মুয়ায্যিন আযান দেয়ার সময় যখন ‘আশহাদুআন্না মুহাম্মদার রাসুলুল্লাহ’ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ উচ্চারণ করে, তখন নিজের বৃদ্ধাঙ্গুরীদ্বয় বা শাহাদতের আঙ্গুল চুম্বন করে চুক্ষদ্বয়ে লাগানো মুস্তাহাব এবং এতে দীন-দুনিয়া উভয় জাহানের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে অনেক হাদীছ বর্ণিত আছে। সাহাবায়ে কিরাম থেকে এটা প্রমাণিত আছে এবং অধিকাংশ মুসলমান একে মুস্তাহাব মনে করে পালন করেন। ‘প্রসিদ্ধ সালাতে মস্উদী’ কিতাবের দ্বিতীয় খন্ড نماز শীর্ষক অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে- “হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত আছে- যে ব্যক্তি আযানে আমার নাম শুনে স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চোখের উপর রাখে, আমি ওকে কিয়ামতের কাতার সমূহে খোঁজ করবো এবং নিজের পিছে পিছে বেহেশতে নিয়ে যাব।)”
তাফসীরে রূহুল বয়ানে ষষ্ঠ পারার সূরা মায়েদার আয়াত وَاِذَا نَادَيْتُمْ اِلَى الصَّلوةِ الاية এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে উল্লেখিত আছে-
“মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ’ বলার সময় নিজের শাহাদাতের আঙ্গুল সহ বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখে চুমু দেয়ার বিধানটা জঈফ রেওয়াতের সম্মত। কেননা এ বিধানটা মরফু হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়। কিন্তু মুহাদ্দিছীন কিরাম এ ব্যাপারে একমত যে আকর্ষণ সৃষ্টি ও ভীতি সঞ্চারের বেলায় জঈফ হাদীছ অনুযায়ী আমল করা জায়েয।)
ফাত্ওয়ায়ে শামীর প্রথম খন্ড الاذان শীর্ষক অধ্যায়ে বর্ণিত আছে-
আযানের প্রথম শাহাদত বলার সময়- صَلَّى اللهُ عَلَيْكَ يَارَسُوْلَ اللهِ (সাল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ) বলা মুস্তাহাব এবং দ্বিতীয় শাহাদত বলার সময়- قُرةُ عَيْنِىْ بِكَ يَارَسُوْلَ اللهِ (কুর্রাতু আইনী বেকা ইয়া রাসুলাল্লাহ) বলবেন। অতঃপর নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ স্বীয় চোখদ্বয়ের উপর রাখবেন এবং বলবেন- الَلهُمَّ مَتِّعْنِىْ بِالسَّمْعِ وَالْبَصَرِ (আল্লাহুম্মা মত্তায়েনী বিসসময়ে ওয়াল বসরে) এর ফলে হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওকে নিজের পিছনে পিছনে বেহেশতে নিয়ে যাবেন। অনুরূপ কনযুল ইবাদ ও কুহস্থানী গ্রন্থে বর্ণিত আছে। ফাত্ওয়ায়ে সূফিয়াতেও তদ্রুপ উল্লেখিত আছে। কিতাবুল ফিরদাউসে বর্ণিত আছে- যে ব্যক্তি আযানে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসুলুল্লাহ‘ শুনে স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয়ের নখ চুম্বন করে, আমি ওকে আমার পিছনে বেহেশতে নিয়ে যাব এবং ওকে বেহেশতের কাতারে অন্তর্ভূক্ত করবো। এর পরিপূর্ণ আলোচনা ‘বাহারুর রায়েক’ এর টীকায় বর্ণিত আছে।
উপরোক্ত ইবারতে ছয়টি কিতাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন- শামী, কনযুল ইবাদ, ফাত্ওয়ায়ে সূফিয়া, কিতাবুল ফিরদাউস, কুহস্থানী এবং ‘বাহারুর রায়েক’ এর টীকা। ওই সব কিতাবে একে মুস্তাহাব বলা হয়েছে। مقاصد حسنه فى الاحاديث الدئره على السنة নামক গ্রন্থে ইমাম সাখাবী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন- ইমাম দায়লমী (রহঃ) ‘ফিরদাউস’ কিতাবে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে মুয়াযযিনের কন্ঠ থেকে যখন ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রসুলুল্লাহ‘ শোনা গেল, তখন তিনি (রাঃ) তাই বললেন এবং স্বীয় শাহাদতের আঙ্গুলদ্বয়ের ভিতরের ভাগ চুমু দিলেন এবং চক্ষুদ্বয়ে লাগালেন। তা’দেখে হুযূর (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ ফরমান যে ব্যক্তি আমার এই প্রিয়জনের মত করবে, তাঁর জন্য আমার সুপারিশ অপরিহার্য।” এ হাদীছটি অবশ্য বিশুদ্ধ হাদীছের পর্যায়ভুক্ত নয়।
উক্ত মাকাসেদে হাসনা গ্রন্থে আবুল আব্বাসের (রহঃ) রচিত মুজেযাত গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত করা হয়েছে-
হযরত খিযির (আঃ) থেকে বর্ণিত আছে- যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের কণ্ঠে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসুলুল্লাহ’ শোনে যদি বলে-
مَرْحَيًابِحَبِيْبِىْ وَقُرَّةِ عَيْنِىْ مُحَمَّدِ ابْنِ عَبْدِ اللهِ
(মারাহাবা বে হাবীবী ওয়া কুররাতে আইনী মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ) অতঃপর স্বীয় বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগাবে, তাহলে ওর চোখ কখনও পীড়িত হবে না।) উক্ত গ্রন্থে আরোও বর্ণনা করা হয়েছে- হযরত মুহাম্মদ ইবনে বাবা নিজের একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে এক সময় জোরে বাতাস প্রবাহিত হয়েছিল। তখন তাঁর চোখে একটি পাথরের কনা পড়েছিল যা বের করতে পারেনি এবং খুবই ব্যথা অনুভব হচ্ছিল।
যখন তিনি মুয়াযযিনের কণ্ঠে আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রসুলুল্লাহ শুনলেন, তখন তিনি উপরোক্ত দুআটি পাঠ করলেন এবং অনায়াসে চোখ থেকে পাথর বের হয়ে গেল। একই ‘মকাসেদে হাসনা’ গ্রন্থে হযরত শামস মুহাম্মদ ইবনে সালেহ মদনী থেকে বর্ণিত আছে যে তিনি ইমাম আমজদ (মিসরের অধিবাসী পূর্ববর্তী উলামায়ে কিরামের অন্তর্ভূক্ত) কে বলতে শুনেছেন- যে ব্যক্তি আযানে হুযূর (সাল্লাল্লহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর নাম মুবারক শোনে স্বীয় শাহাদাত ও বৃদ্ধাঙ্গুলী একত্রিত করে-
وَقَبَّلَهُمَا وَمَسَحَ بِهِمَا عَيْنَيْهِ لَمْ يَرْ مُدْ اَبَدًا
উভয় আঙ্গুলকে চুম্বন করে চোখে লাগাবে, কখনও তার চক্ষু পীড়িত হবে না। ইরাক- আযমের কতেক মাশায়েখ বলেছেন যে, যিনি এ আমল করবেন, তাঁর চোখ রোগাক্রান্ত হবে না।
وَقَالَ لِىْ كُلّ مِنْهُمَا مُنذُ فَعَلْتُهُ لَمْ تَرْمُدْ عَيْنِىْ
কিতাব রচয়িতা বলেছেন- যখন থেকে আমি এ আমল করেছি আমার চক্ষু পীড়িত হয়নি।
কিছু অগ্রসর হয়ে উক্ত‘মকাসেদে হাসনা’গ্রন্থে আরও বর্ণিত হয়েছে-
وَقَالَ ابْنِ صَالِحٍ وَاَنَا مُنْذُ سَمِعْتُهُ اِسْتَعْمَلْتَهُ فَلَا تَرْمُدْ عَيْنِىْ وَاَرْجُوْا اَنَّ عَافِيَتَهُمَا تَدُوْمُ وَاِنِّىْ اَسْلَمُ مِنَ الْعَمى اِنْشَاءَ اللهُ
হযরত ইবনে সালেহ বলেছেন- যখন আমি এ ব্যাপারে জানলাম, তখন এর উপর আমল করলাম। এরপর থেকে আমার চোখে পীড়িত হয়নি। আমি আশা করি, ইনশাআল্লাহ এ আরাম সব সময় থাকবে এবং অন্ধত্ব মুক্ত থাকবো। উক্ত কিতাবে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে ইমাম হাসন (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মদার রাসুলুল্লাহ‘ শোনে যদি বলে এবং
مَرْحَبًا بِحَبِيْبِىْ وَقُرَّةُ عَيْنِىْ مُحَمَّدِ ابْنِ عَبْدِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
নিজের বৃদ্ধাঙ্গুলীদ্বয় চুম্বন করে চোখে লাগাবে এবং বলবে- لَمْ يَعْمَ وَلَمْ يَرْمَدْ তাহলে কখনও সে অন্ধ হবে না এবং কখনও তার চক্ষু পীড়িত হবে না