনী। ৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ৪ সেপ্টেম্বর পুরাতন অক্সাস নদীর তীরে (বর্তমান আমু দারিয়া নদী নামে অধিক পরিচিত) খোরাসানের একটি জায়গা খোওয়ারিজমে (বর্তমানে এটি উজবেকিস্তানের একটি স্থান) জন্মগ্রহণ করেন আল-বিরুনী। দশম শতকের শেষ এবং একাদশ শতকের শুরুর দিকে বিশ্বের যে সকল মনীষী সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নিজেদেরকে উজার করে দিয়েছেন তাদের মধ্যে আল-বিরুনী অন্যতম। জ্যোতির্বিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র, রসায়ন, জীবতত্ত্ব, ভূতত্ত্ব, উদ্ভিদতত্ত্ব, গণিতবিদ্যা, দর্শন, ন্যায়শাস্ত্র, ইতিহাস কিংবা ধর্মতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ে অসাধারণ পাণ্ডিত্য ছিলো তার।




Users Today : 39
Users Yesterday : 357
This Month : 39
This Year : 171910
Total Users : 287773
Views Today : 5828
Total views : 3413391