ইমাম আহমদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক্ব আল মারুফ ইবনে সুন্নী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৩৬৪ হিজরী তদীয় কিতাবে ছহীহ্ সনদে উল্লেখ করেন:-
حَدَّثَنَا أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَخْبَرَنَا عَمْرُو بْنُ مَنْصُورٍ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ، حَدَّثَنَا شُعَيْبٌ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ: اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَالدَّرَجَةَ الرَّفِيعَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ، حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
-“হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ) বলেছেন: আযান শুনার পরে যে ব্যক্তি বলবে: ‘আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহীদ দাওয়াতীত তাম্মাত ওয়াছ ছালাতীল কায়িমা আতি মুহাম্মাদাল ওয়াছিলাতা ওয়াল ফাদ্বিলাহ ওয়াদ দ্বারাজাতুর রাফিআ বায়াছহু মাকামান মাহমুদা আল্লাজি ওয়াদতাহু’ ঐ ব্যক্তির জন্য আমার শুপারিশ আবশ্যক হয়ে যাবে।”৩৬৩৬, ইমাম ইবনে সুন্নী: ‘আমালু ইয়ামু ওয়াল লাইলাতি, হাদিস নং ৯৫, দারুল কিবলা লিছ-ছাকাফাতিল ইসলামিয়্যা, বয়রুত, লেবানন; ইমাম আসকালানী: তালখিছুল হাবির, ১ম খন্ড, ৫১৮ পৃ:;
ইহার সনদ ছহীহ্।
এই হাদিসের বর্ণনাকারী مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ ‘মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির’ বিশিষ্ঠ বিশ্বস্ত তাবেঈ ও বুখারী-মুসলীমের রাবী। বর্ণনাকারী شُعَيْبٌ ‘শুয়াইব’ বিশ্বস্ত ও বুখারী-মুসলীমের রাবী। عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ ‘আলী ইবনে আইয়াশ’ বিশ্বস্ত ও ছহীহ্ বুখারীর রাবী। বর্ণনাকারী عمرو بن منصور، أبو سعيد النسائي ‘আমর ইবনে মানছুর আবু সাঈদ নাসাঈ’ বিশ্বস্ত রাবী। ইমাম নাসাঈ ( رَحْمَةُ الله عليه) তার ব্যাপারে বলেছেন: ثقة مأمون ثَبْت -“বিশ্বস্ত গ্রহণযোগ্য ও প্রমাণিত।” ৩৭৩৭, ইমাম যাহাবী: তারিখুল ইসলাম, রাবী নং ৩৫৫;
আরেকজন রাবী হলেন,
النَّسَائِيُّ أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَحْمَدُ بنُ شُعَيْبِ بنِ عَلِيٍّ -“নাসাঈ আবু আব্দুর রহমান আহমদ ইবনে শুয়াইব ইবনে আলী’ যিনি ইমাম নাসাঈ ( رَحْمَةُ الله عليه) নামে খ্যাত ও ছিহাহ্ ছিত্তার অন্যতম কিতাব ‘সুনানে নাসাঈ’ কিতাবের মুছান্নিফ। তিনি তো নিজেই ইমাম ও বিশ্বস্ত। অতএব, এই হাদিস অবশ্যই ছহীহ্ ও নির্ভরযোগ্য।
آتِ محمدا الوسيلة والفضيلة والدرجة الرفيعة -“হযরত মুহাম্মদ ( ﷺ) কে দান কর ‘অছিলাহ’ ও ‘ফাদ্বিলাহ’ এবং সর্বোচ্চ মর্যাদার স্থান। এ বিষয়ে আল্লামা ইসমাঈল হাক্বী হানাফী ( رَحْمَةُ الله عليه) তদীয় কিতাবে বলেন,
ويقول بعد الاذان اللهم رب هذه الدعوة التامة والصلاة القائمة آت محمدا الوسيلة والفضيلة والدرجة الرفيعة وابعثه المقام المحمود الذي وعدته
-“আল্লাহর হাবীব ( ﷺ) বলেছেন: (আযানের দোয়া) ‘আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহীদ দাওয়াতীত তাম্মাত ওয়াছ ছালাতীল ক্বায়িমা আতি মুহাম্মাদাল ওয়াছিলাতা ওয়াল ফাদ্বিলাহ ওয়াদ দ্বারাজাতুর রাফিয়াওয়া বায়াছহু মাকামান মাহমুদা আল্লাজি ওয়াদতাহু’। ৩৮৩৮, তাফছিরে রুহুল বয়ান, ৭ম খন্ড, ২৬৩ পৃ:;
ইমাম গাজ্জালী ( رَحْمَةُ الله عليه) তদীয় ‘এহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন’ কিতাবে অনুরূপ উল্লেখ করেছেন। লক্ষ্য করুন, ইমাম ইবনে সুন্নী ( رَحْمَةُ الله عليه) এর বর্ণিত মারফ‚ পর্যায়ের ছহীহ্ হাদিস দ্বারা وَالدَّرَجَةَ الرَّفِيعَةَ ‘ওয়াদ দ্বারাজাতুর রাফিআ’ অংশটুকু প্রমাণিত থাকার পরেও কথিত ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার ‘হাদিসের নামে জালিয়াতী’ বই-এ লিখেছেন এই বাক্যটি বানোয়াট!! তিনি এই বাক্যটিকে বানোয়াট সাব্যস্থ করার জন্য কয়েকজন মুহাদ্দিছ যেমন হাফিজ ইবনু হাজার, মোল্লা আলী ক্বারী, সাখাবী, যুরকানী ( رَحْمَةُ الله عليه) এর নাম ভাঙ্গিয়েছেন। অথচ এই ইমামগণের কেউ ইহাকে বানোয়াট বলেননি। প্রিয় পাঠক! আপনারা’ই বলুন, এটা ইমামদের নামে জালিয়াতী নয় কি?
আরেক দিকে কওমী আলেম জনাব আব্দুল মালেক সাহেব তিনার ‘প্রচলিত জাল হাদিস’ নামক বইয়ের প্রথম প্রকাশের ১৫৮ পৃষ্টায় বলে দিলেন-
“সাধারণত লোকেরা একে হাদীসে বর্ণিত দুআর অংশ মনে করে থাকে; অথচ তা হাদিসে বর্ণিত দুয়ার অংশ নয়।”
দেখুন তিনাদের অজ্ঞতা! তিনি খুজে পাননি বলেননি, বরং বলে দিলেন হাদিসে নেই! দেখুন কওমীদের বড় আলিমদের খেয়ানত।
প্রিয় পাঠক লক্ষ্য করুন, ইমাম ইবনু হাজার আসকালানী ( رَحْمَةُ الله عليه) এই অংশটুকুকে মওজু বা বাতিল বলেননি বরং এ বিষয়ে তিনার মত পেশ করেছেন। যেমন লক্ষ্য করুন,
وأخرج البخاري وأصحاب السننن: مِنْ حَدِيثِ جَابِرٍ مَرْفُوعًا: مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ: اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ … الْحَدِيثُ لَكِنْ لَيْسَ فِيهِ: “وَالدَّرَجَةَ الرَّفِيعَةَ” وَقَالَ: “مَقَامًا مَحْمُودًا” وَعِنْدَ النَّسَائِيّ وَابْنِ خُزَيْمَةَ بِالتَّعْرِيفِ فِيهِمَا وَلَيْسَ فِي شَيْءٍ مِنْ طُرُقِهِ ذِكْرُ الدَّرَجَةِ الرَّفِيعَةِ
-“ইমাম বুখারী ও আসহাবে সুনান হযরত জাবের (رضي الله عنه) এর মারফূ হাদিস বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি আযান শুনার পর বলবে: ‘আল্লাহুম্মা রাব্বা হাজিহীদ দাওয়াতি তাম্মাহ…’ (আল হাদিস) কিন্তু এই হাদিসের মধ্যে وَالدَّرَجَةَ الرَّفِيعَةَ শব্দদ্বয় নেই। তিনি বলেছেন, ‘মাকামাম মাহমুদা’ যা ইমাম নাসাঈ ও ইমাম ইবনু খুজাইমা ( رَحْمَةُ الله عليه) নিকটে তারিফের সাথে উল্লেখ রয়েছে, সেই সূত্র গুলোর মধ্যেও وَالدَّرَجَةَ الرَّفِيعَةَ শব্দদ্বয় নেই।” ৩৯৩৯ ইমাম আসকালানী: তালখিছুল হাবীর, ১ম খন্ড, ৫১৯ পৃ:;
ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন, لم أره في شيء من الروايات، -“কোন রেওয়ায়েতের মাঝে আমি ইহা দেখিনি।” ৪০৪০, ইমাম ছাখাবী: মাকাছিদুল হাছানাহ, হাদিস নং ৪৮৪;
এখানে ইমাম আসকালানী ( رَحْمَةُ الله عليه) ও ইমাম ছাখাবী ( رَحْمَةُ الله عليه) বিষয়টি নজরে না পড়ার কথাই উল্লেখ করেছেন কিন্তু কেউ এটাকে জাল হাদিস বলেননি। অথচ ওহাবীরা এই দুইজন ইমামের নামে মিথ্যা প্রচারণা করে বেড়াচ্ছে।