*আরশে লেখা আছে- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ [ﷺ]*
بسم الله الرحمن الرحيم. الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على سيد المرسلين وعلى آله وصحبه أجمعين. أما بعد]
মুসলমানের ঈমানী কলেমা শরীফ নিয়ে আজ ইয়াজিদ ও মুনাফেকের দল নতুন ফতোয়াবাজীতে লিপ্ত হয়েছে। তাই মনোযোগ দিয়ে পড়ুন ও শেয়ার করুন।
হাদিছ শরীফগুলো পড়ুন:
★হাদীস নং- ১
روى سيدنا عبد الله بن عمر رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وآله وسلم (لما اقترف آدم الخطيئة قال: يا رب أسألك بحق محمد إلا غفرت لي فقال الله تعالى يا آدم كيف عرفت محمدا ولم أخلقه؟ قال: يا رب إنك لما خلقتني رفعت رأسي فرأيت علي قوائم العرش مكتوبا لا إله إلا الله محمد رسول الله فعلمت أنك لم تضف إلى اسمك إلا أحب الخلق إليك فقال الله تعالى صدقت يا آدم إنه لأحب الخلق إلى وإذ سألتني بحقه فقد غفرت لك ولو لا محمد ما خلقتك
অনুবাদ: হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুল [ﷺ] বলেছেন, যখন আদম আলাইহিস সালামের কাছে তাঁর নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল ভক্ষণের বিষয়টি ধরা পড়ল, তখন তিনি বললেন, হে আল্লাহ, আমি মুহাম্মাদের [ﷺ] ওয়াসীলা নিয়ে তোমার দরবারে ফরিয়াদ করছি, আমাকে ক্ষমা করে দাও।
অতঃপর আল্লাহ বললেন, হে আদম, তুমি মুহাম্মাদকে কীভাবে চিনলে, এখনো যাকে সৃষ্টি করি নাই?
আদম (আ:) বললেন, হে আল্লাহ, তুমি যখন আমাকে সৃষ্টি করেছিলে, আমি তখন আমার মাথা উঠিয়েছিলাম। তখন দেখতে পেয়েছিলাম, আরশের খুটিগুলোর উপর লেখা, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম, সমগ্র সৃষ্টির মধ্য সবচেয়ে প্রিয় না হলে তুমি তাঁর নাম তোমার নামের সাথে মিলাতে না।
অতঃপর আল্লাহ বললেন, হে আদম তুমি ঠিকই বলেছ। নিশ্চয়ই সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সে আমার সবচেয়ে প্রিয়, আর যেহেতু তুমি তাঁর ওয়াসীলা নিয়ে আমার কাছে দোয়া করেছ, তাই তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। আর (জেনে রাখ), মুহাম্মাদকে সৃষ্টি না করলে আমি তোমাকে সৃষ্টি করতাম না।
রেফারেন্স:
দালাইলুন নুবুওওয়াহ লিল বাইহাকী ৫/৪৮৯
আল মুস্তাদরাক লিল হাকিম-২/৬১৫ আল মু’জামুল আওসাত লিত তাবারানী- ৬৪৯৮
যে সকল মুহাদ্দিসীন এ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন:
১-ইমাম হাকিম বলেছেন হাদিসটি সহীহ। আল মুস্তাদরাক-২/৬১৫
২- ইমাম তকি উদ্দীন সুবকী বলেন, হাদিসটি হাসান। শিফাউস সিকাম, পেইজ-১২০
৩- ইমাম তকী উদ্দীন দামেশকী বলেন, হাদীসটি বিশুদ্ধ। দাফউ শুবহাহ: ১/৭২
৪-ইমাম কস্তল্লানী বলেন, হাদিসটি বিশুদ্ধ। মাওয়াহিবুল লাদুনিয়াহ: ১/১৬
৫- ইমাম সামহুদী বলেন, হাদিসটি সহীহ। ওয়াফাউল ওয়াফা: ২/৪১৯
৬- ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী বলেন, বিভিন্ন সনদে বর্ণিত এ হাদিসটি বিশুদ্ধ। আল খাসাইস: ১/৮
৭- ইবনু তাইমিয়্যাহ এ হাদীসটি দলীল হিসাবে তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন। মাজমাউল ফাতাওয়া: ২/১৫৯
সুতরাং প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসগণের এসব মন্তব্যের পর আর কোনো সন্দেহ থাকল না; নিঃসন্দেহে বলা যায় হাদিসটি সহীহ।
★ হাদীস নং- ২
আর এই পবিত্র কালিমা শরীফ সহীহ সনদে হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে। আসুন, আমরা সনদ-সহ হাদীস শরীফখানা লক্ষ্য করি:
حدثنا علي بن حمشاد العدل املاء هرون بن العباس الهاشمي ثنا جندل بن والق ثنا عمرو بن أوس الانصاري
حدثنا سعيد بن ابي عروبة عن قتادة عن سعيد بن المسيب عن ابن عباس رضي الله عنه قال اوحي الله الي عيسي عليه السلام يا عيسي امن بمحمد صلي الله عليه و سلم وامر من ادركه من امتك ان يؤمنوا به فلو لا محمد صلي الله عليه و سلم ما خلقت ادم عليه السلام ولولا محمد صلي الله عليه و سلم ما خلقت الجنة و النار ولقد خلقت العرش علي الماء فضطرب فكتبت عليه “لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم فسكن. هذا حديث صحيح الاسناد
অর্থ: হযরত ইমাম হাকিম নিশাপুরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে (এই) হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আলী বিন হামশাদ আদল ইমলা রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন হারূন বিন আব্বাস হাশেমী রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন জানদাল বিল ওয়াকিল রহমাতুল্লাহি আলাইহি। তিনি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত আমর বিন আউস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু।
সনদ পরিবর্তন/ দ্বিতীয় সনদ: হযরত ইমাম হাকিম রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমাদের কাছে হাদীস শরীফ বর্ণনা করেছেন হযরত সাঈদ বিন আবু উরূবাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি; তিনি হযরত ক্বাতাদাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে; তিনি সাঈদ বিন মুসাঈয়িব রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে; তিনি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে:
হযরত ইবনে আব্বাস (রা:) বলেন, ” মহান আল্লাহ পাক তার রসূল হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে ওহী প্রেরণ করলেন: হে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম ! আপনি মুহাম্মাদ [ﷺ]-এর প্রতি ঈমান আনুন এবং আপনার উম্মতের মধ্যে ওনাকে যারা পেতে চায় তাদের নির্দেশ করুন, তারা যেন ওনার প্রতি ঈমান আনে। যদি মুহম্মদ [ﷺ] না হতেন তবে আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করতাম না, যদি মুহম্মদ [ﷺ] সৃষ্টি না হতেন তবে জান্নাত এবং জাহান্নাম সৃষ্টি করতাম না। আর যখন আমি পানির ওপর আরশ সৃষ্টি করলাম তখন তা টলমল করছিলো, যখনই আরশের মধ্যে لا اله الا الله محمد رسول الله ﷺ লিখে দেই, তৎক্ষণাৎ আরশ স্থির হয়ে যায়।” এই হাদীস শরীফের সনদ সহীহ।”
দলীল – আল মুসতাদরাক আলাছ ছহীহাঈন লিল হাকীম নিসাবূরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, – কিতাবু তাওয়ারীখিল মুতাক্বাদ্দিমীন- যিকরু আখবারী সাইয়্যিদুল মুরসালীন ওয়া খাতামুন নাব্যিয়িন মুহম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিব মুছতাফা ছলাওয়াতুল্লাহি আলাইহি ওয়া আলিহীত ত্বহীরিন, ৪র্থ খণ্ড, ১৫৮৩ পৃষ্ঠা। মুখতাছারুল মুসতাদরাক, ২য় খণ্ড, ১০৬৭ পৃষ্ঠা।
★ হাদীস নং-৩
বিখ্যাত ইমাম হাফিজে হাদীস আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ুতি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেন –
عن ابن عباس رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلي الله عليه و سلم ما في الجنة شجرة عليها ورقة الا مكتوب عليها لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم
অর্থ: হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে হুজুর পাক [ﷺ] ইরশাদ করেন, জান্নাতের এমন কোনো গাছ নেই যার পাতার মধ্যে [لا اله الا الله محمد رسول الله ﷺ] এই বরকতময় কালিমা শরীফ লিখিত নেই।”
দলীল – খাছায়েছুল কুবরা, ১ম খণ্ড, ১৩ পৃষ্ঠা। আল হিলইয়া লি আবু নুয়াইম রহমাতুল্লাহি আলাইহি।
★ হাদীস নং- ৪
হযরত ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আরো বর্ননা করেন –
عن حضرت جابر رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلي الله عليه و سلم مكتوب علي باب الجنة لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم
অর্থ: হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে হুজুর পাক [ﷺ] ইরশাদ মুবারক করেন, জান্নাতের দরজাসমূহে লিখা রয়েছে – لا اله الا الله محمد رسول الله ﷺ
দলীল- খাছায়িছুল কুবরা, ১ম খণ্ড
★ হাদীস নং- ৫
কিতাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বর্ণনা রয়েছে –
عن حضرت ابي الحسن علي بن عبد الله الهاشمي الرقي رحمة الله عليه قال : دخلت بلاد الهند، فرايت في بعض قرأها شجرة ورد اسود ينفتح عن وردة كبيرة طيبة الراءحة سوداء عليها مكتوب بخط ابيض لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم ابو بكرن الصديق عليه السلام عمر الفاروق رضي الله عنه فشككت في ذاك وقلت انه معمول فعمدت الي حبة لم تفتح ففتحتها فرايت فيها كما رايت في ساءر الورد في البلد منه شيء كثير
অর্থ: হযরত ইবনে আসাকির রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত ইবনে নাজ্জার রহমাতুল্লাহি আলাইহি দু’জন স্বীয় ইতিহাসগ্রন্থে হযরত আবুল হাসান আলী ইবনে আব্দুল্লাহ আল হাশীমি আররক্বী রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেন; তিনি বলেন, “আমি ভারতবর্ষের কোনো এক এলাকায় পৌঁছে একটি কালো রঙ্গের গোলাপ গাছ দেখলাম। এর একটি ফুল অনেক বড়, যার রঙ কালো, সুগন্ধিময় নয় তবে অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর ছিলো। ওই ফুলটির গায়ে সাদা হরফে লিখা ছিলো –
لا اله الا الله محمد رسول الله صلي الله عليه و سلم ابو بكرة صديق رضي الله غنه عمر الفاروق رضي الله عنه
আমি মনে মনে চিন্তা করলাম এবং আমার বিশ্বাস হলো, নিশ্চয়ই এটা কারো কাজ হবে। তাই আমি অন্য একটি বন্ধ (অ-ফোটা) কলি খুলে দেখলাম। আশ্চর্যের বিষয়, তাতেও এ রকমই লিখা ছিলো। এ ধরনের গোলাপ গাছ সেখানে প্রচুর পরিমাণ ছিলো।” সুবহানাল্লাহ্ !!
দলীল – ইবনে আসাকির ইবনে নাজ্জার।
উপরোক্ত নির্ভরযোগ্য দলীল থেকে প্রমাণিত হলো যে কালিমা শরীফ হচ্ছে ” লা’ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহম্মদুর রসূলাল্লাহ” [ﷺ]।
অথচ সালাফী-ওহাবীপন্থী মুরতাদরা বলছে, এ ধরনের কোনো কালিমা শরীফ নাকি ইসলামে নাই। নাউযুবিল্লাহ !! শুধু তাই নয় মওদূদীবাদী জামাতের জালেম মৌ: তারেখ মনোয়ার বলেছে কালিমা শরীফে ” লা’ইলাহা ইল্লাল্লাহু ” এই বাক্যের পাশাপাশি “মুহম্মদুর রসূলাল্লাহ [ﷺ] লিখা না-কি শিরক। নাউযুবিল্লাহ !! অথচ উপরোক্ত হাদীস শরীফ দেখুন, স্পষ্টভাবেই দুইটা কালাম একসাথেই আছে। এবং হাদীস শরীফের ইমামবৃন্দ-ও পাশাপাশিভাবে নিজেদের কিতাবে তা উল্লেখ করেছেন। এতো সহীহ দলীল থাকার পরও কীভাবে এরা বিরোধিতা করে? হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে; মহানবী (দ:) এরশাদ ফরমান – “আখেরী জামানায় কিছু মিথ্যাবাদী দাজ্জালের চেলা বের হবে। এরা এমন সব কথা বলবে যা তোমরা শোনোনি, তোমাদের বাপ দাদারাও শোনেনি।” [দলীল – মুসলিম শরীফ]। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এসব কুলাঙ্গার থেকে হেফাজত করুন, আমীন।
[মুফতী মওলানা এস, এম, সাকীউল কাওছার, ঘিলাতলা দরবার শরীফ, কুমিল্লা]